Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

বাগদা চিংড়ি খামার প্রস্তুতকরণ। ৬ষ্ঠ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

বাগদা চিংড়ি খামার প্রস্তুতকরণ। ৬ষ্ঠ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাগদা চিংড়ি খামার প্রস্তুতকরণ। যা ” বাগদা চিংড়ির খামার প্রস্তুতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

বাগদা চিংড়ি খামার প্রস্তুতকরণ

 

 

পুকুর প্রস্তুতির উদ্দেশ্য

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে পুকুরের ভৌত অবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুষ্ঠু পুকুর প্রস্তুতির মাধ্যমে চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এছাড়াও চিংড়ি সহজেই পুকুরের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। চিংড়ি চাষে পুকুর প্রস্তুতিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো

ক) পুকুরের তলদেশ জৈব বর্জ্য পদার্থ মুক্ত হওয়ার কারণে পুকুরের তলদেশে অক্সিজেন গ্রহণকারী বিষাক্ত। পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায়।

খ) পুকুরের তলদেশ জীবাণুমুক্ত হয়।

গ) পুকুরের পানিতে খনিজ পদার্থ সহজে মুক্ত হতে পারে।

ঘ) পুকুরের তলদেশের মাটিতে সহজে সূর্যালোকে প্রবেশ করতে পারে। ফলে পুকুরের তলদেশের মাটিতে অণুজীবের ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ও জৈব পদার্থ সহজেই পচন ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

ঙ) চিংড়ি উৎপাদনে অবাঞ্চিত ক্ষতিকর শৈবালের ব্যাপকতা হ্রাস পায়।

চ) চিংড়ির জন্য ক্ষতিক মাছের ডিম, কাঁকড়ার লার্ভা ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর প্রাণীর উপস্থিতি বা উপদ্রব হ্রাস পায়।

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে পুকুর প্রস্তুতির মাধ্যমে চিংড়ির খাদ্য ও পুষ্টিকর পদার্থের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে যা পরাক্ষেভাবে চিংড়ি চাষে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

চিংড়ি চাষে পুকুর প্রভৃতির ধাপ

চিংড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশের গভীর কাদার স্তর চিংড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। চিংড়ি চাষ পদ্ধতি অধিক সম্পূরক খাদ্য নির্ভর হওয়ার কারণে পুকুরের তলদেশে গভীর কাদার সৃষ্টি হয়। এ কারণে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রতিবছর ফসল আহরণের পরপরই বা পুনরায় চিংড়ির পোনা মজুদের পূর্বেই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়।

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অধিক সার, খাদ্যে বর্জ্য পদার্থ ও প্ল্যাংকটন উৎপাদন সমৃদ্ধ পুকুর ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে ভালো নয়। কেননা এ ধরনের পুকুরের তলদেশে বর্জ্য পদার্থ অধঃক্ষেপনের মাধ্যমে অবায়বীয় গভীর পাকের সৃষ্টি হয়। অধিক অবায়বীয় জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পুকুর চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও উৎপাদনের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে।

কখনও কখনও এ ধরনের অধঃক্ষেপনকৃত পদার্থের কারণে চিংড়ি ও অন্যান্য জীবভরের মৃত্যু ও বিলুপ্তি হতে পারে বা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এ কারণেই চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই পুকুরের মাটির প্রকৃতি, পূর্ববর্তী বছরের উৎপাদনে পরিবেশগত বাধাসমূহ নির্ণয় করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।

নিচে পুকুর প্রস্তুতির ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলো-

ক. পুকুরের পানি বের করে ফেলা

সাধারণত চিংড়ি আহরণের সময় পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে বের করে ফেলতে হয়। এ সময় পুকুরের তলদেশ, ঢাল ও নালার অবস্থা, সুইস গেট প্রভৃতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়, যাতে পুকুরের ভৌত অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। পুকুরের তলদেশের গভীর পাক বা কালো মাটি পুকুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান বাধাস্বরূপ। পুকুরের তলদেশের কালো মাটি তুলে ফেলার ক্ষেত্রে নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে।

১. চিংড়ি আহরণের পরপরই প্রেসার পাইপের মাধ্যমে তীব্র স্রোত বা বেগে পানি বার বার প্রবেশ ও বের করার মাধ্যমে কালো মাটি অপসারণ করা যেতে পারে। এ কাজটি পুকুরের পানি বের করে দেয়ার সাথে সাথে করতে হবে। যাতে পুকুরের মাটি সূর্যালোকে শক্ত হয়ে যেতে না পারে।

২. শ্রম নির্ভর পদ্ধতিতে এ কার্য সম্পাদন করা যেতে পারে।

খ. পুকুর শুকানো

পুকুরে জলস্রোত দিয়ে বা শ্রম নির্ভর পদ্ধতিতে পুকুরের তলদেশের ব্য পদার্থ সরিয়ে ফেলার পর ১০-১৫ দিন সূর্যালোকে পুকুর এমনভাবে শুকাতে হয়, যাতে পুকুরের তলদেশের মাটিতে ২৫-৩০ সেমি পতীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। পুকুরের তলদেশের পতীর অঞ্চল শুকানোর ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন পাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ. মাটি চাষ

পুকুরের মাটি শুকানোর পর ১০-১৫ সেমি গভীর তলদেশের মাটি লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে ৩-৫ বার চাষ করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ বা পদার্থ সমৃদ্ধ স্থানসমূহ অধিক পতীর করে চাষ দেয়ার প্রয়োজন হয়। সাধারণত চাষের গভীরতা পুকুরের তলদেশের বর্জ্য পদার্থের গভীরতার উপর নির্ভর করে। পুকুরের তলদেশে চাষের ক্ষেত্রে ট্রাক্টর বা দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

ঘ. পাড় মেরামত

ঘের প্রস্তুত করার পূর্বেই পাড় মেরামত করা প্রয়োজন পাড়ে ততত ফেলতে হবে। গাড় ভাঙা থাকলে তা মাটি দিয়ে ভালোভাবে মেরামত করে নিতে হবে। সম্ভব হলে পাড়ে খাস লাগানো যেতে পারে। পাড়ের গর্ত বিভিন্ন। ক্ষতিকর প্রাণীয় আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।

ঙ. রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূরীকরণ

দুরীকরণ চিংড়ি চাষ একটি অত্যন্ত লাভজনক কার্যক্রম হলেও বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সময় চিংড়ি চাষে সফলতা নাও আসতে পারে। ব্যর্থতার মাঝে যে সমস্ত কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- পোনা মজুদের পূর্বে সঠিক নিয়মে পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর না করা। রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ চাষকৃত পুকুরে কী ক্ষতি করতে পারে এ ব্যাপারে অনেকের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। নিচে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ কী তা আলোচনা করা হলো:

 

 

রাক্ষুসে মাছ: যে সমস্ত মাছ সরাসরি অন্য মাছ বা চিংড়ি ধরে খায় তাদেরকে রাক্ষুসে মাছ বলে, যেমন- ফলি, টেংরা, বায়োল, ভেটকি, বেলে, শোল, পজার প্রভৃতি। এরা চাষকৃত চিড়ি বা চিংড়ির পিএল সরাসরি খেয়ে ফেলে, ফলে চিংড়ির উৎপাদন কমে যায়। নিচে কতিপয় রাক্ষুসে মাছের ছবিসহ নাম উল্লেখ করা হলো:

অবাঞ্চিত মাছঃ যে সমস্ত মাছ সরাসরি অন্য মাছকে খায় না কিন্তু চাষকৃত মাছের সাথে অক্সিজেন, খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা করে তাদেরকে অবাঞ্চিত মাছ বা আমাছা বলে, যেমন- পার্শে, তপসী, চান্দা, তেলাপিয়া, কাকিলা প্রভৃতি অন্যতম। পুকুরে এ ধরনের মাছ থাকলে খাদ্যের অপচয় হয় এবং উৎপাদন অনেক কমে যায়। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য অবাঞ্চিত মাছের নাম উল্লেখ করা হলো:

নিম্নলিখিত কারণে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ চিংড়ি চাষের ঘের/পুকুর থেকে দূর করা প্রয়োজনঃ

ক) রাক্ষুসে মাছ চাষকৃত মাছের পোনা খেয়ে ফেলে, ফলে উৎপাদন আশানুরূপ হয় না।

খ) পুকুরে মজুদকৃত চিংড়ির সঠিক রেকর্ড সংরক্ষণে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

গ) অবাঞ্চিত মাছ বা আমাছ চাষকৃত চিংড়ির খাদ্যে ভাগ বসায়। তাছাড়া চাষকৃত চিংড়ির সঙ্গে বাসস্থান ও অক্সিজেনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়েও প্রতিযোগিতা করে।

ঘ) উভয় প্রকার মাহই পুকুরে রোগ-জীবাণুর বাহক এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে, কারণ বিভিন্ন প্রকার মাছের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা এক নয়।

ঙ) উভয় প্রকার মাছের উপস্থিতিতেই চিংড়ির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়, ফলে লাভের অংশ কমে যায়।

চ) দেখা গেছে ১ কেজি রাক্ষুসে মাছ বড় হতে প্রায় ১০ কেজি চাষকৃত চিংড়ি খেয়ে ফেলে, আবার ১ কেজি আমাছ ১০ কেজি চাষযোগ্য মাছের খাদ্য খেয়ে ফেলে।

ঘের/পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ নিম্নেক্ত উপায়ে দূর করা যায়

ক) পানি শুকিয়ে,

খ) ঘন ফাঁসের জাল টেনে,

গ) জীবত টোপ ব্যবহার করে,

ঘ) খাবার দেয়ার পর ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে, এবং

ঙ) মাহ মারার ঔষধ (বিষ) প্রয়োগ করে।

ক) পানি শুকিয়ে: পুকুর হতে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূরীকরণের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো স্যালো মেশিন দ্বারা পানি সেচে পুকুর শুকিয়ে ফেলা। পুকুর শুকানোর পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে মৌসুমে পুকুর শুকানো হচ্ছে সে মৌসুম পুকুর শুকানোর জন্য উপযোগী কিনা।

কারণ পুকুর শুকানোর পরে কমপক্ষে ১৫ দিন রোদে রাখলে তার তলদেশ রোদে ফেটে যাবে, ফলে বিভিন্ন প্রকার বাজে গ্যাস দূর হয়ে যাবে। তলদেশে কাদার মধ্যে যে সমত রাক্ষুসে মাছ লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকে সে সম্ভাবনাও অনেকটা কমে যায়। এ কাজটি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে করলে খরচও অনেকটা কম হবে।

খ) ঘন ফাঁসের জাল টেনেঃ পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে এবং পুকুরের তলদেশ সমতল হলে সে সমস্ত পুকুরে যতদূর সম্ভব পানি কমিয়ে দিয়ে বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ বহুলাংশে দূর করা যেতে পারে। তবে যত ভালোভাবেই জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দূর করা হাকে না কেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু না কিছু মাছ থেকে যেতেই পারে।

তাই জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দমন করে যদি পুকুরে পোনা মজুদ করতে হয়। তাহলে অবশ্যই বড় সাইজের (৪-৬ ইঞ্চি) পোনা মজুদ করতে হবে।

গ) জীবত টোপ ব্যবহার করেঃ অনেক সময় জীবন্ত মাছকে বড়শিতে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে রাক্ষুসে মাছ যেমন- শোল, গজার, মাওর প্রভৃতি মাছ দুর করা হয়। যেহেতু এই জাতীয় মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের তাই ছোট মাছ, যেমন- পুঁটি, খলিসা, টেংরা প্রভৃতি মাছকে টোপ হিসেবে বড়শিতে গেথে দিয়ে রাতে পুকুরে দিয়ে রাখলে অনেক সময় এই জাতীয় মাছ তাদের সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী জীবন্ত মাছকে ভক্ষণ করার চেষ্টা করবে, কলে বড়শিতে আটকে যাবে।

ঘ) খাবার দেওয়ার পর ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে: এই পদ্ধতিতেও অনেক সময় রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যেতে পারে। পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশে খাদ্য প্রয়োগ করলে মাছ যখন খাদ্য গ্রহণের জন্য খাদ্য প্রয়োগকৃত অঞ্চলে যাবে তখন ঝাঁকি জালের মাধ্যমে খুব সহজেই তাদেরকে ধরে ফেলা যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতির ব্যবহার খুবই সীমিত এবং এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণভাবে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যায় না

ঙ) মাছ মারার ঔষধ (বিষ) প্রয়োগ করে: রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করার ক্ষেত্রে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে এর পরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো মাছ মারার ঔষধ (বিষ) প্রয়োগ করে তা দূর করা। ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিষের ধরন ও বিষ ক্রিয়ার মেয়াদকালের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে।

কারণ বাজারে এমন কিছু নিষিদ্ধ ও অননুমািেদত বিষ পাওয়া যায় যা ব্যবহারে আপাত দৃষ্টিতে অর্থ সাশ্রয় মনে হলেও পরিবেশ ও মানব দেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। নিচে বিভিন্ন প্রকার ঔষধের নাম, প্রয়োগ মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি দেয়া হলো:

১. রোটেনন: রোটেনন হচ্ছে ডেরিস নামক গুল্ম জাতীয় এক প্রকার গাছের মূল (শিকড়) থেকে তৈরি এক ধরনের পাউডার জাতীয় পদার্থ যা দেখতে বাদামি বর্ণের। এ গুল্ম সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। আমাদের দেশে সাধারণত এ জাতীয় গাছ জন্মায় না।

যদিও রোটেনন তরল ও পাউডার এ দুই অবস্থায় পাওয়া যায়, তবে আমাদের দেশে মূলত পাউডার জাতীয় রোটেনন পাওয়া যায় এবং ব্যবহৃত হয়। রোটেননের শক্তি মাত্রা এর মধ্যে বিদ্যমান মূল কার্যকর উপাদানের উপর নির্ভরশীল। বাজারে দু’ধরনের শক্তি সম্পন্ন রোটেনন পাওয়া যায়, যেমন- ৭% এবং ৯.১% শক্তি সম্পন্ন।

তবে ৯.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেননই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে রোটেনন এর মাত্রা কম প্রয়োজন হয়। তাই শীতকালে রোটেনন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গরমকালের চেয়ে বেশি পরিমাণে রোটেনন প্রয়োজন পড়ে।

প্রয়োগ মাত্রা: রোটেনন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ মাত্রা প্রজাতি, তাপমাত্রা এবং শক্তি মাত্রার উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে সচরাচর ৯.১% মাত্রার রোটেনন বেশি ব্যবহৃত হয়। রোটেননের প্রয়োগমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো:

শক্তি মাত্রা গ্রাম/শতক/ফুট পানি
9% ১৬-১৮
৯.১% ১৮-২৫

প্রয়োগ পদ্ধতি: পরিমাণমত রোটেনন পাউডার একটি পাত্রে নিয়ে অল্প অল্প করে পানি যাগে করে পেস্টের মত করে কাই তৈরি করতে হবে। অতঃপর উক্ত কাইকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ গুলে তরল করে এবং এক ভাগ ছোট ছোট বল তৈরি করে সমস্ত রোটেনন পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।

এরপর জাল টেনে পানি উলট পালট করে দিলে ভালো হয়। ১৫-২০ মিনিট পর মাছ ভাসতে শুরু করলে খুব দ্রুত জাল টেনে মাছ ধরে ফেলতে হবে। কারণ বেশি দেরি হলে মৃত মাছ পুকুরের তলায় ডুবে যাবে ও মাছ জালে উঠবে না। ভোর বেলায় রোটেনন প্রয়োগ করা ভালো, কারণ তখন পানিতে অক্সিজেন কম থাকে। এর ফলে রোটেনন এর বিষক্রিয়া বেশি কার্যকর হয়।

ব্রোটেনন প্রয়োগ করলে পুকুরে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়: পুকুরে যখন রোটেনন প্রয়োগ করা হয় তখন ঐ রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ পানি হতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কারণ মাছ যখন পানি হতে অক্সিজেন গ্রহণ করার নিমিত্ত নিঃশ্বাস নিতে থাকে, তখন পানিতে দ্রবীভূত রোটেনন এর বিষক্রিয়াদ্বারা মাছের ফুলকার ল্যামেলি আক্রান্ত হয়।

ফুলকায় যে গিল ল্যামেলি আছে সেই গিল ল্যামেলিগুলো ফেটে যায়। ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে দেহে পরিবাহিত হতে পারে না। অক্সিজেন পরিবহনের সেই মেকানিজম বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পেরে আস্তে আস্তে মারা যায়।

O,+Hb-HbO,

(অক্সিজেন + হিমোগ্লোবিন = অক্সিহিমোগ্লোবিন)

এছাড়াও বিষযুক্ত শাদি যখন নিঃশ্বাস-এর মাধ্যমে সরাসরি মাছের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে তখন অনুয়প প্রতিক্রিয়ায় মাছের অভ্যন্তরীণ অংশ, যেমন- পরিপাকতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, লিভার, ফুসফুস প্রভৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রক্তনালির দ্রুত ক্ষতিসাধন হয়। ফলে রক্ত সদালন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ও পরিশেষে মাহ মারা যায়।

২. ফলাটক্সিন/ফুইককস/সেলফল: এগুলো এক ধরনের কীটনাশক। বাজারে ৩ গ্রাম ওজনের ট্যাবলেট আকারে এগুলো পাওয়া যায়। পুকুরে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূরীকরণে এগুলো খুবই কার্যকর। তবে মানুষের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত বিধায় সতর্কতার সাথে এগুলো ব্যবহার করতে হয়।

প্রয়োগ মাত্রা: ১ টি ট্যাবলেট/শতক/ফুট।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ ট্যাবলেটগুলো সমানভাবে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দেয়ার পর জাল টেনে পানি উলট-পালট করে দিতে হবে। ট্যাবলেট প্রয়োগের ১-২ ঘন্টা পর মাছ মরে ভাসতে শুরু করলে জাল টেনে মাছ ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্বক্রিয়ার মেয়াদকাল: প্রায় ৭ দিন।

৩. ব্লিচিং পাউডারঃ যদিও এটা পানি বিশাধেনে ব্যবহূত হয়, তবুও এটাদ্বারা রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা বায়। পুকুরে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হলে আর চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

প্রয়োগ মাত্রা: ১ কেজি/শতক/ফুট পানি।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ পরিমাণমত ব্লিচিং পাউডার সুবিধাজনক কোনো পাত্রে পানি দিয়ে গুলে নিয়ে সমস্ত পুকুরে হিটিয়ে দিতে হবে। এ পাউডার সকালে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাউভার প্রয়োগের ২০-৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে শুরু করলে জাল টেনে মাজ ধরতে হবে।

বিশ্বক্রিয়ায় মেয়াদকাল: প্রায় ৭ দিন।

৪. চা বীজের খৈল: চা বীজের গুঁড়া হতে এটা তৈরি করা হয়। ঢা বীজের খৈল প্রথমে বিষ এবং পরে সার হিসেবে কাজ করে। এ পাউডারের মধ্যে স্যাপোনিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাছের রক্তের লোহিত কণিকাগুলোকে নষ্ট করে ফেলে, ফলে মাছ মারা যায়।

পানির তাপমাত্রা বেশি থাকলে এ বিষক্রিয়া তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তাপমাত্রা কম হলে এটা ধীরে ধীরে কাজু করে ফলে অনেক সময় ধরে এর কার্যকারিতা থাকে। তাই চা বীজের খৈল তাপমাত্রা বাড়ার আগে সকালের দিকে প্রয়োগ করা ভালো। বিষ প্রয়োপের ৩-৫ ঘণ্টার মধ্যেই মাছগুলো ভারসাম্য হারিয়ে ভাসতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়।

এটা প্রয়োগে মাছ ছাড়াও চিংড়ি চাষের জন্য ক্ষতিকর ব্যাঙ্কাচি, ছোট শামুক, জোক এবং কিছু কিছু পোকামাকড় মারা যায়। তবে চা বীজের খৈল চিংড়ির জন্য ক্ষতিকারক নয়, যেহেতু চিংড়ির রক্তে লোহিত কণিকা অনুপস্থিত।

প্রয়োগ মাত্রাঃ ১ কেজি/শতক/ফুট পানি।

প্রয়োগ পদ্ধতি: পরিমাণমত চা বীজের খৈল প্রথমে অল্প পানিতে গুলে নিয়ে তার সাথে আরও পানি মিশিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করে সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পাউডার প্রয়োগের ২০-৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে শুরু করলে জাল টেনে মাছ ধরতে হবে।

বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল: প্রায় ৩-৪ দিন।

৫. মহুয়া বীজের খৈলঃ মহুয়া বীজ হতে তেল নিষ্কাশনের পর যে খৈল অবশিষ্ট থাকে তা বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে স্যাপোনিন (৪-৬%) নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ বিদ্যমান থাকে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে এই গাছ সামান্য পরিমাণে জন্মে। এটাও চা বীজের খৈলের ন্যায় প্রথমে বিষ ও পরে সার হিসেবে কাজ করে। এটা প্রয়োগ করার ২ ঘণ্টার মধ্যেই বিষত্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং মাছ মরে ভারসাম্যহীনভাবে ভাসতে শুরু করে।

প্রয়োগ মাত্রা: ৩ কেজি/শতক/ফুট পানি।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ পরিমাণমত ময়া বীজের খৈল প্রথমে অল্প পানিতে গুলে নিয়ে তার সাথে আরও পানি মিশিয়ে পাতলা স্রবণ তৈরি করে প্রখর সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পাউডার প্রয়োগের ২০-৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে।

বিষক্রিয়ার মেয়াদকালঃ প্রায় ৩-৪ দিন।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা পদ্ধতি

বিষাক্ততা পরীক্ষার সময়

পুকুরে রেণু/পিএল মজুদ করার ১-২ দিন পূর্বে পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করার পদ্ধতিসমূহ হলঃ

পদ্ধতি-১: পানির বিষাক্ততা পরীক্ষার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাপ্তিয়ে তার মধ্যে অল্প পরিমাণে যে কোনো প্রেপু/চিংড়ির পিএল ছেড়ে ১২। বক্ষা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে । যদি এ সমজের মধ্যে অধিকাংশ জো/পিএল (৭০% বেঁচে থাকে) যায়া না যায়, তবে বুঝতে হবে পানিতে বিষাক্ততা সেই। এ অবস্থায় পুকুরে রেলু/পিএল মঞ্জুর করা যাবে। যদি এ সময়ের মধ্যে পুরুত্রে বেশি পরিমাণে ক্রেখু/পিএল মারা যায় তবে বুঝতে হবে পানিতে বিষাক্তভা আছে।

পদ্ধতি-২: যে পুকুরে রেন্টু/পিএল মজুদ করা হবে তার পানি একটি বালতিতে (১০-১৫ লিটার) নিয়ে পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করা যেকে পাত্রে। দু’টি বালকির একটিতে রেণু ছাড়া পুকুরের এবং অন্যটিতে টিউবওয়েল যা অন্য একটি ভালো গুরুয়েয় ১০-১৫ লিটার পানি নিভে হবে। পুকুর থেকে গালি দেয়ার সময় উপল্প, মধ্য ও নিচের পানি ভালভাবে মিশ্রিত করে নিতে হবে। বালতি দু টিকে অল্প কিছু রেণু ছেড়ে ৩-৪ বণ্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

দু’টি বালজিতে একই সমন্ত্রে সমান সংখ্যক পোনা মারা গেলে বুঝতে হবে বিষাক্ততা সেই। যদি রেণু ছাড়ায় পুকুজের পানিযুক্ত বালঞ্চিতে অধিকাল সোমা/সিএল বেঁচে খাঁকে তা হলেও বুঝতে হবে পানিতে বিষাক্ততা নেই। পষ্টীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয় যে, পুকুরের পানিতে বিষাক্ততা আছে তাহলে কোনো অবস্থাভেই পুকুরে রেখ/পিএল মজুদ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে যকদিন পর্যন্ত পাপিয় বিষাক্ততা শেষ না হয় ততদিন অপেক্ষা করা উচিত।

চ. চিংড়ি চাষে চুন প্রয়োগ

চুন হলো ক্যালসিয়ামযুক্ত অজৈব যৌগ, যা অম্লত্ব হ্রাসে প্রশমনে, প্রাণীর দৈহিক কাঠামাত গঠন ও প্রোপজীবাণু বাংল করতে সহায়তা করে। চুদের মধ্যে ক্যালসিয়াস ম্যাপসেনিয়ামের অভাক লায়ন থাকে যা পালির অম্লত্বকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে।

চুন প্রয়োগের উপকারিতা

পুরুত্বে চুন প্রয়োগ করলে একসঙ্গে অনেকগুলো উপকার পাওয়া যায়। এয় প্রধান প্রধান গুণাবলি নিচে উল্লেখ করা হলো

ক) চুন চিংড়ি চাদের পরিবেশ অর্থাৎ মাটি ও পানির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বকে নিরপেক্ষ করে। পানির অম্লীয় ও ক্ষারকীয় গুণকে ভারলায্যের মধ্যে স্তাখে। পালিয় পিএইচ চিংড়ি চাষের অনুকূলে রাখতে সহারক ভূমিকা পালন করে। পানির পিএইচ ৭.৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকলে সেই পুকুত্রের চিংড়ির বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়।

খ) চুন প্রয়োগের ফলে পুকুরের মাটি থেকে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকারক উপাদানসমূহ তথা খনিজ পদার্থ বা। মিনারেলস (যা পানির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক) অতি সহজেই যুক্ত হয়ে পানিতে মিশে। ফলে পুকুরের স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়, যা চিংড়ির প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

গ) চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর, এমন ধরনের রোগ বিস্তারের উৎস, রোগজীবাণু এবং রোগজীবাণু পরিবাহক পরজীবীসমূহকে চুন ধ্বংস করে তথা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।

ঘ) চুন পানিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত জৈব কণা ও কালাকে অধঃক্ষেপ না করে পানিকে পরিষ্কার রাখতে ভথাদূর করতে সহায়তা করে। পুকুরে পর্যাপ্ত আলোর অনুপ্রবেশ নিশ্চিত হয়, ফলে সালাকেসংশেষণের মাধ্যমে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

ঙ) চুন পুকুরের ডলদেশে সঞ্চিত দূষিত গ্যাসসমূহ দূর করে।

চ) চুনের ক্যালসিয়াম চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধিতে বিশেষ করে প্রজনন কালে ভূণের বর্ধনে ও খোসা গঠনে সহায়তা করে।

ছ) চুন পানিতে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তথা পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন ও জুপ্ল্যাংকটন তৈরি করে পানির বর্ণ সবুজ করতে সহায়তা করে।

জ) চুন প্রয়োগের ফলে জৈর পদার্থসমূহ ভোজ গিয়ে মাটি ও পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

ঝ) প্রয়োজনীয় উপকারী জীবাণুর বংশ বৃদ্ধিতে জৈব পদার্থসমূহের সুষ্ঠু পচনের জন্য চুন সহায়তা করে।

ঞ) চুন পুকুরের পানিতে তত্ত্বময় অ্যালজি থেকে মুক্ত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ট) সালাকেসংশেষণের জন্য পর্যাপ্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরির মাধ্যমে চুন পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতার মাত্রা কমিয়ে আনে। সালাকেসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধির মাধ্যমে চুন পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িতে দেয়।

ঠ) চুন প্রয়োগের ফলে জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়া দ্রুত হয় এবং পুকুরের তলদেশ থেকে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে পুকুরের কলার মাটি নিরপেক্ষ হয়।

ড) চুন পুকুরের পানিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের ক্ষতিকর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় এবং এদের বিষক্রিয়াও নষ্ট করে দেয়। এর ফলে পুকুরের স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।

ঢ) চুন প্ল্যাংকটনের বৃদ্ধির জন্য কাদায় আবদ্ধ ফনফরানকে মুক্ত করে দেয়।

ণ) চুন মাটি ও পানির মধ্যে সালফিউরিক অ্যাসিডের মত অত্যন্ত ক্ষতিকারক পদার্থের স্থায়ী বন্ধ হওয়াকে প্রতিরোধ করে।

ত) চুন বাফার হিসেবে (কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সংরক্ষণাগার, কখনও শেষ হয় না) কাজ করে অর্থাৎ চুন এর বাফারিং প্রক্রিয়ায় পুকুরের পানির কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সাথে মিশে বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম নাইকার্বোনেট তৈরি করে এবং এই ক্যালসিয়াম বাইকার্বোনেট বাফার হিসেবে কাজ করে।

ফলে পুকুরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর উৎপাদক হিসেবে কাজ করতে পারে না। এছাড়াও বাইকার্বোনেট পুকুরের পিএইচকে স্থির অবস্থায় রাখতে সহায়তা করে। উল্লেখ্য বাইকার্বনেট কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বাফায় স্টক হিসেবে কাজ করে তথ্য এসিডিটি, অ্যালকালিনিটি নিয়ন্ত্রণ করে।

তাই সালাফেদংশেষণের জন্য কখনত কার্বন-ডাই-অক্সহিত এর ঘাটতি পড়ে না এবং ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পানিতে অদ্রবণীয় বিধায় অদ্রবীভূত অবস্থায় পুকুরের তলায় তলানি পড়ে। কার্বন ডাই-অক্সাইড একে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে দ্রবণীয় ক্যালসিয়াম বাইকার্বোনেটে পরিণত করে, যা মাছ চাষের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চুনের প্রকারভেদ

বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়, যেমন- পাথুরে চুন, পোড়া চুন, কলিচুন ইত্যাদি। এছাড়াও শামুক ও ঝিনুকের খোলস পুড়িয়ে এক ধরনের চুন পাওয়া যায়। তবে এগুলো চিংড়ি চাষের পুকুরে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। নিচের সারণিতে চুনের প্রকারভেদ ও উৎস উল্লেখ করা হলো:

সারণি: চুনের প্রকারভেদ ও তার উৎস

ক্রমিক নং চুনের নাম উৎস
পাথুরে চুন খনিতে প্রাপ্ত, বাজারে পাওয়া যায় না
পোড়া চুন খনিতে প্রাপ্ত, পোড়ানোর পর বাজার পাওয়া যায়
কলি চুন পোড়া চুন আর্দ্রতাযুক্ত হয়ে বা পানিতে গোলানোর পর প্রাপ্ত চুন
ডলোমাইট প্রক্রিয়াজাতকত যৌগ চুন
জিপসাম প্রক্রিয়াজাতকত যৌগ চুন

প্রয়োগ মাত্রা: পুকুরের তলদেশের মাটির প্রকারভেদ, পুকুরের বয়স, পানির পিএইচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। কাদা মাটি, এঁটেল মাটি ও লাল মাটির পুকুরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে একটু বেশি চুন প্রয়োজন হয়। পুকুর দীর্ঘ দিন আপাছা ও পচা আবর্জনায় পূর্ণ থাকলে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে চুন বেশি দরকার হয়। সাধারণত শতাংশ প্রতি এক কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হয়। পৌড়া চুনের ক্ষতা পাথুরে চুনের দ্বিগুণ এবং কলিচুনের ক্ষমতা পাপ্পুরে চুনের দেড় গুণ। নিচে পিএইচ এর উপর ভিত্তি করে চুন প্রয়োগের মাত্রা দেয়া হলো:

পিএইচ যান ৩-৫ এর মধ্যে ৫-৬ এর মধ্যে ৬-৭ এর মধ্যে
পোড়া চুমের পরিমাণ ৬ কেজি/ শতাংশ ৪ কেজি/ শতাংশ ১-২ কেজি/ শতাংশ

প্রয়োগ পদ্ধতি: পুকুর তৈরির সময় প্রয়োজনীয় চুন একটি মাটির চাড়ি বা গামলার মধ্যে কমপক্ষে ১২-২৪ ঘণ্টা আগে গুলে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় চুন পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন। ব্যবহারের সময়কাল হলো চাষ দেয়ার ২-৩ দিন পর অথবা বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর।

 

 

সতর্কতা

⧪ পোড়ো চুন এবং কলি চুন অত্যন্ত ক্ষারীয় তাই এটি ব্যবহারে পিএইচ দ্রুত বেড়ে যায়, এজন্য পুকুর শুকানো অবস্থায় তা ব্যবহার করা নিরাপদ।

⧪ চুন ব্যবহারের সময় নাক ও মুখ গামছা দিয়ে বেধে নিতে হবে এবং বাতাসের অনুকূলে ছিটাতে হবে।

⧪ চুন গুলানোর সময় তাপ সৃষ্টি হয় সেজন্য পাস্টিকের বালতিতে চুন গুলানো যাবে না।

⧪ চুন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। ব্যবহারের পর পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version