Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

পানির গুণাগুণ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত গ্যাসসমূহ ও লবণাক্ততা

পানির গুণাগুণ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত গ্যাসসমূহ ও লবণাক্ততা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – পানির গুণাগুণ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত গ্যাসসমূহ ও লবণাক্ততা

পানির গুণাগুণ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত গ্যাসসমূহ ও লবণাক্ততা

পানির গুণাগুণ

পানির গুণাগুণ বলতে পানির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক উপাদানের সমষ্টিকে বুঝায়, যা জলজ পরিবেশ গঠন করে এবং মাছের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। মাছের খাদ্য গ্রহণ, দৈহিক বৃদ্ধি, প্রজনন, বেঁচে থাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ অনুকুল মাত্রায় থাকা আবশ্যক।

তাপমাত্রার প্রভাব

মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। তাই এর বিপাক ক্রিয়ার ওপর তাপমাত্রার প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তাপমাত্রার প্রভাব বিভিন্ন প্রজাতির জন্য বিভিন্ন রকম। তাছাড়া মাছের ক্রিয়াকলাপের ওপরও এর প্রভাব নির্ভরশীল। যেমন স্যামন মাছের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ১৫° সে. এর কম। অন্য দিকে ২০ সে. এর উপরের তাপমাত্রা কার্পজাতীয় মাছের জন্য উপযুক্ত। আমেরিকার চ্যানেল ক্যাটফিশের জন্য তাপমাত্রা ৩০° সে. উত্তম।

তবে বিভিন্ন মাছকে খাপ খাইয়ে নেয়ার মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বা বেশি তাপমাত্রাতে রাখা যেতে পারে। হঠাৎ করে যদি মাছ অধিক তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রায় অথবা কম তাপমাত্রা থেকে অধিক তাপমাত্রায় স্থানান্তর করা হয় তাহলে মাছ খুবই আঘাত পায়; এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে মাছ মারা যায়।

মাছকে খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগ দিলে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মাছের ব্যাসাল বিপাক সাধারণত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ব্যাপারে ভ্যান্ট হফস্ সূত্র মোতাবেক পানির তাপমাত্রা ১০ সে. বাড়ার সাথে সাথে মাছের প্রতিক্রিয়ার মাত্রা দুই থেকে তিন (Qio = 2 – 3) হবে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, Qin এর মান তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। সারণি ১৯ এ তাপমাত্রা ও Qio এর মানের সম্পর্ক দেখানো হলো।

সারণি ১৯ : তাপমাত্রার পার্থক্যের সাথে Qia এর সম্পর্ক

 

 

সক্রিয় বিপাকের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে বিপাকের পরিবর্তন নাও ঘটতে পারে। মাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে কোন কোন ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বিপাক বেড়ে যায়। তবে তা একটা নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে উঠে না, বরং নির্দিষ্ট স্তরে থেমে যায় বা কমতে থাকে। উদাহরণ

স্বরূপ, রেইনবো ট্রাউটের ব্যাসাল বিপাক ৫০ সে. থেকে ২৫০ সে. পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সক্রিয় বিপাক ১৫ সে.- ২৫ সে পর্যন্ত হয় থেমে থাকে নতুবা কমতে থাকে। কারণ বিপাক ক্রিয়া দ্রুত চলার ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন থেকে মাছ বঞ্চিত হয়।

দ্রবীভূত অক্সিজেনের ভূমিকা

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

চলন্ত অবস্থায় মাছের বিপাক ক্রিয়ার মাত্রা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। অন্য দিকে প্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাবার সাথে সাথে তাও কমে যায়। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে মাছ তার অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ কমিয়ে আনে ফলে বিপাক ক্রিয়ার গতিও হ্রাস পায়। মাছের সক্রিয়তার ওপর এবং বিপাক কোন পর্যায়ের তার ওপর অক্সিজেনের ব্যবহার নির্ভরশীল।

অন্য কথায় বলা যায়, কম অক্সিজেন থাকলে মাছ কোন মতে তার ব্যাসাল বিপাক চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে আর যদি অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে তা হলে সক্রিয় বিপাক ক্রিয়া স করে। সারণি ২০ এ মাহের বিপাক ক্রিয়া এবং অক্সিজেনের সম্পর্ক দেখানো হলো :

সারণি ২০: বিভিন্ন তাপমাত্রায় রেইনবো ট্রাউট মাছের বিপাকক্রিয়া ও অক্সিজেনের ব্যবহার (মি.গ্রা. অক্সিজেন/কি.গ্রা. মাছ / ঘন্টা)

 

 

এখানে বলা আবশ্যক যে, পানির তাপমাত্রা বাড়ার সাথে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। সাধারণত শীত প্রধান দেশের মাছের জন্য পানিতে অধিক পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কার্পজাতীয় মাছের স্বাচ্ছন্দ বিপাক ক্রিয়ার জন্য পানিতে ৭-৮ মি. গ্রাম/লিটার অক্সিজেন থাকলেই চলে।

দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকলে মাছের শরীর থেকে বিভিন্ন আয়ন (ion) মূত্রের সাথে নিঃসরিত হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রেইনবো ট্রাউট মাছকে অধিক সময় ধরে খুব কম অক্সিজেন যুক্ত পানিতে রাখলে তার শরীর থেকে ল্যাকটিক এসিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরিন এবং অজৈব ফসফেট বের হয়ে যায়।

লবণাক্ততার প্রভাব

বিপাক ক্রিয়ার ওপর লবণাক্ততার প্রভাব স্বাদু পানির মাছ বা সাগরের মাছের ওপর খুবই কম। কিন্তু স্যামন জাতীয় মাছ এবং আমাদের দেশের ইলিশ মাছ যা জীবনের কিছু সময় সাগরে এবং কিছু সময় স্বাদু পানিতে কাটায় তাদের ক্ষেত্রে লবণাক্ততার প্রভাব অত্যধিক। লবণাক্ততার প্রভাব আবার পানির তাপমাত্রা ও মাছের সক্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল।

যেমন- যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে লবণাক্ততার বৃদ্ধির সাথে সাথে মাছের বিপাক ক্রিয়ার জন্য অধিক পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। মাছের সক্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। সারণি ২১ এ রেইনবো ট্রাউটের (১০০ গ্রাম ওজন) বিপাক ক্রিয়ায় লবণাক্ততার প্রভাব দেখানো হলো।

সারণি ২১ বিভিন্ন তাপমাত্রা ও সক্রিয়তার ওপর লবণাক্ততার প্রভাব (অক্সিজেনের ব্যবহারের হার মি.গ্রা./কি.গ্রা. মাছ/ঘন্টা)

 

আরও দেখুন :

Exit mobile version