চিংড়ির বক্ষ উপাঙ্গসমূহ | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ির বক্ষ উপাঙ্গসমূহ । যা ” গলদা চিংড়ির জীববিদ্যা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

চিংড়ির বক্ষ উপাঙ্গসমূহ

 

চিংড়ির বক্ষ উপাঙ্গসমূহ | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

 

 

চিংড়ির বক্ষ উপালসমূহ (Thoracic Appendages)

চিংড়ির বক্ষদেশে মোট আট জোড়া উপাঙ্গ অবস্থিত। এর মধ্যে প্রথম তিন জোড়া উপাদকে ম্যাক্সিলিপেড (Maxilliped) এবং পরবর্তী পাঁচ জোড়াকে চলনপদ (Walking legs) বলে।

১. প্রথম ম্যাক্সিশিপেডঃ এই উপাঙ্গগুলো সর্বাপেক্ষা ছোট। প্রথম ম্যাক্সিলিপেড পাতলা এবং ফাইলোপডিয়াম ধরনের। প্রথম ম্যাক্সিলিপেড খাদ্য ধরতে এবং শ্বসনকার্যে ব্যবহৃত হয়।

২. দ্বিতীয় ম্যাক্সিপিপেডঃ দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেডের কক্সা ছোট এবং বাইরের দিকে এপিপডাইট ও ফুলকা অবস্থিত। এক্সোপডাইট লম্বা এবং সরু। দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড স্পর্শ ইন্দ্রিয়, খাদ্য ধারণ ও শ্বসনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

৩. তৃতীয় ম্যাক্সিশিপেডঃ এই উপাঙ্গটি আকারে বেশ বড় এবং দেখতে অনেকটা চলন উপাদের মত। তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড চিংড়ির স্পর্শ ইন্দ্রিয়, খাদ্য ধরা এবং শ্বসন কাজে ব্যবহৃত হয়।

চলনপদ (Walking legs): চিংড়ির দেহে পাঁচ জোড়া চলনপদ আছে। চলন পদের কোনোটি চিমটাযুক্ত এবং কোনটি চিমটাবিষীন। চিংড়ির চতুর্থ চলনপদকে আদর্শ চলনপদ বলা হয়। সন্ধিযুক্ত প্রপোডাইট এবং পাঁচটি সন্ধিযুক্ত এন্ডোপোভাইট নিয়ে চলনপদ গঠিত। চিংড়ির চলনপদে এক্সোগোডাইট ও এপিপডাইট খাকে না।

প্রথম ও দ্বিতীয় চলন পদ চিমটাযুক্ত। এই উপাঙ্গের প্রোপডাস লম্বা হয়ে ডেকটাইলাসের শেষ প্রান্তে চিমটার আকার ধারণ করে। এই চিমটার অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ নখযুক্ত। পলদা চিংড়ি ১ম ও ২য় পদের চিমটার সাহায্যে খাদ্য ধরা, আত্মত্মরক্ষা ও আক্রমণমূলক কাজ করে থাকে।

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম চলনপদ সাধারণ ধরনের এবং চিমটাবিহীন হয়ে থাকে। স্ত্রী চিংড়ির তৃতীয় চলন উপাঙ্গের গোড়ায় কক্সা নামক অংশে স্ত্রী জনন ছিদ্র এবং পুরুষ চিংড়ির পঞ্চম চলন উপাঙ্গের কক্সার গোড়ায় পুংজনন ছিদ্র অবস্থিত। একই বয়সের পুরুষ চিংড়ির দ্বিতীয় চলনপল স্ত্রী চিংড়ির তুলনায় বেশি উজ্জ্বল, আকারে বড় এবং চিমটা অংশে বেশি কাঁটা দেখা যায়।

উদর উপাঙ্গ (Abdominal appendages): শিরোবক্ষের পরের দেহ অংশকে উদর বলা হয়। উদরের শেষ ভাগ ক্রমশ সরু হয়ে শেষ হয়। চিংড়ির উদরে মোট ছয় জোড়া উপাঙ্গ আছে। উদরের সব করটি উপাঙ্গই সাঁতার কাটার কাজে ব্যবহৃত হয় বলে এদেরকে সন্তরণপদ (Swimmerets) বলা হয়। এরা প্লিওপড (Pleopods) নামেও পরিচিত।

তৃতীয় উদর উপাঙ্গ চিংড়ির আদর্শ সন্তরণ উপাঙ্গ হিসেবে পরিচিত। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী গলদা চিংড়ি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সত্তরণপদের সাহায্যে ডিম বহন করে থাকে। ষষ্ঠ উদর উপাদটি টেলসনের পাশে অবস্থিত। এই উপাদেয় কক্সা ও বেসিস একত্রিত হয়ে ত্রিকোণাকৃতির খন্ডের সৃষ্টি করে। এই উপাদকে ইউরোপড বা পুচ্ছ পাখনা বলে। পুচ্ছ পাখনা সাঁতার কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পাখনার সাহায্যে চিংড়ি প্রয়োজনে পিছনের দিকে দ্রুত চলে যেতে পারে।

চিংড়ির বিভিন্ন উপাঙ্গের কাজ:

 

সজ্ঞাউপাঙ্গউপাঙ্গের কাজ
মাথাশুঙ্গাস্বাদু ও স্পর্শ
শুক্রাণু

পুঞ্জাক্ষি

দেহের ভারসাম্যতা, স্বাদু ও স্পর্শ

তীব্র আলোতে ও স্তিমিত বা অস্পষ্ট আলোতে দেখতে সহায়তা করে

রোস্ট্রামআত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়
ম্যান্ডিবুল

ম্যাক্সিলুলা

ম্যাক্সিলা

খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য চিবানো ও খাদ্য নাড়াচাড়ার কাজে সাহায্য করে
প্রথম ম্যাক্সিলিপেড

দ্বিতীয় ম্যাজিলিশেড

তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড

স্পর্শ, বাদ, খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য টুকরা ও মুখ থেকে বর্জিত খাদ্যাংশ

দূরীকরণে ও শ্বাসকার্যে সহায়তা করে

বুকপ্রথম চলন পদ

দ্বিতীয় চলন পদ

তৃতীয় চলম পদ

চতুর্থ চলন পদ

পঞ্চম চলন পদ

খাদ্য আঁকড়িয়ে ধরা এবং আত্মরক্ষা ও হাঁটার কাজ করে ফুলকাতে

পানি সরবরাহ ও শ্বসন কাজে সহায়তা করে

উদরপ্রথম সন্তরণ পদ

দ্বিতীয় সন্তরণ পদ

তৃতীয় সন্তরণ পদ

চতুর্থ সন্তরণ পদ

পঞ্চম সন্তরণ পদ

স্ত্রী চিংড়ির শুরু স্থানান্তরে কাজ করে। সত্তরণ কাজে সহায়তা করে

পানি সংবহনে সহায়তা কন

সন্তরণে কাজ করে

ডিম রক্ষায় কাজ করে

পুচ্ছ পদসন্তরণ কাজে সহায়তা করে প্রয়োজনে পিছনের দিকে চলে যেতে সহায়তা করে।

 

গলদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ গঠন ও অঙ্গসমূহ

দেহের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্রের কার্যকারিতার ফলে চিংড়ি জীবনধারণ করে থাকে। চিংড়ির অভ্যন্তরীণ অঙ্গসংস্থান প্রধানত পুষ্টিকত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসনতন, রেচনতন্ত্র ও জননতন্ত্র নিয়ে পঠিত।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

চিংড়ির পুষ্টিত্তর (Digestive system)

যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চিংড়ির পুষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে তাদের সমষ্টিকে চিংড়ির পুষ্টিতন্ত্র বলা হয়। চিংড়ির পুষ্টিতন্ত্র সাধারণত পরিপাকনালী ও হেপাটোপ্যানক্রিয়াস নামক পরিপাক গ্রন্থির সমন্বয়ে পঠিত। পরিপাকনালী মুখগহবর থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। পরিপাকনালী প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা-

ক) অর্ধপরিপাকনালী (Forgut)

খ) মধ্য পরিপাকনালী (Midgut)

গ) পশ্চাৎ পরিপাকনালী (Hind gut)।

ক) অর্ধপরিপাকনালী (Forgat): মুখ, মুখগহবর, অন্ননালী ও পাকস্থলী নিয়ে অত্রপরিপাকনালী গঠিত।

মুখ (Mouth): মজক খড়ের নিচের দিকে মুখের অবস্থান। এর অগ্রতাপে উর্ধ্বের্ণায় বা লেব্রাম এবং পশ্চাৎ দিকে নিপ্লোষ্ঠ বা লেবিয়াম অবস্থিত। এছাড়া ম্যান্ডিবুলের দুই পার্শ্বে দুটি ইনসিজর প্রসেস থাকে। নিম্নোর্ভের উতয় পার্শ্বে দুটি প্রশস্ত অংশ থাকে যা প্যারাগনাখা (Paradnatha) নামে পরিচিত।

মুখ গহ্বর (Buccal cavity): মুখের পিছনেই মুখ গহ্বর অবস্থিত। মুখ গহ্বরের দুই পাশে ম্যান্ডিবুলের মোলার প্রসেস থাকে, এর সাহায্যে খাদ্যবস্তু মুখ গহবরে পেষিত বা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।

অন্ননালী (Oesophagus): এটা পেশিযুক্ত মোটা নালীবিশেষ যা মুখ গহবরের পিছন থেকে শুরু হয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করেছে। এই প্রবেশপথে কপাটিকা থাকে। এর ফলে খাদ্যবস্তু একবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে আর অন্ননালীতে ফিরে আসতে পারে না।

পাকস্থলী (Stomach): পরিপাকনালীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের থলিটির নাম পাকস্থলী। পাকস্থলী চিংড়ির শিরোবক্ষের বেশির ভাগ স্থান দখল করে থাকে। পাকস্থলী প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত। যথা-

১) কার্ডিয়াক পাকস্থলী ও

২) পাইলোরিক পাকস্থলী।

খ) মধ্য পরিপাকনালী (Mid gut)

পাইলোরিক পাকস্থলীর পরবর্তী ভাগ থেকে মধ্য পরিপাকনালী শুরু। এই নালীটি লম্বা, সরু, সোজা ও নলাকৃতির এবং দেহের মাঝামাঝি স্থান বরাবর পিছনের দিকে ষষ্ঠ উদর খন্ডক পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্য পরিপাকনালীর ভেতরের দেয়াল এপিথেলিয়াম স্তর দ্বারা আবৃত এবং এর পিছনের অংশ লম্বালম্বি অসংখ্য ভাঁজ দ্বারা সজ্জিত থাকে।

গ) পশ্চাৎ পরিপাকনালী (Hind gut)

মধ্য পরিপাকনালীর পরবর্তী অংশকে পশ্চাৎ পরিপাকনালী বলে এবং এই নালী পায়ু পর্যন্ত বিস্তত। পরিপাকনালীর এই অংশ স্ফীত হয়ে পুরু মাংসপেশী দ্বারা গঠিত ছোট থলিতে পরিণত হয়েছে। এই থলিকে মলাশয় বা রেকটাম (Rectum) বলে। এই মলাশয় সর্বশেষ উদর উপাঙ্গ দুটির মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র পথে উন্মুক্ত হয়। এই পথকে পায়ুপথ (anus) বলে। পায়ুপথে মল দেহের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

 

 

যকৃত-অগ্নাশয় গ্রন্থি (Hepatopancreas)

শিরোবক্ষের গহবরে কমলা রং এর এক প্রকার অঙ্গ দেখা যায়, একে যকৃত-অগ্নাশয় গ্রন্থি বলে। এই অঙ্গটি কার্ডিয়াক পাকস্থলীর শেষ অংশ, পার্শ্বদেশ, পাইলোরিক পাকস্থলী ও মধ্য অন্ননালীর কিছু অংশকে ঢেকে রাখে। হেপাটোপ্যানক্রিয়াস প্রধানত পাচক রস নিঃসরণ, খাদ্যরস শোষণ এবং গ্লাইকোজেন ও ফ্যাট প্রভৃতি সঞ্চয় করে রাখে। এই গ্রন্থি যকৃত-অগ্নাশয় উভয়ের কাজ করে বলে একে হেপাটোপ্যানক্রিয়াস বা যকৃৎ-অগ্নাশয় গ্রন্থি বলে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment