চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি – যা চিংড়ি পরিচিতি, জীববিদ্যা ও চাষ ব্যবস্থাপনা এর অন্তর্ভুক্ত।

চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি

 

চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ, উপকরণের প্রাপ্যতা, খামারী কিংবা চিংড়ি-চাষির আর্থিক সংগতি, চিংড়ি-চাষের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চাষ পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। যেমন-

১. সনাতন চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি;
২. সম্প্রসারিত চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি;
৩. উন্নত সম্প্রসারিত চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি;
৪. আধা নিবিড় চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি ও
৫. নিবিড় চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি ।

নিচে চিংড়ি-চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো-

১. সনাতন চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি :

অল্প ব্যয়ে জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর ভিত্তি করে যে পদ্ধতিতে চিংড়ি-চাষ করা হয় তাকে সনাতন চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে কম অথবা বেশি ঘনত্বে চিংড়ির পোনা বা পিএল মজুদ করা হয় । পুকুরে বা ঘেরে রাক্ষুসে বা অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা হয় না। পুকুরে বাহির থেকে কোন খাবার ও সার দেয়া হয় না। এ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনেক কম ।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

২. সম্প্রসারিত চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে চিংড়ি-চাষের ক্ষেত্রে পুকুর বা ঘেরের আয়তনের ক্ষেত্রে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই । আয়তনের ক্ষেত্রে এটা কয়েক শতাংশ থেকে শুরু করে কয়েক একর পর্যন্ত হতে পারে । এ চিংড়ি-চাষ কার্যক্রম গতানুগতিক, অর্থাৎ চুন, সার, গোবর ইত্যাদি প্রয়োগ করা বাধ্যতামূলক নয় । রোগ-বালাই প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

৩. উন্নত সম্প্রসারিত চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে চিংড়ি-চাষের ক্ষেত্রে জলাশয়ের আয়তন তুলনামূলক কম বা ছোট এবং সাধারণভাবে যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। চিংড়ি পোনা মজুদ কার্যক্রম বিজ্ঞানসম্মত, খাদ্য কিংবা সার হিসেবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে চালের কুঁড়া, খৈল ইত্যাদি মিশিয়ে বল বানিয়ে প্রয়োগ এবং সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, গোবর ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।

৪. আধা নিবিড় চিংড়ি-চাষ পদ্ধতি :

এ ধরনের চিংড়ি-চাষ পদ্ধতিতে জলাশয়ের আরতন তুলনামূলক ছোট, পাড় বন্যামুক্ত এবং পুকুর পাড়ে সমস্যা সৃষ্টিকারী কোনো পাছপালা সচরাচর থাকে না। বিজ্ঞানভিত্তিক উপারে পোনা মঞ্জুল, নির্ধারিত মাত্রায় চুন, জৈব এবং অজৈব সার প্ররোগ, রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার ব্যবস্থাকরণ এবং শতাংশ প্রতি মজুদ ঘনত্ব অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে সুষম সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ এবং রোগ বালাই দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

 

চিংড়ি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি

 

৫. নিবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতি :

এ ধরনের চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বাধিক সুযোগ ব্যবহার করা হয়। অল্প জায়গার, কম সময়ে অধিক উৎপাদনের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত ব্যবস্থা গৃহীত হয় তা হলো- জলাশয় সম্পূর্ণভাবে চিংড়ি চাষির নিয়ন্ত্রণে থাকে, আয়তন খুলনা মূলক ছোট (১-২ এবনা), একক পরিমাণ জলাশয়ে চিংড়ির পোনা মজুদের হার তুলনামূলক অনেক বেশি, উন্নত মানের সুম পিলেট খাদ্য প্ররোগ, নিয়মিত পানি পরিবর্তন ও অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য বায়ু সঞ্চালনের আধুনিক ব্যবস্থাকরণ। নিবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি।

আরও দেখুন:

Leave a Comment