আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- পরজীবীর জীবনবৃত্তান্ত, যা ইউনিট ১ পরজীবীতা এর অংশ।
এ পাঠ শেষে আপনি-
- পরজীবীর জীবনচক্রের বৈচিত্র উল্লেখ করতে পারবেন।
- এককোষী পরজীবীর বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে পারবেন।
- বিভিন্ন শ্রেণির বহুকোষী পরজীবীর জীবনচক্রের ধাপগুলো বর্ণনা করতে পারে
শূক অবস্থা থেকে কৈশোর, পরিপক্বতা লাভ, প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি ইত্যাদি অর্থাৎ জীবের জীবনকাল ও বংশানুক্রমের প্রক্রিয়া জীবনচক্রের অন্তর্ভুক্ত। পরজীবীর জীবনচক্রে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র রয়েছে। পরজীবীর জীবনচক্রে সাধারণত এক বা একাধিক মধ্যবর্তী পোষক থাকে।
মধ্যবর্তী পোষকে পরজীবী শূক বা কৈশোর দশা অতিবাহিত করে। চূড়ান্ত পোষকে রোগের সংক্রমণ ঘটানোর জন্য প্রায়শ মধ্যবর্তী পোষক দরকার হয়। চূড়ান্ত পোষকে পরজীবী পরিপক্বতা লাভ করে। মাছ পরজীবীর মধ্যবর্তী বা চূড়ান্ত পোষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মধ্যবর্তী পোষক প্রায়শ পরবর্তী মধ্যবর্তী পোষক বা চূড়ান্ত পোষকের বাদ্যের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে কোন কোন পরজীবী মধ্যবর্তী পোষক হতে যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত পোষককে আক্রমণ করে। অনেক মৎস্য পরজীবী জীবনচক্রের বিভিন্ন দশায় পোষকের বাইরে স্বাধীন জীবন কাটায়।
এসব পরজীবী স্বাধীনভাবে সাঁতার কাটতে সক্ষম শুকের মাধ্যমে অন্য শোষকে সংক্রমণ ঘটায়, অথবা এসব পরজীবীর ডিম বা স্পোর খাদ্য হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে পোষক মাছ পরজীবীতে আক্রান্ত হয়।
থাকে।
পরজীবীর জীবনবৃত্তান্ত
এককোষী পরজীবীর জীবনবৃত্তান্ত
প্রায় সব এককোষী পরজীবী সরাসরি কোন একক পোষকে জীবনচক্র অতিবাহিত করে। এক্ষেত্রে কোন মধ্যবর্তী পোষক থাকে না। সাধারণত এককোষী পরজীবী বহুবিভাজন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। অনেক এককোষী পরজীবী বহুসংখ্যক সিষ্ট উৎপন্ন করে, যা অনেকগুলো সংক্রামক দশা অতিক্রম করে নতুন পোষকে প্রবিষ্ট হয়ে পরজীবিতা শুরু করে। এভাবেই জীবনচক্র আবর্তিত হয়ে থাকে। যথা- ইকথায়োপথিরিয়াস, ট্রাইকোডিনা, ইকথায়োবোড়ো ইত্যাদি ।
বহুকোষী পরজীবীর জীবনচক্র
ডাকটাইলোগাইরাস
এককোষী পরজীবীর ন্যায় ড্যাকটোইলোগাইরাস -এর জীবনচক্র কোন একক পোষকের দেহে সম্পন্ন হয়, কোন মধ্যবর্তী পোষকের প্রয়োজন হয় না। পরিপক্ পরজীবী ডিম পাড়ে। ডিম পরিস্ফুটিত হয়ে শুরু উৎপন্ন হয়। শূকগুলো সিলিয়াযুক্ত এবং স্বাধীনভাবে সাঁতার কাটতে পারে।
এগুলোকে শুনকোমিয়াসিডিয়া (onchamiracidia) বলা হয়। ডিম থেকে পরিস্ফুটনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শূক উপযোগী কোন দোষকে সংক্রমিত হয়ে থাকে, অথবা কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোন শোষক খুজে না পেলে মারা যায়। সংক্রমিত গুনকোমিয়াসিডিয়া পোষকের দেহের উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে স্থায়ী জীবনযাপন শুরু করে, পরিপকতা লাভ করে ও বংশবিস্তার করে থাকে।
গাইরোড্যাকটাইলাস
এ প্রজাতির জীবনচক্রের বিভিন্ন দশা (phase) ড্যাকটাইলোগাইরাসের জীবনচক্রের অনুরূপ। পার্থক্য শুধু গাইরোড্যাকটাইলাস ভিভিপেরাস (viviparous) শ্রেণিভুক্ত। এরা সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয় এবং উক্ত বাচ্চা কয়েক ঘন্টার মধ্যে নতুন পোষকে প্রবিষ্ট হয় ও জীবনচক্র পরিচালনা করে। সংক্রমিত দুটি পোষক পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে এ প্রজাতির পরজীবী কখনও এক পোষক হতে অন্য পোষকে স্থানান্তরিত হয়।

কপিপোড পরজীবী
এ শ্রেণিভূক্ত পরজীবীর জীবনচক্র কিছুটা জটিল প্রকৃতির। পরিপক্ক স্ত্রী কপিপোড ডিম পারে। ডিম পরিস্ফুটিত হয়ে নগ্নিয়াস শূকে (Naplius larva) পরিণত হয়। নগ্নিয়াস শুকের বেশ কয়েকটি দশা রয়েছে। প্রতিটি দশার মধ্যে শূক খোলস পাল্টায় একে মোল্টিং (molting) বলে। এতে কিউটিকল খসে পড়ে এবং শূকের উত্তরণ ঘটে। নগ্নিয়াস মুক্তভাবে সাঁতার কাটতে পারে। মোল্টিং-এর শেষ পর্যায়ে নবজাত কপিপোডিডে রূপান্তরিত হয়।
এরগাসিলাস গণের নবজাত কপিপোড মুক্তভাবে সাঁতার কাটে। পরিপক্ক হলে স্ত্রী এরগাসিলাস চূড়ান্ত পোষকে সংক্রমিত হয় ও পরজীবিতার জীবনযাপন করে। পুরুষ এরগাসিলাস সাধারণত পরজীবী নয়। লার্ণিয়ার নবজাত কপিপোডিড মধ্যবর্তী পোষকে পরজীবী হিসেবে অবস্থান করে।
এরপর দ্বিতীয় বারের মত মুক্ত জীবনযাপন করে এবং অবশেষে চূড়ান্ত পোষকে স্থায়ীভাবে পরজীবিতা বজায় রাখে। কপিপোডের অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রে মুক্ত অবস্থায় যৌনমিলন ঘটে এবং পরে পুরুষটি মারা যায়। অতঃপর স্ত্রী পরজীবী বংশবিস্তার করে। অনেক প্রজাতির কপিপোড পরজীবী স্ত্রী প্রজাতির ওপর পরজীবীর অনুরূপ আবদ্ধ থাকে অথবা খুবই অল্প সময়ের জন্য চূড়ান্ত পোষকে পরজীবী হিসেবে আবদ্ধ থাকে।
জোঁক
জোঁকের জীবনচক্র সরল ও সরাসরি; অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোন পোষকের প্রয়োজন হয় না। পরিপক্ জোঁক রুকুন (cocoon) অবমুক্ত করে। করুন শক্ত কোন কিছুতে লেগে থাকে। কোন কোন প্রজাতির ক্ষেত্রে মা-বাবা কর্তৃক ককুন সংরক্ষিত হয়। কক্ন পরিস্ফুটিত হয়ে নবজাত জোঁকের জন্য হয়। কোন কোন প্রজাতির জোঁক এক বছরের মধ্যে জীবনচক্র সম্পন্ন করে। আবার কোন কোন প্রজাতি এজন্য কয়েক বছর সময় নেয়।
অনুশীলন ( Activity) : একটি বহুকোষী পরজীবীর জীবনচক্র বর্ণনা করুন।
সারমর্ম:
জীবের জীবনকাল এবং বংশানুক্রমের প্রক্রিয়া জীবনচক্রের অন্তর্ভুক্ত। পরজীবীর জীবনচক্রে সাধারণত এক বা একাধিক পোষক থাকে। মধ্যবর্তী পোষকে পরজীবী শূক (larva) বা কৈশোর দশা | ( young stage) অতিবাহিত করে। প্রায় সব এককোষী পরজীবীই কোন একক পোষককে জীবনচক্র সম্পন্ন করে।
এককোষী পরজীবী বহু বিভাজন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। বহুকোষী পরজীবীর মধ্যে ড্যাকটাইলোগাইরাস ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে শূক উৎপন্ন হয় এবং শূক কোন পোযকে সংক্রমিত হয়। গাইরোড্যাকটাইলাস ভিভিপেসাস শ্রেণিভুক্ত। এরা সরাসরি বাচ্চা দেয়।
লার্ণিয়া এবং আরগুলাস কপিপোড শ্রেণিভূক্ত। কপিপোত্ত পরজীবী ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে নগ্নিয়াস শূক জনা নেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দশায় মোল্টিং এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কপিপোডে পরিণত হয়। কপিপোড গোত্রের পুরুষ এরগাসিলাস পরজীবী নয়। অনেক প্রজাতির কপিপোডের পুরপ্রজাতি স্ত্রী প্রজাতির ওপর পরজীবীর অনুরূপ আবদ্ধ থাকে। জোঁকের জীবনচক্রে কোন পোষকের প্রয়োজন হয় না।
আরও দেখুনঃ