আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – মজুদ বা পালন পুকুর। যা ” গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
মজুদ বা পালন পুকুর
মজুন বা পালন পুকুর
পালন পুকুর একটি খামারের প্রধান অবকাঠামো যেখান থেকে চিংড়ি চাষের লাভ ও ক্ষতি নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পালন পুকুর বগীকার বা আয়তকার হলে ভালো হয়। পালন পুকুরের আয়জন ০.৫ হেক্টর থেকে ১.০ হেক্টর হলে ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়। বেশি বড় পুকুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে নির্মাণ খরচ কমানোর জন্য অনেকে ২-৩ হেক্টর আয়তনের পুকুরও নির্মাণ করে থাকে। সাধারণত্র চাষ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে গলদা চাষের পুকুরের আয়তন নির্ধারণ করা হয়।
সনাতন চাষ পদ্ধতিতে পুকুরের আকারের বা আয়তনের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মিশ্র চাষ ও আধানিবিড় চাষ পদ্ধতিতে ০.২৫-২.০ হেক্টরের পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয় এবং নিবিড় চাষ পদ্ধতিডকে ০.২৫-১.০ হেক্টর আয়াতনের পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়।
খামারের প্রতিটি পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন গেইট থাকা প্রয়োজন। পুকুরের তলদেশ ক্রমান্বয়ে নিষ্কাশন গেইটের দিকে নলু থাকা উচিত। এর ফলে প্রয়োজনানুসারে পুকুরের পানি সম্পূর্ণরুপে নিষ্কাশন করা সহজ হয়। পুকুরের পাড় থেকে ৩ মিটার দূয়ে পুকুরের ভিতরের দিকে ২ মিটার প্রশস্থ ৩০.৫ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট একটি খাল পাড়ের চারপাশে এবং পুকুরের মাক বরাবর দু’পাড়ের খালের সংযোগের জন্য খাল নির্মাণ করা হয়।
এই খাল চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুকুর থেকে চূড়ান্তভাবে চিংড়ি ধরার, সময় এসব খাল ব্যবহার করা যায়। পালন পুকুরে পানির গর্তীরতা ১-১.২ মিটায় রাখা দরকার। এজন্য পুকুর পাড় থেকে পুকুরের তলার শানির গভীরতা ১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।
বাধসমূহ
বাঁধের উচ্চতা পুকুরের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা কমপক্ষে ০.৬০ মিটার উঁচু থাকা দরকার। বেষ্টনী বাঁধ, পুকুর বা খালের বাঁধ যাই নির্মাণ করা হোক তা অবশ্যই ভালোভাবে কমপ্যাক্ট করে নির্মাণ করতে হবে। সঠিকভাবে কমপ্যাক্ট করা না হলে বাঁধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং পুকুরের পানি ধরে রাখতে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।
বাঁধের উচ্চতা, মাটির ধরন এবং পানির ঢেউ ও স্রোতের ওপর নির্ভর করে বাঁধের ঢাল নির্ধারণ করা হয়। মাটির পুকুরের বাঁধের বাইরে ও ভিতরের উত্তর দিকে ৩০১ এবং এঁটেল মাটিতে ২:১ হারে ঢালু হওয়া প্রয়োজন। এঁটেল মাটির ক্ষেত্রে বাঁধের ঢাল পুকুরের ভিতরের দিকে ১:১ রাখা যায়।
বাঁধের উচ্চতা- (ক+গ)/১-৩% সংকোচন
এখানে,
ক= সংগৃহীত তথ্য মোতাবেক সর্বোচ্চ জোয়ারের উন্নয়কা
খ= চায়ের জাদির উচ্চতা থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতার পার্থক্য এবং
গ= বাঁধ কতটুকু অতিরিক্ত উঁচু করা হবে তার পরিমাণ
উদাহরণঃ
মনে করি, একটি চিংড়ি চাষের জমি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে ১.০ মিটার উঁচু। উক্ত স্থাদে মোয়ারের পানির সাধারণ উচ্চতা ২ মিটার এবং ১০ বছরের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী উক্ত স্থানে সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা ২.৫ মিটার ভবে বাঁদের উল্লতা কত হবে? (সাধারণত একটি বীদের সংকোচন ২০% এবং বাঁধের অতিরিক্ত উচ্চতা ০.৬০ মিটার ধরা হয়)।
যে কোনো খামারে কোনো বাঁধ নতুলভাবে তৈরি করতে কি পরিমাণ মাটির প্রয়োজন হবে তা সহজেই নিচের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। মোট মাটির পরিমাণ=১/২ (উপরিতলের প্রশস্ততা ভূমির প্রশস্ততা) উচ্চভা সমোট দৈর্ঘ্য। যদি একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, এছ ৪০ মিটার, বাঁধের ভূমির প্রশস্ততা ও মিটার এবং বাঁধের উপরিভাগের প্রশস্ততা ১ ফিটার এবং উচ্চতা ২ মিটার হয় তাহলে জলের বাঁধেয় যেটি দৈর্ঘ্য হবে ২৮০ মিটার।
অতত্রব মোট মাটির পরিমাণ=১/২(১+৩)×২×২৮০ ঘনমিটার = ১১২০ ঘনমিটার। ১ হেক্টর আরকনের পুকুর নির্যাগের জন্য একটি আরতবার স্থান নির্বাচন করতে হবে। ধরা যাক, পুকুরের দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং প্রস্থ ৮০ মিটার। এবার পুকুরের জন্য নির্বাচিত স্থানের চার কোণায়। ৪টি বাঁশের খুঁটি স্থাপন করতে হবে। খুঁটি থেকে দড়ি বা চুনের সাহায্যে চারপাশে সোজা দাগ দিতে হবে।
বাঁধের ভিজরের ঢাল ১.৫০ ১ এবং গভীরতা ১ মিটারের জন্য চারপাশের দাগ থেকে ১.৫ মিটার ভেতরের দিকে আর একটি আয়তক্ষেত্র চিহ্নিত করতে হবে। ভিতরের এই আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ১২২ মিটার ও গ্রন্থ ৭৭ মিটার হবে এবং এই আয়তক্ষেত্রের চারকোগার বাঁশের খুঁটি পুঁতে চিহ্নিত করতে হবে।
এবার বাইরের চারপাশের দাগ থেকে ভিতরের চারপাশের দাগ পর্যন্ত সরল রেখা বরাবর ১.৫ঃ ১ ঢাল রক্ষা করে মাটি কাটতে হবে।উত্তোলিত মাটি পুকুরের পাড় তৈরির জন্য বাইরের দাগ থেকে ১ মিটার দূরে ফেলতে হবে। এতে পুকরের চতুর্দিকে ভূমির সমতলে ১ মিটার প্রশত বকচর সৃষ্টি হবে।
উত্তোলিত মাটি দিয়ে পাড় তৈরি করতে হবে এবং এই পাড়ের বাইরের দিকে ঢাল ২:১ রাখতে হবে। পুকুরের মাটি কাটা শেষ হলে পুকুরের তলদেশের আয়তক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য ১২২ মিটার এবং গ্রন্থ ৭৭ মিটার হবে। তৈরি করার সময় পাড়ের মাটি ভালোভাবে কমপ্যাক্ট করতে হবে যাকে পাড় শক্ত হয়। পাড়ের মাটি যাতে বৃষ্টিতে ধুয়ে না যায় সেজন্য পাড়ে যাদের চাপ ভালোভাবে লাগাতে হবে।
আরও দেখুনঃ