জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ – যা মৎস্য আহরণের সরঞ্জামাদি তৈরি ও সংরক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত।

জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ

 

জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ

 

ক. সূর্যালোকের সাহায্যে জীবাণুমুক্তকরণ :

এটি একটি সম্পূরক পদ্ধতি। পৃথিবীর সর্বত্র মাছ ধরার কাজ চলাকালীন একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিপরীতে অথবা বিভিন্ন ঋতুতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে তাপ অথবা শুষ্কতায় সংক্রামক অণুজীবসমূহ বাঁচতে পারে না এবং সূর্যালোক জালকে সংক্রামক অণুজীব থেকে রক্ষা করে।

সংরক্ষণ পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে ব্যবহারের পর জালকে প্রথমে সিদ্ধ এবং তারপর সূর্যালোকে শুষ্ক করার মাধ্যেমে জীবাণুমুক্ত করা যায়। এ পদ্ধতি প্রাকৃতিক তন্তুর জন্য কার্যকর কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর জন্য নয় । কারণ সিদ্ধ করলে কৃত্রিম তন্তু অল্প সময়ের ভিতরই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যেহেতু এ পদ্ধতিতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না তাই এটিকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিও বলা হয় ।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সুবিধা :

  • এ পদ্ধতিতে জাল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোন খরচ হয় না ।

অসুবিধা

  • অল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়,
  • এ পদ্ধতিতে জাল সংরক্ষণের জন্য জাল সিদ্ধ করা হয় ফলে জালের স্থায়িত্ব কমে যায়,
  • এ পদ্ধতি প্রাকৃতিক আঁশের তৈরি জালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু কৃত্রিম আঁশের তৈরি জালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

খ. কপার সালফেট দ্বারা সংরক্ষণ :

এ পদ্ধতিতে কপার সালফেট ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী এজেন্ট হিসেবে কাজ করে । প্রাকৃতিক আঁশের দ্বারা তৈরি জাল সাধারণত কপার সালফেট (CuSog) দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় এই পদ্ধতিতে বার বার জালকে কপার সালফেট দ্রবণে ভেজানো হয়। এক্ষেত্রে স্বাদু পানির জন্য ০.১% এবং লবণাক্ত পানির জন্য ০.৩% কপার সালফেট দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। কপার সালফেট দ্রবণে জালকে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা হয়।

সমুদ্রের পানির ক্ষেত্রে কপার সালফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে কপার কার্বোনেট (CuCo3) উৎপন্ন করে এবং পরে কপার কার্বোনেট দানাদার সোডিয়াম ক্লোরাইড (Nacl) এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষারীয় কিউপ্রাস ক্লোরাইড (CuCl2) উৎপন্ন করে জালের উপর গুচ্ছাকারে জমা হয় যদি উক্ত জালকে দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যালোকে রাখা হয় বা শুকানো হয় তবে ক্ষারীয় কিউপ্রাস ক্লোরাইড জালটির ক্ষতি করে জালের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়। এজন্য প্রত্যেকবার ডাইং করা বা ভেজানোর পর জালকে শুকিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবহার করা উচিত।

সাবধানতা

  • সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ক্ষারীয় কিউপ্রাস ক্লোরাইড জালের ক্ষতি করে তাই জালকে সব সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে;
  • কোনো অবস্থাতেই দ্রবণকে উত্তপ্ত করা যাবে না ।

বাংলাদেশে সচরাচর প্রচলিত সংরক্ষণ পদ্ধতি :

বাংলাদেশে যেভাবে জাল রক্ষিত (Dyeing) করা হয় চলতি ভাষায় তাকে গাব দেয়া বলে। অধিকাংশ জেলে তাদের সুতার তৈরি জাল সংরক্ষণ করার জন্য গাৰ ফলের নির্যাস ব্যবহার করে। পাব হলো প্রাকৃতিক রঞ্জক বা সংরক্ষক বা দেশের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই এতে খরচ কম পড়ে এবং এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা সহজতর।

 

জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ

 

এ পদ্ধতিতে যথেষ্ট পরিমাণ গাৰ ফলের নির্যাস একটা মাটির পাত্রে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে নির্বাসকে নির্দিষ্ট পরিমাণে পাতলা করা হয়। তারপর জালকে উক্ত দ্রবণে ৪-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা হয় এবং পরে কোন ছায়াযুক্ত স্থানে শুকানো হয়। এভাবে কয়েকবার ভিজানো এবং শুকানোর পরে জাল কালচে বাদামি রঙে রঞ্জিত হয় এবং এ সময়ে তা ব্যবহার উপযোগী হয়েছে বলে মনে করা হয়। ভালো ফল পাওয়ার জন্য জেলেরা জাল করেকবার ব্যবহার করার পর তা আবার পাব দিয়ে পুনঃরঙ্কিত করে ব্যবহার করে থাকেন।

আরও দেখুন:

Leave a Comment