পরজীবীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-পরজীবীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

পরজীবীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

এ পাঠ শেষে আপনি

  • পরজীবীর সংজ্ঞা বলতে পারবেন।
  • পরজীবীর প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারবেন।
  • বিভিন্ন প্রকারের পরজীবীর পরজীবিতার ধরন উল্লেখ করতে পারবেন।

পরজীবীর ইংরেজী প্রতিশব্দ Parasite; যা para এবং sitos এই দুটি গ্রীক শব্দ হতে উদ্ভূত। Para অর্থ নিকটে বা পাশে এবং sitos অর্থ পুষ্টি উৎপত্তিগতদিক এবং ব্যবহারগত দিক থেকে যে প্রাণী 1 অন্য প্রাণীর দেহে বসবাস করে এবং বসবাসকারী প্রাণীর দেহ থেকে খাদ্য বা পুষ্টি গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে তাকে পরজীবী বলা যায়। পরজীবী যে প্রাণীর দেহ থেকে খাদ্য বা পুষ্টি গ্রহণ করে তাকে পোষক (host) বলা হয় ।

পরজীবী এবং রাক্ষুসে প্রাণী এক নয়। রাক্ষুসে প্রাণী সাধারণত অন্য প্রাণীকে খেয়ে ফেলে। অনেক সময় রাক্ষুসে প্রাণী তার চেয়ে বড় প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পরজীবী সব সময়ই তার পোষক অপেক্ষা ছোট ও দুর্বল হয়ে থাকে।

 

পরজীবীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

 

পরজীবী কখনোই তার পোষককে খেয়ে ফেলে না; বরং পোষকের দেহরস বা কঠিন অংশ শোষণ করে জীবিকানির্বাহ করে ও পোষকের দেহে বসবাস করে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার, ছারপোকা ইত্যাদি পরজীবী নয়, যদিও এগুলো মানুষ বা অন্য প্রাণীর দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে থাকে। অর্থাৎ কেবলমাত্র খাদ্য গ্রহণের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই পরজীবিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।

খাদ্য গ্রহণ ও জৈবিক সম্পর্কের পাশাপাশি পরজীবিতার সম্পর্ক পরিবেশভিত্তিক। অর্থাৎ পরজীবী পোষকের দেহের পরিবেশের সংগে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কখনোই পরজীবিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয় না, এটি সব সময় দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ঘটে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মাতৃগর্ভে সন্তানের অবস্থান পরিবেশগত এবং জৈবিক হলেও এটি পরজীবিতা নয়।
যে সকল প্রাণী ভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদেহের অভ্যন্তরীণ বা বহিরাঙ্গের পরিবশকে প্রয়োজনের সময়ে স্বীয় পরিবেশ হিসেবে গ্রহণ করে জৈবিকভাবে যুক্ত থেকে বসবাস করে এবং উক্ত স্থান হতে খাদ্য গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে তাকে পরজীবী বলা হয়।

পরজীবী তার জীবনের পুরো সময়কাল জীবনচক্রের অংশবিশেষ শোষকের দেহে অবস্থান করে। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন প্রজাতির পরজীবী পরজীবিতার ধরন স্বতন্ত্র প্রকৃতির।
থাকে

পরজীবিতার প্রকারভেদ

পরজীবী এবং পোষকের সম্পর্কের ধরন, পরজীবিতার স্থায়িত্ব ও স্থান-কাল ভেদে পরজীবিতার প্রকারভেদ করা হয়ে থাকে। এসব ভিত্তিতে পরজীবিতাকে নিম্নরূপ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। –

১ ঐচ্ছিকপরজীবিত (facultitive parasite)

যে সব প্রাণী সাধারণত স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে, কিন্তু হঠাৎ কোন উপযোগী পোষকের দেহের অভ্যন্তরে বা বহিরাঙ্গে সংস্থাপিত (settling) হলে তাৎক্ষণিকভাবে পরীীতে জপান্তরিত হয় তাকে ঐচ্ছিক পরজীবী বলা হয়। যথা- গ্লোসোসিফোনিকা গণ (Genus) এর জোঁক (Glossosiphonia complanate) সাধারণভাবে ছোট অমেরুদন্ডী প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে, কিন্তু মেরুনতী কোন প্রাণী পেলেই এরা উক্ত প্রাণীর দেহে সংস্থাপিত হয়ে পরজীবীতে রুপান্তরিত হয়ে যায়।

অনুরূপ রেডোি গণের ছারপোকা (Riduvius Persamatus ) স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে এবং স্কুলে কাঁট খানা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু এরা মানুষের সংস্পর্শে এলে শোষক দ্বারা মানুষের দেহে আটকে যায় এবং রক্ত শোষণ করে এধরনের প্রাণীর ক্ষেত্রে পরজীবিতা বাধ্যতামূলক নয়।

 

পরজীবীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

 

২. ক্ষণ পরজীবী (psudo parasite)

যে সব পরজীবী স্বাভাবিকভাবে জীবন যাত্রা পরিচালনা করে থাকে, কিন্তু  অকস্মাৎ অন্য কোন প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে গেলে পরজীবিতার মাধ্যমে কিন্তু সময়ের জন্য বেঁচে থাকতে পারে তাকে ক্ষণ পরজীবী বলা হয়। যথা- কিছু সংখ্যক মাছি (house fly, cheese fly) আছে যেগুলোর শূক সাধারণত ময়লা, মৃত প্রাণীর পড়া শরীরের মধ্যে বা পনিরের মধ্যে থাকে।

কিন্তু কোন কারণে যদি এগুলো প্রাণীর অস্ত্র ঢুকে যায় তবে অস্ত্র থেকে রস শোষণ করে বেশ কিছুটা সময় বেঁচে থাক পারে। ক্ষণ পরজীবী অনেক সময় পোষকের ক্ষতি করে থাকে।

৩. আবশ্যিক পরজীবী (obligate parasite)

অনেক পরজীবী পোষক। অর্থাৎ এগুলো মুক্তজীবন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে
পারে না। এসব প্রাণীর জীবনযাপনের জন্য পরজীবিতা বাধ্যতামূলক। এসকল পরজীবীকে আবশ্যিক পর।
পরজীবীর বাসস্থান বা অবস্থানকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। পোষকের দেহে পরজীবী অবস্থান অনুযায়ী পরজীবীকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। –

১।বহিঃপরজীবী (ectoparasite)

যেসব পরজীবী পোষকের দেহের বহিরাংশে বসবাস করে সেগুলোকে বহিঃপরজীবী বলা হয়। যেমন মাছের ত্বক, ফুলকা ইত্যাদিতে অবস্থানকারী পর (gill fluke), আরশাস (Argulus), মাছের উকুন ( fish fouse- Argulus) ই

যেসব পরী জীবনযাত্রা পরিচালনার জন্য শোষকের দেহের অভ্যন্তরে যেমন অস্ত্র, দেহগহ্বর, কোষ-কলা ইত্যাদিতে বাস করে সেগুলোকে অাপরী বলা হয়। যথা- ( monogena ) মনোজেনিয়া ডাইজনিয়া (digenia) ইত্যাদি গোত্রের পরজীবী।

অনেক পরজীবী তাদের পুরো জীবনকালই পোষকের দেহে অবস্থান করে। আবার কোন কোন পরজীবী জীবনচক্রের অংশ বিশেষ বা বিশেষ সময় পোষকের দেহে অবস্থান করে। পরজীবিতার সময়কালের স্থায়িত্ব অনুসারে পরজীবীকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

• অস্থায়ী পরজীবী (temporary parasite )

• স্থায়ী পরজীবী (permanent parasite)

অস্থায়ী পরজীবী

অনেক পরজীবী জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায় যেমন প্রজনন, দৈহিক বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য পোষকের দেহে অবস্থান করে না বা স্থায়ীভাবে পোষকের দেহে লেগে থাকে না। এসব পরজীবী কেবল খাদ্য গ্রহণের সময়ে পোষকের দেহে লেগে থেকে দেহরস শোষণ করে। এ শ্রেণীর পরজীবীকে অস্থায়ী পরজীবী বলা হয়। যথা- মশা, মাছের উকুল (fish louse)।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

স্থায়ী পরজীবী

যখন কোন পরজীবী দীর্ঘকাল পোষকের দেহে বাস করে জীবনধারণ করে তখন তাকে স্থায়ী পরী বলা হয়। পরজীবিতার স্থায়িত্বের ধরন অনুযায়ী স্থায়ী পরজীবীকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়।

• সাময়িক পরজীবী (periodical parasite)

• অবিচ্ছিন্ন পরজীবী (continuous parasite )

সাময়িক পরজীবী এধরনের পরজীবী জীবনচক্রের কোন বিশেষ অবস্থায় বা দশায় পোষকের দেহে অবস্থান করে, অথবা কিছুদিন পরভীবী আবার কিছুদিন মুক্ত জীবন যাপন করে। অবিচ্ছিন্ন পরজীবী: যেসব পরজীবী পোষক ছাড়া কোন অবস্থায়ই বেঁচে থাকতে পারে না তাদেরকে
অবিচ্ছিন্ন পরজীবী বলা হয়।

অবিচ্ছিন্ন পরজীবীর মধ্যে দু’ধরনের পরজীবিতা রয়েছে। এক শ্রেণীর অবিচ্ছিন্ন পরজীবী একই শোষকে পুরো জীবন কাটিয়ে দেয়। আবার কোন কোন অবিচ্ছিন্ন পরজীবী পোষক পরিবর্তন করে পরজীবিতা অব্যাহত রাখে।

অনুশীলন ( Activity) পোষকের দেহে পরজীবীর অবস্থান অনুসারে পরজীবীকে কারভাগে ভাগ ?

সারমর্ম:

জীবনধারণে খাদ্যের জন্য যখন একটি প্রাণী ভিন্ন প্রজাতির অন্য একটি প্রাণীর ওপর নির্ভর করে তখন তাকে পরজীবী বলা হয়। পরজীবী যে প্রাণীর দেহ থেকে খাদ্য গ্রহন করে তাকে পোষক বলা হয়। পরজীবী সাধারণত পোষক অপেক্ষা ছোট হয়ে থাকে।

রাক্ষুসে প্রাণী এবং পরজীবী এক শ্রেণিভূক্ত নয়। খাদ্য গ্রহণ ও জৈবিক সম্পর্কের পাশাপাশি পরজীবিতার সম্পর্ক পরিবেশভিত্তিক। পরজীবী তার জীবনের পুরো সময়কাল বা জীবন চক্রের অংশ বিশেষ পোষকের দেহে কাটায়। পরজীবিতার ধরন অনুযায়ী পরজীবীকে ঐচ্ছিক পরজীবী, ক্ষণ পরজীবী, আবশ্যিক পরজীবী, বহিঃপরজীবী, অন্তঃপরজীবী, স্থায়ী পরজীবী, অস্থায়ী পরজীবী, সাময়িক পরজীবী, অবিচ্ছিন্ন পরজীবী ইত্যাদি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। পরজীবিতা সব সময়ই দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে।

একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে কখনোই পরজীবিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। যথা- মায়ের পেটে পরিবেশগত ও জৈবিকভাবে অনুকূল অবস্থানে থেকে খাদ্য গ্রহণ করলেও গৰ্ভস্থ সন্তান পরজীবী নয়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment