আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা । যা ” গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা
পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা
গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গলদা খামারের পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা পানি সরবরাহ, পানি শোষন, পানি সরবরাহ খাল ও পানি নিষ্কাশন খাল সমন্বয়ে গঠিত। সাফল্যজনকভাবে ডিংড়ি উৎপাদনের জন্য খামারে পরিকল্পিত ও উন্নতমানের পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। পুকুরে পরিকল্পিত ও নিয়মিত পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করা যায়।
(১) পানি সরবরাহ
গলদা চিংড়ি চাষের জন্য তিনটি উৎস থেকে পানি সায় করা যায়। উৎস তিনটি হচ্ছেঃ
(ক) বৃষ্টির পানি
(খ) নদী বা খালের দ্বিতানো দূষণমুক্ত পানি
(গ) ভূগর্ভস্থ ভারী ধাতুযুক্ত পানি
গলদা খামারে বর্ষাকালে সাধারণত বৃষ্টির পানি সরবরাহ করা হয় এবং শুদ্ধ মৌসুমে অন্য কোনো উৎস থেকে খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা ভালো। চিংড়ি চাষ পদ্ধতি এবং পুকুরে চিংড়ির মজুন সংখ্যার অপর নির্ভর করে পুকুরে পানি সরবরাহের পরিমাণ। যে সমস্ত পুকুরে বাইরে থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয় সে সমস্ত পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। পানি পরিবর্তন ছাড়াও শুকুরে পানির গভীরতা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখার জন্য পুকুরে পানি সরবরাহ করা হয়।
(২) পানি শোষন
খাল বা নদীর পানি পুকুরে সরবরাহের পূর্বে তা থিতিয়ে নেয়া ভালো, কারণ ও পানিতে দ্রবীভূত ভাসমান জৈব ও অজৈব পদার্থ থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। তাছাড়া এই শানিতে অবাঞ্ছিত প্রাণী, প্রাণীর ডিম, লার্ভা ইত্যাদি থাকে যা পানির সাথে পুকুরে প্রবেশ করে চিংড়ির উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
তাই এই পানি পুকুরে সরববাহের পূর্বে সরবরাহ খালে বা জলাধারে তা থিতিয়ে ফিল্টার বা ২৫০ মাইক্রন নেটের মাধ্যমে ছেকে পুকুরে সরবরাহ করা উচিত। এর ফলে অবস্থিত প্রাণীর প্রবেশ রোধ করা যায়। ভূগর্ভস্থ পানিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু মিশ্রিত থাকে। এই সব ভারী ধাতু অনেক সময় চিংড়ি চাষ বাধাপ্রায় করে। এই জন্য ভূগর্ভস্থ পানি সরাসরি সরবরাহ করা ঠিক নয়।
ভূগর্ভস্থ পানি পুকুরে ভরবরাহের পূর্বে তা সরবরাহ খাল বা জলাধারে পর্যাপ্ত বায়বীয় করে দেওয়া উচিত। পানির ভারী গাড় চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।

(৩) পানি সরবরাহ খাল
পানি সরবরাহের জন্য যে সমস্ত খামার বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল সেসব খামারে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন খাল নির্মাণের প্রয়োজন নেই। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাব হলে চিংড়ি চাষের বিঘ্ন ঘটে। এজন্য প্রয়োজনে যে কোনো সময় খামারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
আর এই আপনকালীন সময়ে পানি সরবরাহের জন্যই খামারে পানি সরবরাহ খাল নির্মাণ করা হয়। আবার কোনো কোনো সময় পানি প্রাপ্তির উৎস থেকে সরাসরি পানি পুকুরে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এরূপ ক্ষেত্রে পানি সরবরাহ খালের মাধ্যমে শানি পুকুরে সরবরাহ করা হয়।
পুকুরে সরবরাহের সময় যাতে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি পুকুরে সুইস গেইট থাকা দরকার। আবার যেসব খামারে শোষনকৃত পানি সরবরাহ করা হয় সেসব খামারের পুকুরের বাঁধের উপর নির্মিত নালার মাধ্যমে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে পুকুরে পানি। সরবরাহ করা হয়।
(৪) পানি নিষ্কাশন খাল
পুকুর শুকানো এবং পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় রাখার জন্য পুকুরের পানি নিষ্কাশন করা হয়। নিষ্কাশন খালের মাধ্যমে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করা হয়। এই নিষ্কাশন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পুকুরের তলদেশ পানি প্রবেশ করানোর গেইটের দিক থেকে নিষ্কাশন গেইটের দিকে ঢালু (১:২০০) হতে হবে।
সাধারণত পুকুরের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন খালের মাধ্যমে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে পুকুর থেকে নিষ্কাশন করা হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে খামারের বাইরের পানির উচ্চতা বেশি থাকে বিধায় অনেক সময় খালের মাধ্যমে পানি অভিকর্ষ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ গলনা খামারেই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে খামারের উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং চিংড়ির নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও দেখুনঃ