বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা | অধ্যায়-৩ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা । যা ” বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা

 

বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা | অধ্যায়-৩ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আধা লোনা বা স্বল্প লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। এ অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির গুণাবলি বাগদা চিংড়ি চাষের সহায়ক। বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার কাছাকাছি বেইজলাইন থেকে সাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত প্রায় ১,৬৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত একানত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সামুদ্রিক জলসম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশের লোনা পানিতে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। বাগদা চিংড়ি চাষ লাভজনক বিধায় দিন দিন বাগদা চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চিংড়ির বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে সত্তর থেকে আশির দশকের মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিংড়ি চাষি ও খামার স্থাপনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সত্তর দশকের শেষের দিকে খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রথমে চিংড়ি চাষ শুরু হয়।

অধিক লাভজনক শিল্প হিসেবে চিংড়ি সম্পদ শ্বানীয় জনসাধারণের কাছে বিবেচিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে চিংড়ির চাষ যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, পিরাজেপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভালো অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তার লাভ করে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৮৭ সালে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্প বাতবায়নের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকায় প্রথম চিংড়ি হ্যাচারি স্থাপনসহ ১১ একর বিশিষ্ট ১১৮টি প্রকল্পের একটি চিংড়ি এস্টেট (cstate) ও একটি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে এই হ্যাচারি স্থাপন্দের মাধ্যমেই প্রথন ব্যগলা চিংড়ির পোল্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বাগদা চিংড়ির হ্যাচারি

হ্যাচারি বিভিন্ন আকারের হতে পারে, যেমন- ছোট, মধ্যম ও বড় আকারের হ্যাচারি। নিচে বিভিন্ন আকারের হ্যাচারির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো

ক. ছোট আকারের হ্যাচারি

এই ধরনের হ্যাচারিকে ব্যাকইয়ার্ড (Backyard/mon-and-pop) হ্যাচারিও বলে। সাধারণত টেকনিক্যাল জনবল ছাড়াই এসব হ্যাচারি পরিচালিত হয়। হ্যাচারিতে ছোট ছোট ট্যাংক (১০ টনের কম) ব্যবহুত হয়। শুধু পি এবং পিএল উৎপাদনের সময় গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কম ঘনত্বে ব্যবহৃত ও অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়া, রোগ-বালাই ও পানিঘটিত কারণে হ্যাচারির উৎপাদন অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়।

পিএল বাঁচার হার প্রায় ০-৯০%। পিএল বাঁচার হার নির্ভর করে হ্যাচারি অপারেটরের দক্ষতা, মজুদ ঘনত্ব তাপমাত্রার উপর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে এ হ্যাচারি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সফলতা পেয়েছে বিশেষ করে থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ চীন। থাইল্যান্ডে হাজারের অধিক ব্যাকইয়ার্ড হ্যাচারি বিদ্যমান।

খ. মধ্যম আকারের হ্যাচারি

এই হ্যাচারির ডিজাইন জাপানে আবিষ্কৃত হয়েছে। মধ্যম আকারের এই হ্যাচারি তাইওয়ানেও বেশ জনপ্রিয়। এই ধরনের হ্যাচারিকে গ্রিনওয়াটার (Greenwater) হ্যাচারি বলে। এখানে ট্যাংকের আকার অনেক বড়, কম মজুদ ঘনত্ব, কম পানি পরিবর্তন এবং ক্রম তৈরি হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংশ এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় পুষ্টিকর উপাদান বা ব্যাকটেরিয়া যাগে করা হয়। পোনা বাঁচার হার প্রায় ৪০ শতাংশ বা তার কম।

 

বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা | অধ্যায়-৩ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

গ. বড় আকারের হ্যাচারি

বড় আকারের হ্যাচারি তৈরিতে কয়েক লক্ষ থেকে কোটি পর্যন্ত টাকা ব্যয় হতে পারে। এই হ্যাচারিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সর্বোচ্চ কারিগরি সুবিধা থাকে, যাতে গুণগতমান সম্পন্ন অধিক পোনা উৎপাদন নিশ্চিত হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল মেরিন ফিসারিজ সার্ভিস এর গ্যালভেস্টন ল্যাবরেটরি থেকে এ হ্যাচারির প্রচলন হয়েছে বলে জানা যায়।

এ হ্যাচারি পরিচালনার জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান দরকার হয়, কারণ এখানে বড় আকারের ট্যাংক (১৫ থেকে ৩০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন), পরিস্ফুটিত পানি, সর্বোচ্চ মজুদ ঘনত্ব, সর্বোচ্চ পানি পরিবর্তন হার এবং সারা বছর পোনা উৎপাদনের লক্ষ্য থাকে। এখানে পোনা বাঁচার হার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment