আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচন । যা ” বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচন
বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচন
বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য যেহেতু লোনা পানির দরকার, তাই সমুদ্রের কাছাকাছি হ্যাচারি নির্মাণ করা উচিত। যোগাযোগের জন্য রাস্তাঘাটের সুব্যবস্থা থাকা উচিত। বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির স্থান নির্বাচনের জন্য নিচের বিষয়সমূহ বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন:
১. মাদার শ্রিম্প প্রাপ্তির উৎস: বাগদা চিংড়ির হ্যাচারি পরিচালনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাদার শ্রিম্প। তাই মাদার শ্রিম্প যেখানে পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে সেখানে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।
২. লোনা পানির উৎস: বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য ২৮ ৩২ পিপিটি লবণাক্ত পানির দরকার হয়, তাই সমুদ্রের নিকটবর্তী স্থানে হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত। যাতে সহজে লোনা পানি সরবরাহ করা যায়। বাগনা চিংড়ির পোনা ও মাদার শ্রিম্প প্রতিপালনের জন্য পানির নিম্নেক্ত গুণাগুণ থাকা আবশ্যক।
ক) পানির লবণাক্ততা= ২৮ – ৩২ পিপিটি
খ) তাপমাত্রা= ২৮-৩১° সে।
গ) পিএইচ= ৭৫-৮.৫
ঘ) দ্রবীভূত অক্সিজেন= ৫ পিপিএম এর উপরে।
ঙ) এ্যালকালিনিটি= ১০০ পিপিএম এর কম ক্যালসিয়াম কার্বনেট
চ) মোট হার্ডনেস= ৪০ – ১০০ পিপিএম এর কম ক্যালসিয়াম কার্বনেট
ছ) হাইড্রোজেন সালফাইড= ০.১ পিপিএম এর কম
জ) আন আয়ানোইজড অ্যামোনিয়া= ০.১ পিপিএম এর কম।
ঝ) নাইট্রাইট= ০.২৫ পিপিএম এর কম
ঞ) বিওডি= ১.০০ পিপিএম এর কম
ট) ভারী ধাতু= ০.০১ পিপিএম এর কম
ঠ) তামা= ০.১ পিপিএম এর কম।
ড) লাহো= ০.০১ পিপিএম এর কম
ঢ) দস্তা= ০.২৫ পিপিএম এর কম
ণ) পারদ= ০.২৫ পিপিএম এর কম
ত) জিংক= ০.২৫ পিপিএম
থ) ক্যাডমিয়াম= ০.১৫ পিপিএম

৩. মিঠা পানির উৎস: হ্যাচারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ধৌতকরণের জন্য ও অন্যান্য কাজে মিঠা পানির দরকার। এজন্য হ্যাচারি স্থাপনের পূর্বে মিঠা পানির প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
৪. দূষণমুক্ত এলাকা: কলকারখানা ও ট্যানারি হতে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নিক্ষেপের ফলে পানি দূষণের মাত্রা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চিংড়ির মড়ক ঘটায় তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে চিংড়ির জন্য প্রতিকূল পরিবে-ে শর সৃষ্টি করে। সুতরাং এ সমস্ত এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন না করাই ভালো।
৫. অতি বৃষ্টিজনিত ঢলমুক্ত এলাকা: অতি বৃষ্টিজনিত ঢলের পানি হ্যাচারির পানির গুণাগুণ যেমন- লবণাক্ততা, অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি হঠাৎ পরিবর্তন করে দেয় ফলে চিংড়ির পোনা উৎপাদন মাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
৬. ভূ-প্রকৃতি। যেখানে হ্যাচারি স্থাপন করা হবে সেখানকার ভূ-প্রকৃতি অবশ্যই জানতে হবে। থানটি হ্যাচারির অবকাঠামো স্থাপনের উপযোগী কিনা শুরুতেই যাচাই করে নিতে হবে, বিশেষ করে মাটির গঠন।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থা: চিংড়ি হ্যাচারির প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও স্থানান্তরের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। রাস্তাঘাট ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হলে চিংড়ি সরবরাহের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিবে। সর্বোপরি বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপনের জন্য উপযোগী স্থান।
৮. বিদ্যুৎ সরবরাহ: চিংড়ি হ্যাচারিতে বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। হ্যাচারির স্থান নির্বাচনের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। বিদুৎ না থাকলে ডিজেল ঢালিত পাম্পে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ সবচেয়ে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী।
৯. দক্ষ জনশক্তি: চিংড়ি হ্যাচারিকে লাভজনক করতে হলে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। তাই দক্ষ জনশক্তির পর্যাপ্ততা বিবেচনা করে চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত।
১০. উৎপাদন সামগ্রীর প্রাপ্যতা ও সরবরাহ: এমন জায়গায় চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত যেখানে খুব কাছাকাছি বাজার আছে এবং সহজেই ঔষধ, যন্ত্রপাতি, মাদার শ্রিম্প, পিএল, ফিড, আর্টিমিয়া, মেরামত সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়া দূরের বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হলে প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা থাকা উচিত।
১১. অন্যান্য ফসলের সাথে বিরাধেমুক্ত এলাকা: কৃষি বা অন্য ফসলের সাথে বিরাধেপূর্ণ এলাকায় চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপন করা উচিত নয়। এতে সামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে।
১২. নিরাপত্তা: চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে অনেক সময় হ্যাচারিতে চুরিসহ অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরও দেখুনঃ