পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ

 

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ

 

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন

মাছের দেহে বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থায়ামিন রিবোফ্লেবিন, পাইরিডক্সিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, নিকোটিনিক এসিড, বায়োটিন, ফলিক এসিড, সায়ানোকোবল্যামিন, ইনোসিটোল কোলিন, এসকরবিক এসিড ইত্যাদি পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন।

থায়ামিন

কার্বোহাইড্রেট বিপাকে থায়ামিন একটি কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে থাকে। থায়ামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ হতে পারে। চাল, গম, বার্লি, কুঁড়া, সয়াবিন ইত্যাদি থায়ামিনের উৎস।

রিবোফ্লেবিন

রিবোফ্লেবিন কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে শক্তির বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি কার্বোহাড্রোট, চর্বি এবং আমিষের বিপাক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন। প্রাণীর যকৃত, ফুসফুস, দুধের সর, মুরগীর ডিমের সাদা অংশ ও শাকশবজিতে পাওয়া যায়। এর অভাবে মাছের ওজন কমে যায় এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। তা ছাড়া মাছের ফুলকার ঘা, চোখে ছানি এবং চামড়া খসখসে হয়ে যায়।

পাইরিডক্সিন

এটি আমিষের বিপাকে কো-এনাজইম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি এ্যামিনো এসিডের পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে। এর অভাবে মাছের চামড়া ফুলে যায়, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, রক্ত শূন্যতা এবং য়ুর অসুবিধা হয়। ইস্ট, শাকশবজি, শুকনা মাছ, ফিশ মিল, তিল, চাল ও সয়াবিন ইত্যাদিতে পাইরিডক্সিন পাওয়া যায়।

প্যান্টোথেনিক এসিড

সাধারণত একে এসিটাইল কো-এনজাইম-এ বলা হয়। প্যান্টোথেনিক এসিড প্রধান পুষ্টি দ্রব্য থেকে শক্তি মুক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি ফ্যাটি এসিড, কোলেস্টেরল ও হিমোগ্লোবিন সংশেষণও ভূমিকা রাখতে পারে। কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং আমিষের বিপাকে এটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

শুকনো ইস্ট, মুরগীর ডিম, বাদাম, গমের কুঁড়া, চালের কুঁড়া, শুকনো দুধের সর, ভূট্টা, ইক্ষু গুড় ইত্যাদিতে প্যান্টোথেনিক এসিড পাওয়া যায়। এর অভাবে মাছের ক্ষুধামান্দ্য, ফুলকা ফুলে যাওয়া, বৃদ্ধি কমে যাওয়া, কোষ শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অসুবিধা দেখা দেয়।

নিকোটিনিক এসিড

এটি কোষ এনজাইম হিসেবে কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং আমিষ থেকে শক্তি যুক্ত করার কাজে সহায়তা করে। এটি বিপাক ক্রিয়ায় ইলেকট্রন স্থানান্তরে ভূমিকা রাখে। শুকনো ইস্ট, চালের কুঁড়া, গমের কুঁড়া, প্রাণীর যকৃত ও ফুসফুস, মাংস, মুরগির উচ্ছিষ্টাংশ, শুকনো গুড় ও সবুজ পাতার শাকশবজিতে প্রচুর পরিমাণ নিকোটিনিক এসিড থাকে। এর অভাবে মাছের ক্ষুধামান্দ্য, চলাফেলার অসামঞ্জস্য, দুর্বলতা, পাকস্থলীতে ঘা এবং বর্ধনহীনতা লক্ষ্য করা যায়।

বায়োটিন

এটি অল্প পরিমাণে সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায়। এটি লাইসিন ( Lysine) এর সাথে যুক্ত হয়ে বায়োসাইটিন উৎপন্ন করে থাকে। প্রাণীর তথা মাছের খাদ্যনালীতেও এটি উৎপন্ন হতে পারে। বায়োটিন কো-এনজাইম হিসেবে বিপাক ক্রিয়ায় স্থানান্তরে ভূমিকা রাখে। বায়োটিন মাছের শরীরে চর্বির সংশ্লেষণ এবং অ্যামাইনো এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত করে।

এটি যকৃত, কিডনি, ইস্ট, দুগ্ধজাত দ্রব্য, এবং ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর অভাবে মাছের চামড়াগুলো ফুলে যায়, পেশী শুকিয়ে যায়, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি দেখা যায়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ফলিক এসিড

এটি সাধারণত রক্ত কণিকা তৈরিতে প্রয়োজন হয়। একটি কো-এনজাইম হিসেবে এটি কার্বন স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে। এটি অ্যামাইনো এসিড সংশ্লেষণে ও মিকা রাখে। এটি রক্তের গুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে, কোষের আবরণ সংরক্ষণ করে এবং ডিম ফুটানোর ক্ষমতাবৃদ্ধি করে থাকে।

এর অভাবে রক্তশূন্যতা, বর্ধন হ্রাস, ভঙ্গুর পাখনা, কাল চামড়া, জড়তা এবং ভঙ্গুর প্লীহা লক্ষ্য করা যায়। ইস্ট, সবুজ শাকশবজি, যকৃত, কিডনি, মাছের পেশী ও মাছের নাড়ীভুঁড়িতে ফলিক এসিড পাওয়া যায়। অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদে এটি মুক্ত বা সংযুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

সাইয়ানোকোবাল্যামিন

একে ভিটামিন বি-১২ও বলা হয়ে থাকে। এটি কোবামাইড (Cobamide) কো-এনজাইম হিসেবে নিয়মিত লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টিতে এবং স্নায়ুকোষকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ফলিক এসিডের সাথে যৌথভাবে কার্বন বিপাক ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। এটি কার্বোহাইড্রেট এবং অ্যামাইনো এসিড বিপাক ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।

প্রাণীর আমিষ, যেমন- ফিশ মিল, মাছের নাড়িভুড়ি যকৃত, কিডনি এবং কসাইখানার বর্জ্য পদার্থে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়। এর অভাবে ক্ষুধামান্দ্য খাদ্য হজমে ব্যর্থতা, রক্তের শ্বেতকণিকা ভেঙ্গে যাওয়া, রক্তশ নাতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

ইনোসিটোল

এর নানা ধরনের যৌগ দেখা যায়। এদের মধ্যে মাইয়ো-ইনোসিটোল (Myo-inositol) শরীরের কাঠামো বা কঙ্কাল, হৃদপিন্ড এবং মস্তিষ্কের কোষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যকৃত ও অস্থিমজ্জার কোষ বর্ধনে, যকৃতের চর্বি স্থানান্তকরণে এবং জনঅ সংশ্লেষণে ইনোসিটোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্ধন হ্রাস পাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, পাখনা ভেঙ্গে যাওয়া, লেজ খসে পড়া, রক্ত শ নাতা, চর্বিযুক্ত যকৃত, মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ ইনোসিটোলের অভাবে পরিলক্ষিত হয়। প্রাণীর মাংস, হাড়, মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড, যকৃত, শুকনো ইস্ট এবং ফিশ মিলে ইনোসিটোল পাওয়া যায়।

কোলিন

মাছের বর্ধন ও খাদ্য গ্রহণের জন্য কোলিন অত্যন প্রয়োজনীয় ভিটামিন। ফসফোলিপিড ও এ্যাসেটাইলকোলিন এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে এটি কোষের কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ওঠায়ুর অনুভূতি প্রেরণ করে থাকে। এটি মেথিওনাইন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। ফসফোলিপিড হিসেবে কোলিন সারা শরীরে চর্বি বহন করে থাকে।

প্রাণীর যকৃত, ফুসফুস, চিংড়ি, ফিশ মিল, সয়াবিন, সুর্যমুখীর বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ কোলিন পাওয়া যায়। কোলিনের অভাবে মাছের বর্ধন হ্রাস, ইয়ৎ হলুদ রং এর যকৃত, কিডনি এবং খাদ্য নালীতে রক্ত জমে যাওয়া, রক্তশ ন্যতা, চোখ বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

 

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনসমূহ

 

অ্যাসকরবিক এসিড (ভিটামিন-সি)

ভিটামিন-সি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি শরীরের বিভিন্ন কলার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এ ছাড়া রক্তকণিকা, হাড়ের কোষ এবং ক্ষত স্থানের কোষের সমন্বয় সাধনেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। অ্যাসকরবিক এসিড ফলিক এসিডকে বিপাকযোগ্য সক্রিয় টেট্রাহাইড্রোকলিক এসিডে রূপান্তরিত করার কাজে দরকার হয়। যে সমস্ত খাবারে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়।

সেগুলোর মধ্যে লেবু জাতীয় ফল, সবুজ শাকসবজি, কাঁচা মরিচ, যকৃত ও ফুসফুস ইত্যাদি প্রধান। ভিটামিন-সি এর অভাবে তরুনাস্থির পরিবর্তন, চোখে ক্ষত, ত্বক, যকৃত, কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত ও পেশী রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment