আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ির বৃদ্ধি ও খোলসছাড়া । যা ” গলদা চিংড়ির জীববিদ্যা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
চিংড়ির বৃদ্ধি ও খোলসছাড়া
চিংড়ির বৃদ্ধি ও খোলসছাড়া (Growth and Moulting)
গলদা চিংড়ির বৃদ্ধি নিরবচ্ছিন্ন নয়। চিংড়ির দেহ খোলস দ্বারা আবৃত থাকে। এই খোলস পরিবর্তনের মাধ্যমেই চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে। চিংড়ির বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে পুরাতন খোলস খসে পড়ে এবং নতুন খোলসের সৃষ্টি হয়। চিংড়ির এই খোলস বদলানোর প্রক্রিয়াকে একডাইসিস (Ecdysis) বলে।
খোলস বদলানোর প্রক্রিয়া সাধারণত রাতেই ঘটে। ছোট অবস্থায় নতুন খোলস শক্ত হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে এবং বড় অবস্থায় শক্ত হতে ১-২ দিন সময় লাগে। খোলস বদলানোর সময় চিংড়ি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল থাকে। খাদ্য, আবহাওয়া, পরিবেশ, পানির গুণাগুণ, তাপমাত্রা, রোগবালাই প্রভৃতির ওপর চিংড়ির খোলস বদলানো নির্ভরশীল।
লার্ভা অবস্থায় এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চিংড়ি এগার বার খোলস পরিবর্তন করে থাকে। গলদা-চিংড়ি জুভেনাইল অবস্থায় ৫-১০ দিন অন্তর একবার এবং বড় অবস্থায় ২০-৪০ দিনে একবার খোলস ছাড়ে। চিংড়ির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে খোলস পরিবর্তনের সময়ের ব্যবধানও বাড়তে থাকে। প্রায় চার বৎসর বয়সে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি সমাপ্ত হয়। গলদা-চিংড়ির আয়ুষ্কাল সাধারণত ৩-৪ বছর হয়ে থাকে।
স্ত্রী ও পুরুষ গলদা চিংড়ির পার্থক্য
স্ত্রী গলদার চেয়ে পুরুষ গলদা-চিংড়ি বেশি বাড়ে, তাই একই বয়সের পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়ির চেয়ে আকারে খানিকটা বড় হয়। পুরুষ চিংড়ির শিরোবক্ষ (Cephalothorax) আকারে মোটা এবং বড় হয় আর উদরাঞ্চল (Abdomen) অপেক্ষাকৃত সরু দেখায়। অপরদিকে স্ত্রী চিংড়ির মাথা ও দ্বিতীয় বাহু অপেক্ষাকৃত ছোট থাকে এবং উদরাঞ্চলের তলারদিকে ডিমধারণের জন্য নিম্নেদর অপেক্ষাকৃত চওড়া হয়।
পুরুষ চিংড়ির দ্বিতীয় ভ্রমণপদ লম্বা, মোটা, রঙিন, কন্টকযুক্ত এবং চিমটা বিশিষ্ট। এই দ্বিতীয় বাহুর দ্বারা পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়িকে সঙ্গমকালে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গনে আবদ্ধ রাখে।
পুরুষ চিংড়ির প্রথম উদর খন্ডের বুকের দিকে মাঝখানে একটা ছোট কাটার মত দেখা যায় যা স্ত্রী চিংড়ির থাকে না। পুরুষ চিংড়ির দ্বিতীয় সন্তরণপদের ভিতরের দিকের পত্রের (Endopodite) গোড়ায় লোমের মত অ্যাপেন্ডিক্স ম্যাসকুলিনা (Appendix masculina) থাকে। জুভেনাইল অবস্থায় এই এ্যাপেন্ডিক্স ম্যাসকুলিনা দেখে পুরষ চিংড়ি শনাক্ত করা যায়। স্ত্রী চিংডির এ্যাপেন্ডিক্স ম্যাসকলিনা থাকে না।
স্ত্রী চিংড়ির পিঠের খোলসগুলো পুরুষ চিংড়ি অপেক্ষা বড় হয় এবং উভয় দিকে নেমে এসে ডিমগুলো ঢেকে রাখতে সাহায্য করে।
পুরুষ চিংড়ির জনন ছিদ্র পঞ্চম চলনপদের গোড়ায়, আর স্ত্রী চিংড়ির জনন ছিদ্র তৃতীয় চলনপদের গোড়ায় অবস্থিত।
পরিপক্ক স্ত্রী চিংড়ির মাখার দিকে ক্যারাপেসের নিচে ও পার্শ্বে গোলাপি/কমলা রং এর আভা দেখে ওভারির অভ্যন্তরে ডিমের উপস্থিতি বুঝা যায়। কিনতু পুরুষ চিংড়ির ওভারি থাকে না। পুরুষ গলদা চিংড়ির ৫ম জোড়া চলনপদের দুইটি গোড়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব স্ত্রী গলদা চিংড়ি অপেক্ষা সরু হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের পুরুষ গলদা চিংড়ি
প্রকৃতিতে সাধারণত তিন ধরনের পুরুষ গলদা চিংড়ি পাওয়া যায় যেমন-
১. নীল নখর (Blue claw) বিশিষ্ট পুরুষ চিংড়ি
এগুলো বড় আকৃতি বিশিষ্ট। এদের নম্বর ও দেহের অনুপাত ১.৬ ০.১। এ ধরনের পুরুষ গলদা চিংড়ির আচরণ রাজকীয়, মিলন পদ্ধতি জটিল এবং বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত ধীর। এদের স্বজাতিভোজিতা অত্যন্ত প্রকট।
২. কদলা দখর (Orange claw) বিশিষ্ট পুরুন চিংড়ি
এটি নীল নখরের মধ্যাকৃতির চেয়ে বড় এবং কমলা রঙের নখর বিশিষ্ট। এদের নখর ও দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.০± ০.০৫। এদেয় ডিম শুক্রাণু যারা নিষিক্তকরণের হার তুলনামূলকভাবে কম, কিনতু দৈহিক বৃদ্ধি খুব দ্রুত। এদের স্বজাতিভোজিতা নীল নখর বিশিষ্ট গুরুম চিংড়ি অপেক্ষা ভূলনামূলকভাবে কম।
৩. দুদ্রাকৃতির নীল নখর (Small Blue claw) বিশিষ্ট পুরুস্ব চিংড়ি
এ ধরনের পুরুষ চিংড়ি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। এদের দেহের নখর কাটাবিহীন পরিষ্কার এবং নখর ও দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ০.৫২০.১। পুরুষ খললা ও স্ত্রী গলদার সাথে মিলনের সময়, “সর্প মিলন” কৌশল (Snake mating strategy) অবলম্বন করে। এদের দেহের বৃদ্ধির হায় জিন ধরনের পুরুষ চিংড়ির মধ্যে সবচেয়ে কম। এদের স্বজাতিভোজিতাও তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম।
বিভিন্ন ধরনের স্ত্রী গলদা চিংড়ি
প্রকৃতিতে স্ত্রী গলদা চিংড়িও সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন
১. ভার্জিন স্ত্রী গলদা চিংড়ি
– ওভারি পরিপত্ত্ব নয় বা ডিম বহন করছে না এমন স্ত্রী গলদা চিংড়ি
২. ডিম্ববাহী স্ত্রী গলদা চিংড়ি
৩. উন্মুক্ত ডিম্বৎলি বিশিষ্ট স্ত্রী গলদা চিংড়ি
– ডিম বহুন করছে এমন স্ত্রী গলদা চিংড়ি
– ডিম ছেড়ে দিয়েছে এমন স্ত্রী গলদা চিংড়ি
-স্ত্রী গলদা-চিংড়িগুলো পুরুষ গলদা চিংড়ি অপেক্ষা কম জাত্রাসী এবং কম স্বজাতিভোজী হয়ে থাকে।
আরও দেখুনঃ