আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চিংড়ি পরিচিতি, জীববিদ্যা ও চাষ ব্যবস্থাপনা।
চিংড়ি পরিচিতি, জীববিদ্যা ও চাষ ব্যবস্থাপনা
চিংড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী সম্পদ। রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে পাট ও পোশাক শিল্পের পরেই চিংড়ির স্থান। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানি থেকে বছরে প্রায় ৪১১৯ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। যা রপ্তানি আয়ের প্রায় ১২-১৫ শতাংশ। রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির পুরোটাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবাধ উৎসের উৎপাদন অথবা আহরণ । তবে প্রকৃতপক্ষে চিংড়ি চাষ এখনো বিজ্ঞানভিত্তিক হয়ে ওঠেনি। চাষ ব্যবস্থায় যা হচ্ছে তা হলো প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত পোনা ‘ঘের’-এ আবদ্ধ করে সাময়িক লালন-পালন মাত্ৰ ৷
প্রাকৃতিক পোনা ঘেরে আটকিয়ে যে চাষ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বর্জিত বলে এর উৎপাদনও হতাশাব্যঞ্জক। এ অবস্থায় হেক্টর প্রতি চিংড়ির গড় উৎপাদন মাত্র ৬০০ কেজি । অথচ আমাদের দেশের অনুরূপ অন্য অনেক দেশেই হেক্টর প্রতি ন্যূনতম উৎপাদন ১০০০ কেজি। তাই আমাদের দেশেও হেক্টর প্রতি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।
চিংড়ির বৈজ্ঞানিক পরিচিতি
চিংড়ি আর্থোপোডা বা সন্ধিপদী পর্বের অন্তর্ভুক্ত ক্রাস্টাসিয়া শ্রেণির প্রাণী। Arthro অর্থ যুক্ত এবং Poda অর্থ পা। অর্থাৎ এ পর্বের প্রাণীদের ‘যুক্ত পা’ বিদ্যমান। এদের দেহ দ্বিপার্শ্বীয়, লম্বাকৃতি, প্রতিসম ও খণ্ডিত। দেহ মস্তক ও উদর, এ দুই অংশে বিভক্ত। চিংড়ির মাথাকে দেহ থেকে আলাদা করা যায় না বলে মাথা ও বুককে একসঙ্গে নাম দেয়া হয়েছে শিরোবক্ষ (Cephalothorax)। উদর (Abdomen) ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে সরু হয়ে লেজ (Telson)- এর সাথে মিশেছে। শিরোবক্ষে ১৩টি এবং উদরে ৬টি উপাঙ্গ রয়েছে।
চিংড়ির দেহ কাইটিন নামক খোলস দিয়ে আবৃত যা ক্যালসিয়াম উপাদান দিয়ে গঠিত। মস্তকের এ কাইটিন আবরণ সম্মুখ ভাগে দেখতে করাতের মতো যা রোস্ট্রাম (Rostrum) নামে পরিচিত। চিংড়ির খোলস দেহের প্রতি অংশকে ঘিরে রাখে এবং একটি খোলস অপর খোলসের মাঝে সন্ধিল পদার্থ (Arthrodial membrane) দিয়ে সংযোগ রক্ষা করে ।
যার ফলে খোসাগুলি সহজে নড়াচড়া এবং প্রয়োজনে লম্বা হয়ে যেতে পারে। খোসাগুলি গোল আকৃতির। খোসার উপরের অংশকে টারগাইট (Tergite) এবং নিচের অংশকে স্টারনাইট (Sternite) বলে। টারগাইটের পাশের ঝুলন্ত অংশকে প্লিউরন (Pleuron) বলে। চিংড়ির খোলসের আবার অনেকগুলো স্তর রয়েছে। উপরের স্তর শক্ত এবং কোষবিহীন। নিচের স্তরে গ্রন্থি কোষ রয়েছে ।
চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস :
আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। যথা-স্বাদু পানিতে চাষযোগ্য চিংড়ি- গলদা চিংড়ি এবং লোনা বা আধালোনা পানিতে চাষযোগ্য চিংড়ি- বাগদা চিংড়ি । নিচে দুই ধরনের চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস দেখানো হলো :
১. গলদা চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস
Phylum – Arthropoda
Class Crustacea
Order – Decapoda
Family – Palaemonidea
Genus – Macrobrachium
Species – M. rosenbergii
২. বাগদা চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস
Phylum-Arthropoda
Class Crustacea
Order – Decapoda
Family-Penaeidae
Genus – Penaeus
Species – P. indicus
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ির শ্রেণিবিভাগ :
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়িকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- পিনাইড (Penacid) গ্রুপ এবং নন-পিনাইড (Non- penaeid ) গ্রুপ। বাগদা, চাপড়া ইত্যাদি মূল্যবান সামুদ্রিক চিংড়িসমূহ পিনাইড গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। অপরপক্ষে গলদা, ছটকা, ডিমুয়া ইত্যাদি স্বাদু বা ঈষৎ লবণাক্ত পানির চিংড়ি নন পিনাইড গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। নিচে পিনাইড এবং নন-পিনাইড চিংড়ির পার্থক্য দেয়া হলো-
শ্রিম্প (Shrimp) এবং প্রণ (Prawn)-এর মধ্যে পার্থক্য
ইংরেজিতে চিংড়ি Shrimp এবং Prawn এ দুই নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে FAO আয়োজিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, লোনা পানির চিংড়িকে Shrimp এবং মিঠা পানির চিংড়িকে Prawn বলা যেতে পারে । গলদা চিংড়িকে সাধারণত Giant Fresh Water Prawn এবং বাগদা চিংড়িকে Giant Tiger Shrimp বলা হয়। নিচে গলদা চিংড়ি এবং বাগদা চিংড়ির পার্থক্যসমূহ উল্লেখ করা হলো—
স্বাদু পানিতে চাষযোগ্য কতিপয় চিংড়ির বাংলা এবং বৈজ্ঞানিক নাম নিচে উল্লেখ করা হলো :
লোনা পানিতে চাষযোগ্য কতিপর চিংড়ি বাংলা এবং বৈজ্ঞানিক নাম নিচে উল্লেখ করা হলো :
নিচে একটি গলদা চিংড়ি এবং একটি বাগদা চিংড়ি দেখানো হলো।
চিংড়ির প্রাপ্তিস্থান বা বিচরণ
কতিপয় মিঠাপানির চিংড়ি বা বিচরণ এলাকা নিচে দেয়া হলো—
লোনা বা আধা-লোনা পানিতে পাওয়া যায় এমন কতিপয় চিংড়ির প্রাপ্তিস্থান বা বিচরণ এলাকা নিচে দেয়া হলো :
আরও দেখুন: