Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

হ্যাসাপ (HACCP) ভিত্তিক মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব | অধ্যায়-২ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

হ্যাসাপ (HACCP) ভিত্তিক মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব | অধ্যায়-২ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – হ্যাসাপ (HACCP) ভিত্তিক মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব । যা ” বাগদা চিংড়ির গুণগতমান সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

হ্যাসাপ (HACCP) ভিত্তিক মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব

 

 

হ্যাসাল (HACCP) ভিত্তিক মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব

গত এক দশকে ইউরোপডীয়ান দেশসমূহে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানিকৃত মৎস্যজাত খাদ্যের প্রধান শর্ত হলো গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া। ১৯৯০ এর শুরুতে হ্যাসাপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়িজাত খাদ্যের মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

১৯৯১ সালের ২২ জুলাই ইউরোপডীয়ান ইউনিয়ন কমিউনিটি (EUC) একটি আইন জারীর মাধ্যমে শর্ত আরোপ করে যে ইউরোপডীয় দেশে মৎস্যজাত খাদ্য প্রবেশ করার পূর্বে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। আর্টিকেল ৩-এ হ্যাসাপ (Hazard Analysis Critical Control Point) এর ভিত্তিতে খাদ্যের জৈবিক এবং ভৌত রাসায়নিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে মৎস্যজাত খাদ্য জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে মৎস্যজাত খাদ্যে যে জীবাণুগত সমস্যা এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে তা মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্যসামগ্রী বিশ্বে বাজারজাত করা সহজ হবে। এই হ্যাসাপ পদ্ধতি প্রায় ১০০ ভাগ খাদ্যসামগ্রীকে অণুজীবঘটিত রোগের সংক্রমণ থেকে রাধে করা সম্ভব।

বিভিন্ন তথ্য য বিশ্বের মোট খাদ্য উৎপাদনের শতকরা ৫ ভাগ খাদ্য ভাক্তোদের কাছে পৌছার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে সুদীর্ঘ গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা একমত পাষেণ করেন যে, খাদ্য উৎপাদনের উৎসস্থল থেকে। সকল কারণে খাদ্য সংক্রমিত হচ্ছে তা নিরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাক্তোদের নিরাপদ স্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন উপহার দেয়া সম্ভব।

চিংড়ির উত্তম ব্যবস্থাপনা

খাদ্য যাতে স্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ না হয় এবং খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ সংস্থা হ্যাসাপ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে গুণগতমান উন্নয়ন করে থাকে। ভালো প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি বা এগচ (Good Manufacturing Practice) এর মাধ্যমে গুণগতমান সম্পন্ন খাদ্য ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্যতার জন্য প্রয়োজন হয়।

এগচ এর অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে বাস্তবায়ন করতে হয় যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে পণ্যসামগ্রী ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। আবার কার্যকর বা ফলপ্রসূ বলতে আমরা বুঝি পণ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া সত্ত্বেও কিছু। কিছু অণুজীব কণা খাদ্যে থেকেও যেতে পারে যা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এফডিএ (FDA- Food & Drug Administration) এর নীতিমালা অনুযায়ী ভালো প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি বা এগচ প্রধানত চার তরে বিভক্ত, যথা-

ক) সাধারণ যোগান বা সংস্কন,

খ) নির্মাণ ভবন ও সুযোগ সুবিধাদি,

গ) যন্ত্রপাতি, এবং

ঘ) পণ্যসামগ্রীর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ক. সাধারণ যোগান বা সংস্থান

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সাধারণ যাগোনের আওতায় পড়ে। যদি কোনো শ্রমিক বা কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তার দেহে ক্ষত কিংবা সংক্রমণ দেখা দেয় তাহলে তাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজ থেকে বিরত রাখা উচিত। প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যাবশ্যক। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক শিক্ষাদানের মাধ্যমে কারখানার মান উন্নয়ন করা যায়।

খ. নির্মাণ ভবন ও সুযোগ সুবিধাদি

প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত যাতে কীটপতঙ্গা, ইদুর ও অন্যান্য অণুজীবদ্বারা সংক্রমণ না ঘটে ও কাজ করার জন্য খোলামেলা প্রশমত জায়গা আবশ্যক। এছাড়া পানি, বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, টয়লেট এবং হাত ধোয়ার জন্য সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত।

গ. যন্ত্রপাতি

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এমনভাবে তৈরি করা উচিত যেন তেল, জ্বালানী বা ধাতুকণাদ্বারা খাদ্যদ্রব্যে সংমিশ্রণ না ঘটে এবং যন্ত্রপাতি সহজভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।

ঘ. পণ্যসামগ্রীর প্রক্রিয়াকরণ ও নিয়ন্ত্রণ

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে এবং কাঁচামাল গুদামজাত করা, সংরক্ষিত এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করা এবং যন্ত্রপাতি ও প্যাকেজ সামগ্রীতে যাতে দূষণ না ঘটে এসব বিষয়ে সর্তকতা থাকা। রপ্তানির জন্য উপযোগী। পণ্যসামগ্রী গুদামজাত এবং পরিবহনের সময় যাতে দূষণ না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মাননিয়ন্ত্রণ এবং মৎস্য ও মৎস্যজাত সামগ্রীর গুণগত মান বজায় রাখা অপরিহার্য।

 

 

হাসাপ-এর ব্যাখ্যা

হ্যাসাপ হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিধি-বিধান, যা কোনো খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদামজাতকরণ, বিপণন ইত্তাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে। বিগত ১৯৯৭ সালে হ্যাসাপ এর বিধি-বিধান মানা শুধুমাত্র চিংড়ি উৎপাদনকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানের যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ ও ইউরোপডীয় ইউনিয়নের নীতিমালা অনুসারে চিংড়ি পণ্যের উৎস অর্থাৎ লার্জি থেকে শুরু করে ভোক্তার নিকট পৌছানারে পূর্ব পর্যন্ত সকল তরে হ্যাসাপের বিধি বিধান মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version