Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

জিন ইনট্রোগ্রেশন

জিন ইনট্রোগ্রেশন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-জিন ইনট্রোগ্রেশন

জিন ইনট্রোগ্রেশন (Gene Introgression )

দু’টি প্রজাতির মধ্যে সংকরায়ণের ফলে উৎপাদিত পোনা উভয় প্রজাতির জিনই বহন করে থাকে। এভাবে ক্রমাগত উভয় প্রজাতির মধ্যে সংকরায়ণের ফলে একটি প্রজাতির জিন অন্য প্রজাতিতে অনুপ্রবেশ হওয়াকে জিন ইন্ট্রোপ্রেশন বলে । জিন ইন্ট্রোােসড মাছ যদি উন্মুক্ত জলাশয়ে চলে যায় এবং সেখানে কোনো কারণে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে, তাহলে একদিকে যেমন মাছের কৌলিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হারাবে, তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য জনতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে ।

বংশগত অবক্ষয় (Genetic Erosion) নির্ণয়ের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচিত জেনেটিক মার্কার (Selected Genetic Marker) তৈরি করা হলেও বাংলাদেশে এর উপর কোনো গবেষণা অদ্যাবধি করা সম্ভব হয়নি। প্রতি বছর বন্যার কারণে হ্যাচারি বা চাষের পুকুর থেকে প্রচুর সংখ্যক হাইব্রিড বা সংকর জাতের মাছ উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক স্টকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে রেণু/পোনা সংগ্রহ করে quality assisted marker দিয়ে পরীক্ষা করে জিন ইন্ট্রোগ্রেসড মাছের উপস্থিতি জানা প্রয়োজন ।

উত্তরণের উপায়
১. হ্যাচারিতে রুই-এর সাথে কাতলা, রুই-এর সাথে মৃগেল ইত্যাদি সংকর জাতের মাছ তৈরি করা বন্ধ করতে হবে;
২. সংকর জাতের মাছ যাতে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত বা চলে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে;
৩. হ্যাচারিতে ব্রুড পরীক্ষা করে বিশুদ্ধতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক ।

উন্নত ব্রুড ব্যবস্থাপনা

রুই জাতীয় মাছের কৌলিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য দ্রুত জাতীয় মাছের কৌলিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য ব্রুড ব্যবস্থাপনা নিম্নোক্ত উপায়ে করা যায় :

i) প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্ৰহ
প্রাকৃতিক উৎস যেমন হালদা, যমুনা, পদ্মা ইত্যাদি নদী থেকে রেণুপোনা সংগ্রহ করে সঠিকভাবে বাছাই ও প্রতিপালনের মাধ্যমে ব্রুড তৈরিপূর্বক কৃত্রিম প্রজনন ঘটানোর ফলে যে পোনা পাওয়া যায় সেগুলো দ্রুত বর্ধনশীল উন্নত গুণসম্পন্ন হয়। এসকল পোনা হতে উন্নত ব্রুড স্টক তৈরি করা যায় ।

ii) পুকুর থেকে সং
অন্তঃপ্রজননযুক্ত ব্রুড হতে হ্যাচারিতে স্বাস্থ্যবান এবং দ্রুত বর্ধনশীল পোনা বাছাই করে ব্রুড স্টক তৈরির জন্য রাখা উচিত । এক্ষেত্রে রুই জাতীয় মাছের ওজন ও বয়স নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়

 

ব্রুড মাছ পরিচর্যা :

পুকুর নির্বাচন : পুকুরের আয়তন ০.৫০ থেকে ১.০০ একর হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এর পানির গভীরতা ৫-৭ ফুট হওয়া দরকার ।
পুকুর প্রস্তুতি : এক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত ও আমাছা মাছ নির্মূল করতে হবে। এরপর পুকুর শুকানোর পর প্রতি শতাংশে ১.০-১.৫ কেজি হারে পাথুরে চুন/ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে।

তারপর পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । এর সাত দিন পর প্রতি শতাংশে ৫-৭ কেজি গোবর ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫-১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০ গ্রাম এমপি সার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে ।
ব্রুড মজুদ : পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হওয়ার পর একর প্রতি ৬০০-৭০০ কেজি ব্রুড মজুদ করা যেতে পারে । এভাবে রুই জাতীয় মাছের ব্রুড ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ব্রুড ব্যবস্থাপনা

ব্রুডের উৎস : কার্প জাতীয় মাছের ক্রডের উৎস হলো হালনা, যমুনা ও পদ্মা। তবে উন্নত ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় নদীর উৎসের পোনা হতেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এছাড়া বিক্রেতারা অসাধু ব্যবসা ও অধিক লাভের জন্য প্রাকৃতিক উৎসের রেণুর সাথে হ্যাচারি হতে উৎপাদিত পোনা মিশিয়ে বিক্রি করে বলে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পায় না।

যদি প্রথমবার নদীর উৎস থেকে ভালো গুণাগুণ সম্পন্ন পোনা থেকে ব্রুড তৈরি করা যায় তবে সেই ব্রুড থেকে পর্যায়ক্রমিক লাইন ক্রসিং এবং বিভিন্ন লাইনভিত্তিক জেনারেশন তৈরি করে ৫-৭ বছর উন্নত গুণগত সম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন একই মা-বাবা মাছের ভাই-বোনদের মধ্যে ক্রসিং না হয় ।

 

 

 

ব্রুডের লালন ও মজুদ

বাংলাদেশে কার্প জাতীয় মাছের পোনা তৈরির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক । প্রায় হ্যাচারিতেই সেজন্য প্রজননক্ষম ক্রডের সংখ্যা দরকারের তুলনায় কম থাকে অথবা প্রজননক্ষম পুরুষের সংখ্যা অনেক কম থাকে । আবার কিছু কিছু হ্যাচারি মালিকগণ হ্যাচারি পরিচালনার ২-৩ মাস আগে বিভিন্ন অজানা উৎস থেকে অসুস্থ, পুষ্টিহীন বিভিন্ন আকারের ব্রুড মাছ সংগ্রহ করে রেণু তৈরির কাজে ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে উৎপাদিত রেণু পরবর্তীতে মাছ চাষে তেমন একটি ভালো ফলন দিতে পারে না ।

আরও দেখুন:

Exit mobile version