আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – ঘেরে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কৌশল । যা ” বাগদা চিংড়ির চাষ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।
ঘেরে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কৌশল
বাংলাদেশে সত্তরের দশক থেকে চিংড়ি চাষ শুরু হলেও অদ্যাবধি চাষ পদ্ধতির তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয় নি। সময়ের ব্যবধানে গতানুগতিক চাষ পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন হলেও মূলত চাষ কৌশল এখনও বিজ্ঞানসম্মত পর্যায়ে পৌছেনি। তাই ঘেরের সার্বিক পরিবেশ থাকে বিপর্যন্ত, আক্রমণ হয় নানা রোগ-জীবাণুর এবং সর্বোপরি একক এলাকায় উৎপাদন হয় অনেক কম।
ঘেরের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোনা মজুল, পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা, সার, চুন ও খাদ্য প্রয়োগ বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানের অভাবই মূলত চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ঘের প্রস্তুতি ও মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে একক এলাকায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
উন্নত চাষ পদ্ধতি
চিংড়ি চাষের উষালগ্ন থেকেই গতানুগতিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়ে থাকে। চিংড়ি চাষে ঘের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোনা মজুদকরণ, খামারের উৎপাদনশীলতা ও মজুদ ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা না থাকা, খাদ্য প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে অসচেতনতা ও উদাসীনতার কারণে একক এলাকায় উৎপাদন অত্যন্ত কম। বাস্তব ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার প্রয়োগই হচ্ছে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ। উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ হলোকঃ
ক) ঘেরে বিদ্যমান অবকাঠামোর সামান্য উন্নয়ন করে গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে প্রতি একক এলাকায় উৎপাদন বাড়ানো।
খ) ঘেরের মাটি ও পানির ধারণক্ষমতার উপর ভিত্তি করে মজুদ ঘনত্ব ও চাষ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করে একটি মাঝারি ধরনের উৎপাদন নিশ্চিতকরণ।
গ) নিবিড় ও আধা-নিবিড় পদ্ধতির মত চাষ পদ্ধতির উৎপাদন ঝুঁকি ও উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে পরিবেশ। বান্ধব ও স্থিতিশীল উৎপাদন ও অধিক মুনাফা অর্জন।
আদর্শ ঘেরের বৈশিষ্ট্যসমূহ
ক) জোয়ারের পানিদ্বারা সরাসরি ও সহজে পানি পরিবর্তন করা যায় এমন ঘের নির্বাচন করতে হবে।
খ) পানি উঠানামা করানোর জন্য অন্য ঘেরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বতন্ত্র পানি ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
গ) ঘেরের আয়তন ০.৫ থেকে ১.০ হেক্টর হলে ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।
ঘ) ঘেরে পানির গড় স্থির গভীরতা ১.০ থেকে ১.২ মিটার হলে ভালো হয়।
ঙ) ঘেরের তলদেশ সমান করতে হবে।
চ) ঘেরের পাড় যথেষ্ট মজবুত ও চওড়া হতে হবে, যাতে পানি চুঁইয়ে বের হয়ে না যায়।
ক. ঘের মেরামত ও গভীরতা নির্ধারণ
উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পূর্বশর্ত হচ্ছে ঘের মেরামত ও উপযুক্ত গভীরতা নির্ধারণ। তাই ঘের নির্বাচন, মেরামত ও গভীরতা নির্ধারণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা অত্যাবশ্যকঃ
খ) ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘেরের পানি শুকিয়ে তলদেশে পর্যাপ্ত সূর্যকিরণ লাগাতে হবে। খ) ঘেরে পানির উপযুক্ত গভীরতা ধরে রাখার জন্য পাড় যথাসম্ভব উঁচু (১.২-১.৫ মিটার) ও মজবুত (চওড়া) করতে হবে।
গ) তলদেশ ও পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে, যাতে পানি চুইয়ে না যায় বা অন্য ঘেরের পানি প্রবেশ করতে না পারে।
ঘ) পানি উত্তোলন গেটে বাশের পাটা ও নাইলনের মশারি নেট দিয়ে স্ক্রিন তৈরি করতে হবে। যাতে পানি উত্তোলনের সময় অবাধে অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ বা প্রাণি প্রবেশ করতে না পারে।
খ. ঘেরে নার্সারি তৈরি
পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধির জন্য ঘেরে নার্সারি ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তাই ঘেরে স্বল্পকালীন নার্সারি তৈরি করে পোনা লালন-পালন করা হলে পোনার বেঁচে থাকার হার অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে
ক) ঘেরের যে কোনো এক পাশে মাটির বাঁধ দিয়ে বা বাঁশের চটা ও মশারির নাইলন নেট দিয়ে ঘিরে ঘেরের আয়তনের ১০-১৫ ভাগ আকারের নার্সারি তৈরি করতে হবে।
খ) বাশের চটা ও মশারির নাইলন নেট দিয়ে নার্সারি তৈরি করলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে নেট ছিদ্র না থাকে। নেট ছিদ্র থাকলে পোনা বের হয়ে লালন পুকুরে চলে যাবে।
গ) পোনার প্রাথমিক অবস্থায় আশ্রয়ের জন্য নার্সারিতে পরিমিত পরিমাণ বাঁশের কঞ্চি বা শুকনো নারিকেল বা খেজুর পাতা পুঁতে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন পোনার আশ্রয় হবে তেমনি একে জমানো পেরিফাইটন ও ব্যাকটেরিয়াল ফিল্ম পোনার প্রাথমিক দশায় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
গ. ঘের ও নার্সারি প্রস্তুতি
প্রস্তুতি পর্বে ঘের ও নার্সারি কমপক্ষে ৫-৬টি স্থানের মাটির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। মাটির পিএইচ এর উপর ভিত্তি করে নার্সারি ও ঘেরে পরিমিত হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের পরিমাণ হলোঃ
ক) ঘের ও নার্সারি প্রস্তুতকালীন সময়ে তলদেশ ও পাড়ের উপরের অংশ পর্যন্ত শতকে ১ কেজি হাতে ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর মিশ্রণ প্রয়োগ করা যেতে পারে; অথবা
খ) পাথুরে চুন ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর মিশ্রণ ১৪১ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কিংবা
গ) শুধুমাত্র ডলোমাইট বা পাথুরে চুন উল্লিখিত হারে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ঘ. ঘেরে পানি উত্তোলন এবং রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন
চুন প্রয়োগের ৩-৭ দিন পরে স্ক্রিনিং করে ঘের ও নার্সারিতে ৫০-৬০ সেমি জোয়ারের পানি ঢুকাতে হবে, যাকে অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ ঘেরে প্রবেশ করতে না পারে। তদুপরি জোয়ারের পানির সাথে কদাচিৎ কিছু কিছু রাক্ষুসে মাছ বা অবাঞ্চিত প্রাণি ঘেরে ঢুকে পড়তে পারে। এদের ধ্বংস করার জন্য
ক) উপযুক্ত পানি উত্তোলনের পর ১ কেজি/শতক/ফুট গভীরতা হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা।
খ) ফসটক্সিন ট্যাবলেট ১ টি/শতক/ফুট গভীরতা হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে অবাঞ্চিত ও অন্যান্য রাক্ষুসে মাছ ও প্রাণি মারা যাবে এবং খরচও অনেক কম হবে। ফলে পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি পাবে।
ঙ. সার প্রয়োগ
চিংড়ি পোনা মজুদের উপযুক্ত প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঘেরে সার প্রয়োগ জরুরি। এ লক্ষ্যে ঘেরে ব্লিচিং পাউডার বা ফসটক্সিন ট্যাবলেট প্রয়োগের ৩-৫ দিন পরে-
ক) ঘের ও নার্সারির পানিতে ২০০ গ্রাম/শতক হারে ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম/শতক হারে টিএসপি, ৫০ গ্রাম/শতক হারে পটাশ সার এবং ১২৫ গ্রাম/শতক হারে চিটাগুড় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
খ) সার প্রয়োগের ৫-৭ দিনের মধ্যে ঘেরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাংকটন) উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যায়। যদি প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা কম হয় তাহলে পুনরায় প্রথম ডোজের অর্ধেক পরিমাণ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সার প্রয়োগের ৩-৫ দিনের মধ্যে ঘেরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাংকটন) উৎপন্ন হবে। এমতাবস্থায় ঘের পোনা মজুদের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা যেতে পারে।
চ. পোনা মজুদকরণ
সার প্রয়োগের ৭ দিন পরে ঘেরের পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাংকটন) উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যায়। তখন এই পদ্ধতিতে থেরের জন্য ২০০ টি/শতকে সুস্থ-সবল বাগদা চিংড়ির পোনা পরিমিত অভ্যস্তকরণ করে নার্সারিতে মজুদ করতে হবে।
ছ. খাদ্য প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা
বাগদার আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে প্রয়োজনীয় খাবার প্রয়োগ করতে হবে। তাই
ক) পোনা মজুদের পরের দিন হতে নিচের সারণি মোতাবেক তৈরি খাবার সকাল-সন্ধ্যায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
খ) নার্সারিতে পোনা মজুদের সর্বোচ্চ ১৪-২১ দিনের মধ্যে নার্সারি উন্মুক্ত করে আঙ্গুলীপোনা সালন পুকুরে। অবমুক্ত করতে হবে।
গ) প্রতি ৭ দিন অন্তর কিছু জীবন্ত চিংড়ি ধরে ওজন নিতে হবে এবং ঘেরে মোট চিংড়ির ওজন (বায়োমাস)। হিসেব করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাবার কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। খাবার প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে খাবার বেশি না হয়।
ঘ) খাবার বেশি হলে তা পড়ে ঘেরের পানি নষ্ট হবে, দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যেতে পারে বা অনাকাঙ্ক্ষিত গ্যাস যেমন- হাইড্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ঙ) খাবারের ট্রে ব্যবহার করে মাঝে মাঝে খাবার গ্রহণের মাত্রা লক্ষ্য করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার কম বা বেশি করা যেতে পারে।
সারণি: চিংড়ির খাবার সরবরাহের পরিমাণ
সপ্তাহ | দৈনিক খাবারের পারমান (দৈহিক ওজনের) | খাবারের প্রকার/ধরন |
১ম সপ্তাহ | ১০০% | নার্সারি খাদ্য |
২য় সপ্তাহ | ৬০% | নার্সারি খাদ্য (স্টার্টার-১) |
৩য় সপ্তাহ | ৩০% | নার্সারি খাদ্য (সস্টার্টার-১, ২) |
৪র্থ সপ্তাহ | ১০% | নার্সারি খাদ্য (স্টার্টার-২) |
৫ম সপ্তাহ হতে আহরণ পর্যন্ত | ২-২.৫% | শিলেট খাদ্য (স্টার্টার-৩) |
জ. ঘেরের পানি ব্যবস্থাপনা
চিংড়ির উপযুক্ত দৈহিক বৃদ্ধি ও পানির গুণগতমান সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য পানি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। তাই চিংড়ির বয়স এক মাস হলে পরিশ্রত পানি উত্তোলন করে পানির গভীরতা এক মিটার করতে হবে। ঘেরের পানি প্রতি ৭ দিন অন্তর পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং যে কোনো ধরনের ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য
ক) পানির পিএইচ ৭.৫ এর নিচে নামলে বা সকাল সন্ধ্যার মধ্যে পানির পিএইচ এর পার্থক্য ০.৫ এর বেশি। হলে ঘেরের পানিতে ১ কেজি/শত্রুক হারে পাথুরে চুন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
খ) কোনো কারণে পানির পিএইচ বেড়ে ৯.০ এর ওপরে গেলে পরিমিত পরিশ্রত পানি যাগে করতে হবে।
গ) পানিতে প্রাকৃতিক খাবার অপর্যাপ্ত হলে বা পানির স্বচ্ছতা ৩৫ সেমি এর ওপরে হলে ৫০ গ্রাম/শতক হারে টিএসপি এবং প্রয়োজনে ৫০ গ্রাম/শতক হায়ে পটাশ সার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ঘ) এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে ঘেরে প্রথম এক থেকে দুই মাস সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীতে আর সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। কারণ অবশিষ্ট খাদ্য ও চিংড়ির খোলস এবং মল পচনের মাধ্যমে পরবর্তীতে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
ঙ) পানির স্বাচ্ছতা যদি কমে যায় তাহলে পরিশ্রত পানি যাগে করতে হবে। ঘেরের পানি সূর্যালোকে যে পরিমাণ কমবে তা প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারের পরিশ্রুত পানি দ্বারা পূরণ করতে হবে।
চ) পানিতে যদি দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা দীর্ঘ সময় ৩.৫ এর নিচে থাকে তাহলে পরিশ্রুত পানি সংযোজন করতে হবে বা বাতাস সঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘেরের পানিতে কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হলে পরিশ্রত পানি যাগে করা প্রয়োজন। পানি সংযোজনের পর এবং বৃষ্টির পরে প্রয়োজনে ৬-৮ পিপিএম (এক হেক্টর ঘেরে এক মিটার পানির জন্য ৬০-৮০ কেজি) হারে জলো চুন পানিতে গুলে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ঝ. চিংড়ির স্বাস্থ্য পরিচর্যা
চিংড়ির স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য প্রতি ৭ দিন অন্তর চিংড়ি ঘরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে চিংড়ির খোলস ও সন্তরণ পাখনায় অ্যালজি ও জুখামনিয়াম দেখা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমিকভাবে ১ কেজি/শতক হারে চুন প্রয়োগ এবং পরিশ্রত পানি সংযোজনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য যেকোন রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র একজন চিংড়ি রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ঞ. বাগদা আহরণ
উল্লিখিত পদ্ধতিতে পরিচর্যা করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে বাগদা চিংড়ির গড় ওজন ২২.৫-২৫০ গ্রাম হবে। একই সময়ে কিছু চিংড়ি দ্রুত বর্ধনের মাধ্যমে ২৫০-৩০০ গ্রাম হতে পারে, যা বাজারজাতকরণের উপযোগী। এমতাবস্থায়
ক) প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের সময় ঘেরে ট্যাপ (চারু) দিয়ে বা কাকি জাল ফেলে বড় চিংড়ি আহরণ করে ঘেরের অবশিষ্ট ছোট চিংড়িকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
খ) প্রায় ১২০-১৩০ দিন চাষের পর ঘের শুকানোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ চিংড়ি আহরণ করা যেতে পারে।
উৎপাদন
উল্লিখিত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হলে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা করলে চিংড়ির বেঁচে থাকার হায় ৬০-৭০ শতাংশ হবে বলে আশা করা যায়। যা থেকে প্রতি হেক্টর ঘের থেকে ৮০০-৯০০ কেজি বাগদা চিংড়ির উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
আয়-ব্যয়
উল্লিখিত উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ গবেষণায় দেখা যায়, এক হেক্টর পরিমাণ ঘেরে একক ফসলে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে সর্বসাকুল্যে প্রায় ১.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয় এবং ৮৫০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা যায়। প্রতি কেজি ৪০০.০০ টাকা হিসেবে উৎপাদিত চিংড়ির বাজার মূল্য প্রায় ৩.২০ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে প্রকৃত মুনাফা আসে ১.৭০ লক্ষ টাকা। আর যদি এক মৌসুমে দুইটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব করা যায় তাহলে প্রকৃত মুনাফা দ্বিগুণ করা সম্ভব।
সতর্কতা
> যের পর্যায়ে নাইলন মশারী নেট দিয়ে নার্সারি তৈরির পরিবর্তে মাটির বাঁধ দিয়ে নার্সারি করলে বেশি, নিরাপদ হবে। এত্রে কাকড়ার নেট কেটে দেয়ার জয় কম থাকে।
> ঘেরের পানির উপযুক্ত গুণাগুণ সংরক্ষণের জন্য পরিমিত গভীরতা পর্যন্ত পানি অবশ্যই বরে রাখতে হবে। তা নাহলে অধিক তাপমাত্রার সময় দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যেতে পারে এবং চিংড়ির মড়ক দেখা দিতে পারে।
> খেরের পানি চুইয়ে যাওয়া বা অন্য থের হতে পানি আগমন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সেটা করা সম্ভব না হলে একদিকে যেমন পানির উপযুক্ত গুণাগুণ ধরে রাখা সম্ভব হবে না, তেমনি অন্যদিকে রোগের সংক্রমণ
> হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। চিংড়ির জন্য নিয়মিত পরিমাণমত সুষম খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। খাদ্য প্রয়োগ বেশি হলে পানি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার খাদ্য কম হলে চিংড়ির বৃদ্ধি আশানুরুপ হবে না এবং চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে।
আরও দেখুনঃ