আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা। যা ” গলদা চিংড়ি চাষ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা ও মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চিংড়ি চাষ এলাকা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের নিম্নাঞ্চল যেখানে প্রায় সারাবছরই পানি থাকে সেখানে গলদা-চিংড়ির চাষ ভালোভাবে করা যায়। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা-চিংড়ি চাষ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে দেশের কমপক্ষে ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব। চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে দেশে গত ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রায় ৩২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এ আয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রপ্তানিকৃত চিংড়ির মধ্যে স্বাদু পানির চিংড়ির অবদান প্রায় ২৩% এবং এ পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দেশে গলদা-চিংড়ি উৎপাদন গড়ে হেক্টর প্রতি ৪০০-৭০০ কেজি যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম।

গলদা চিংড়ি উৎপাদন ও সম্প্রসারণে বর্ণিত সমস্যাবলি সমাধান করা গেলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক গলদা চিংড়ির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। উপরন্ত দেশের দারিদ্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং বর্ধিত জনগাষ্ঠেীর প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণ হবে। গলদা-চিংড়ি স্বাদু পানির চিংড়ি হওয়ায় এর চাষ বন্ধ ও মুক্ত উভয় জলাশয়ে সম্ভব।
সাধারণভাবে বলা যায়, সব এলাকায় চিংড়ি চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিংড়ি খামারের আয়তন ১৯৮৪-৮৫ সালে ৬৪,০০০ হেক্টর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ১৪০,০০০ হেক্টরে। চিংড়ির শতকরা প্রায় ২৩% ভাগ উৎপাদন গলদা-চিংড়ি থেকে পাওয়া যায়। এটি একটি বিকাশমান কৃষিভিত্তিক শিল্প। চিংড়ির মধ্যে গলদা চিংড়ি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।
গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধাগুলো হচ্ছেঃ
- চাষ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ
- গলদা চিংড়ি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- প্রায় সকল আকারই বাজারজাত উপযোগী। তবে ১২-৩০ গ্রেডের চিংড়িতে লাভ বেশি
- উচ্চ বাজার মূল্য, প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে ৪৫০-৬৫০ টাকা/কেজি
- স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ, ৬-৮ মাসে সম্পূর্ণ চিংড়ি বাজারজাত করা যায়
- অগভীর পুকর/ঘেরে চাষাবাদ সম্ভব (১-১.৫ মিটার পানির গভীরতা)।
- মৌসুমী পুকুরেও গলদার চাষ করা যায়
- গলদার সাথে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ একত্রে করা যায়।
- উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় সারাবছর পোনা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
- উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থায়ী জলাবদ্ধতাকে কাজে লাগানো যায়।
- ধানক্ষেতেও গলদা চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
- অমেরুদন্ডী কাটাবিহীন প্রাণী বলে গলদা সকলের কাছে প্রিয়
- বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গলদার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
আরও দেখুনঃ