বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ। ৫ম অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ। যা ” বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ

 

বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ। ৪র্থ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

চিংড়ি চাষের সফলতা মূলত সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, হাল, লক্ষভা, পুঁজি, অবকাঠামোগত সুদিষা, উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণভাবে আধুনিক চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনাতে আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সঠিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন। খামারের সঠিক সকশা প্রণয়নপূর্বক খামাত্রে নিম্নেক্ত অবকাঠামোসমূহ নির্মিত হওয়া আবশ্যক।

ক. বেটনী বাঁধ

উন্নত পদ্ধতির বাগদা চিংড়ি চাষে জেরের বাঁধ বা পাড় নির্মাণ করার সময় নিম্নেক্ত বিষয়সমূহ খেয়াল রাখতে হবেঃ

ক) যেয়ের বাঁধ দৃঢ় এবং দজবুত হতে হবে, যাতে করে পালি দেয় থেকে বেরিয়ে না যায় এবং বাইরে থেকে। পানি ভেতরে ঢুকতে না পারে।

খ) বাঁদের উল্লেতা হবে ৮ ফুটের অধিক এবং জলা হবে ১২-১৬ ফুট। উক্ষত্র দিকের ডালের (মাটির গরুল অনুযায়ী) অনুপাত হবে ১৪২-১৪১.৫।

গ) যেরের পাড়ের চূড়া অন্ত্রক ২ ফুট প্রশস্ত হযে, পাড়ের ‘উঞ্চর জালে খালের ছাপ সঞ্চয় করে লাগালো থেকে পায়ে।

খ. পুরুত্রের বাঁধ বা অভ্যন্তরীণ বাঁধ

খাবারের অভ্যন্তরীণ বাঁধ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন চাষ এলাকার ১২ বিটায় পানি ধরে রাখা যায় অর্থাৎ বাঁধের উচ্চতা কমপক্ষে ১.৫ মিটার হতে হবে। করে করে মাটি কমপ্যাক্ট করে বাঁধ খুব মজবুদ্ধভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে চাষ এলাকা বা পুকুরুজয় পানি বের হস্ত্রে যা যায় এবং যাইয়ের পালি পুকুত্রে প্রবেশ ফরতে মা গায়ে।

পুকুরের পাড় যাচ্ছে বলে না যার যা অতিবৃষ্টির ফলে খাঁদের মাটি দুইয়ে ক্ষয় হয়ে না যায় সেজন্য বাঁধের গাঁয়ে দুর্বা জাতীয় খাস অথবা পুকুরে ছায়া সৃষ্টি করবে না এ রকম গাছ লাগাতে হবে। একটি বাঁধ নির্মাণ করার সময় বিভিন্ন স্থানেয় পরিষাণ নিচের চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হলো: চিত্রে ৬ ফুট গভীরতা সম্পন্ন একটি পুকুর, যার ঢাল

১৫১,৫: ক্ষসির বাইত্রের লিক হতে বকচর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, বেখালে ২ ফুট পদ্ম হস্তে মাটি ফেলা হয়েছে। বাইরের ঢাল ফুট, বাধের উপত্রের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট, বাইরের যাধেয় ফিল্ময়ের ঢাল ৬ ফুট ও যফতর ২ ফুটসহ মোট ২০ ফুট। ঘেরের ভিত্তরের দিকে নৈর্যা ১৫ ফুট যার মধ্যে ২ ফুট বকচর, ফিঞ্চক্রের দিকে ঢাল ৪ ফুট, জিওরের বাঁধের উপরের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও ফিতরের বাঁধের যাইত্রের চাল ও ফুট। বাঁধের উচ্চকা দির্ঘ্যয় করে উরু স্থাদের কল্লায় পানির স্বীলতা, যাচিয় পঠন ও পুকুত্রের ব্যবস্থাপনা সুবিধার উপর।

গ. নার্সারি পুকুর

চিংড়ি পোনার সুষম বৃদ্ধি ও পানার মৃত্যুহার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। নার্সারি পুকুর যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে। এর ফলে পোনার মজুদকালীন মৃত্যুহারও কমে যাবে এবং পোনা দ্রুত ৰাড়বে। এক্ষেত্রে পালনীয় কাজগুলো হলোঃ

ক) নার্সারিতে যাতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকে সে অনুপাতে পুকুর খনন করতে হবে।

খ) ঘন মশারির নেট দিয়ে নার্সারি নির্মাণ করতে হবে।

গ) নার্সারির নেট পানির উপরে এক হাত পরিমাণ বাড়তি রাখতে হবে এবং তার মাটিতে কাদার পরিমাণ ৫-৬ ইঞ্চির বেশি হওয়া যাবে না।

ঘ) পুকুরের চার পাড় অবশ্যই উঁচু, মজবুত ও বন্যামুক্ত হতে হবে।

ঙ) ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য বাড়ির কাছাকাছি হওয়া ভালো।

চ) পুকুরে প্রচুর সূর্যের আলো এবং বাতাস থাকার ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে নার্সারি পুকুরে কমপক্ষে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পড়ে।

ঘ. পালন পুকুর

উন্নত পদ্ধতির চিংড়ি চাষে পালন পুকুর নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যথাযথভাবে পালন পুকুরটি নির্মাণ করা হলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। পালন পুকুর তৈরিতে নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে

ক) পালন পুকুরের সব জায়গায় ও ফুটের অধিক পানি থাকতে হবে।

খ) পালন পুকুরের পাড়ে গাছ-পাহালি ও ঝোপ-ঝাড় থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

গ) পুরনো পুকুরের ক্ষেত্রে তলা ভালোভাবে শুকাতে হবে প্রয়োজনে কালো মাটি থাকলে সরিয়ে ফেলতেণ হবে।

ঘ) পালন পুকুরের তলদেশ সমান হতে হবে।

ঙ) দোআঁশ মাটি হলে পুকরের ঢাল ১৪১.৫ এবং বেলে মাটি হলে পুকরের ঢাল ১৪২.০ হবে।

চ) এই পদ্ধতিতে একটি আদর্শ পালন পুকুরের আয়তন হওয়া উচিত অনধিক এক হেক্টর।

ছ) দিনে কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত সূর্যালাকে থাকতে হবে।

জ) পুকুরের চার পাড় অবশ্যই উঁচু, মজবুত ও বন্যামুক্ত হতে হবে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ঙ. রিজার্ভার নির্মাণ

ক) জরুরি প্রয়োজনে পরিশোষিত পানি সরবরাহের জন্য মূল/পালন পুকুরের পাশে এপটি ৫-৬ ফুট গভীর রিজার্ভার নির্মাণ করতে হবে।

খ) রিজার্ভারের আয়তন পালন পুকুরের চার কাগের এক ভাগ হতে হবে।

গ) রিজার্ভারের চারপাশে জালের বেড়া থাকতে হবে।

চ. লুইস গেট নির্মাণ

বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য পুইস গেট নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন। দুইস গেটের মাধ্যমে পুকুরে পানি সরবরাহ ও পুকুর থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিমিত আকারের সুইস গেট নির্মাণ করতে হবে। চাষ এলাকায় খেরে পানির নিশ্চয়তার জন্য প্রতিটি জোয়ারে ৩০ শতাংশ পানি খাতে সরবরাহ করা যায় এমনভাবে গেট নির্মাণ করতে হবে।

পানি সরবরাহ পেট পুকুরের জলা থেকে কিছুটা উপরে এবং নিষ্কাশন গেটণ পুকুরের তলা থেকে কিছুটা নিচুতে স্থাপন করা সরকার। এতে পুকুরে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন করা যায়। সুইস গেট সাধারণত কাঠের, আরসিসি পাইপ বা পিভিসি পাইপ অথবা সিমেন্ট যারা নির্মাণ করা যায়।

লুইস গেট সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে, যথা- প্রধান লুইস গেট ও গৌণ বা অপ্রধান সুইস পেট। বেষ্টনী বাঁধের উৎসের নিকট যে গেট নির্মাণ করা হয়। তাকে প্রধান পুইস সেট এবং পুকুরের পাড়ে যে গেট নির্মাণ করা হয় তাকে গৌণ লুইস গেট বলে। পানি সরবরাহ খালে পানি সরবরাহ করার জন্য সাধারণত প্রধান সুইস গেট ব্যবহার করা হয় এবং সরবরাহ খাল থেকে পুকুরে পানি সরবরাহ করার জন্য গৌণ সুইস গেট ব্যবহার করা হয়।

একটি কাঠের পুইস গেট নির্মাণের সময় নিরুর বিষয়গুলোর প্রথি গুরুত্ব দিতে হবেঃ

ক) লুইস গেটে বা গেটসমূহের আকার বা সংখ্যা এমন হতে হবে যাতে নির্ধারিত সময়ে খামারে পানি প্রবেশ করানো যায় বা সময়মত খামার থেকে পানি বের করা যায়।

খ) খামারের এমন স্থানে গেট নির্মাণ করতে হবে যাতে খামারের সমস্ত পানি বের করা সম্ভব হয়। গেটে ছোট ছিদ্রযুক্ত জাল, আহরণ জাল ও ফলবোর্ড বসানারে ব্যবস্থা থাকতে হবে।

গ) গেট গানি নিরোধক হতে হবে যাতে গেটের পার্শ্ব যা তলা দিয়ে পানি প্রবেশ করতে বা পানি বের হয়ে যেতে না পারে।

ঘ) পেটের তলদেশ দিয়ে পানি সরবত্তাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঙ) গেটের উপরিভাগ দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চ) গেটের ডিজাইন এমন হতে হবে যেন সহজে পরিচালনা করা যায়।

পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের কাজ ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। নিষ্কাশন কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় সেজন্য পুকুরের তলদেশ পানি সরবরাহ করানোর গেটের দিক থেকে পানি নিষ্কাশন গেটের দিকে ঢালু হতে হবে। পানি সরবরাহ সুইস গেটের মুখে সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত জাল স্থাপন করে রাক্ষুসে। মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্চিত জলজ প্রাণীর খামারে প্রবেশ বন্ধ করা যায়। আর নিষ্কাশন কইস গেটের মুখে জাল স্থাপন করে অতি সহজেই চিংড়ি আহরণ করা যায়।

 

বাগদা চিংড়ি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ। ৪র্থ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

ছ. বাসস্থান ও ভান্ডার

বাসস্থান ও তা-ার খামার অবকাঠামোর অন্যতম উপাদান। খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি যেমন- চুন, সার, খাদ্য, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ইত্যাদি রাখার জন্য উপযুক্ত ভা-ার থাকা দরকার। খামারের ভাজারটি শুদ্ধ স্থানে হওয়া উচিত। এছাড়া খামারের শ্রমিকসহ খামার পরিচালনায় নিয়োজিত অন্যান্য জনবলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান থাকা একান্ত অপরিহার্য। কর্মরত জনবলের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরি।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment