Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

থাই পাঙ্গাশ মাছের রেণুর পরিচর্যা ও খাদ্য প্রয়োগ

থাই পাঙ্গাশ মাছের রেণুর পরিচর্যা ও খাদ্য প্রয়োগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-থাই পাঙ্গাশ মাছের রেণুর পরিচর্যা ও খাদ্য প্রয়োগ

থাই পাঙ্গাশ মাছের রেণুর পরিচর্যা ও খাদ্য প্রয়োগ

থাই পাঙ্গাশের রেণু পোনাকে বিশেষ যত্নসহকারে পরিচর্যা করতে হয় । ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেণু একে অপরকে খেয়ে ফেলে । অর্থাৎ থাই পাঙ্গাশের রেণুর মাঝে আত্মভুক (ক্যানিব্যালিস্টিক) বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । সে কারণে সঠিক সময় পর্যাপ্ত খাবার না দিলে রেণুর সংখ্যা কমতে থাকে । যদিও রেণু পোনার কুসুম থলি ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে । তবুও সাবধানতা অবলম্বন করে হ্যাচিং-এর ১৮ ঘণ্টা পর থেকে খাবার দেওয়া শুরু করতে হবে ।

এ সময় হালকা আমিষসমৃদ্ধ খাদ্য যেমন মাছ সিদ্ধ করে ভালো করে পিষে পানিতে তরল করে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে। ২-৩ ঘণ্টা পর পর মাছ সিদ্ধ দেওয়া যায়। ২ দিন পর থেকে আর্টিমিয়ার নগ্নি, টিউবিফেক্স, ছোট জুপ্লাঙ্কটন যেমন ময়না ট্রেতে খাদ্য হিসেবে দিতে হবে । প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা পর পর এসব খাদ্য হ্যাচিং ট্রেতে ৫-১০ দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে । প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সাইফনিং করে অতিরিক্ত খাদ্য, রেণুর বর্জ্য ও ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

অপরিষ্কার অবস্থার কারণে যে কোনো সময় ইনফেকশন হয়ে সমস্ত রেণু মারা যেতে পারে। ৭-১০ দিন পর বড় চৌবাচ্চা বা আঁতুড় পুকুরে স্থানান্তর করা যায় । এ সময় ৫০% টিউবিফেক্স চূর্ণ করে ভালো করে মিশিয়ে পোনাকে খাওয়াতে হবে। এ সময় পোনার ওজনের দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার, দিনে ৩/৪ প্রয়োগ করতে হয় ।

থাই পাঙ্গাশ মাছের প্রণোদিত প্রজনন:

চাষযোগ্য মাছ হিসেবে থাই পাঙ্গাশ বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া সুস্বাদু মাছ হিসেবে বাজারে বেশ চাহিদা আছে । থাই পাঙ্গাশ মাছের প্রণোদিত প্রজননের ধাপ সমূহ নিম্নরূপ :

১। ব্রুড মাছ সংগ্ৰহ

ক. হ্যাচারিতে দ্রুত বর্ধনশীল পোনা সংগ্রহ করা ।
খ. ব্রুড ব্যাংক থেকে ব্রুড মাছ সংগ্রহ করা ।
গ. এক হ্যাচারি থেকে অন্য হ্যাচারিতে ব্রুড আদান প্রদান অর্থাৎ ব্রুড বিনিময় করে ।
ঘ. বিদেশ থেকে ব্রুড আমদানি করে ।

২। ব্রুড মাছ পালন :

ক. সংগৃহীত ব্রুড মাছ ভালো পরিবেশে উৎপাদনশীল পুকুরে যত্ন সহকারে পালন করতে হবে । এ ক্ষেত্রে পুকুরের আয়াতন ৫০-১০০ শতাংশ হলে এবং গভীরতা ৬-৮ ফুট হলে ভালো হয় ।

খ. প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি বাহির থেকে ৩০% প্রোটিনসমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য দিনে ২ (দুই) বার নির্দিষ্ট
স্থানে ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োগ করতে হবে ।

গ. মজুদ ঘনত্ব সঠিক মাত্রায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ৬-৮ কেজি হলে ভালো ফল পাওয়া যায়।.

নিয়মিত মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে ।

ঘ. ১৫-৩০ দিন পরপর আংশিক পানি বদল করলে ভালো ফল পাওয়া যায় ।

 

 

৩ । ব্ৰড মাছ বাছাই :

প্রণোদিত প্রজননের ক্ষেত্রে ব্রুড মাছ বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিপক্ক পাঙ্গাশ মাছের পুরুষ ও স্ত্রী মাছের বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো :

 

৪। হরমোনের মাত্রা

হরমোনের মাত্রা নির্ভর করে মাছের ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়ের পরিপক্বতা প্রজনন ঋতু ও তাপমাত্রার উপর । থাই পাঙ্গাশের প্রণোদিত প্রজননের জন্য সাধারণত পিটুইটারি গ্লান্ড বা পিজি ব্যবহার করা হয় । সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাই পাঙ্গাশের প্রণোদিত প্রজনন করানো হয় । স্ত্রী মাছকে দুইটি মাত্রায় ও পুরুষ মাছকে একটি মাত্রায় ইনজেকশন দেওয়া হয় ।

প্রথমে স্ত্রী মাছকে ২ মি. গ্রা. পিজি প্রতি কেজি দেহ ওজনে ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং পুরুষ ও স্ত্রী মাছ আলাদাভাবে বড় বড় চৌবাচ্চায় রাখা হয় । প্ৰথম ইনজেকশনের ৬-৮ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছকে ৬ মি. গ্রা. পিজি প্রতি কেজি দেহ ওজনে দ্বিতীয় ইনজেকশন দিতে হয় এবং এ সময় পুরুষ মাছকে একমাত্র ইনজেকশন দিয়ে পৃথক চৌবাচ্চায় রাখা হয়। দ্বিতীয় ইনজেকশনের ৭-৯ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী মাছের ওভুলেশন সম্পন্ন হয় ।

৫) হরমোন দ্রবণ তৈরি :

এসিটোন বা অ্যালকোহলে সংরক্ষিত পিজি থেকে প্রয়োজনীয় পিজি নিয়ে টিস্যু পেপারের সাহায্যে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার পিজিকে টিস্যু হোমোজিনাইজার বা হামানদিস্তা দিয়ে ভালোভাবে পিষতে হবে । পেষার সময় এমনভাবে ডিস্টিল ওয়াটার দিতে হবে যেন প্রতি কেজি ব্রুড মাছ ০.৩ মি. লি. এর বেশি দ্রবণ না পায়। পেষার পর দ্রবণটি সেন্ট্রিফিউজ মেশিন দিয়ে থিতিয়ে তলানি বাদ দিয়ে উপরের পরিষ্কার দ্রবণ ইনজেকশনের জন্য ব্যবহার করতে হবে ।

৬। ইনজেকশন প্রয়োগ :

সাধারণত মাছের পার্শ্বরেখার উপর মাংস পেশি, বক্ষপাখনার গোড়ার নিচের দিকের নরম জায়গায় ২০-২২ নং সুচ ব্যবহার করে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় । এসময় ব্রুড মাছকে আলতো করে ধরে ভেজা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরে ফোমের উপর রেখে ইনজেকশন দিলে মাছ আঘাত পায় না ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

৭। চাপ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ ও নিষিক্তকরণ

পাঙ্গাশ মাছের ডিম ও শুক্রাণু স্ট্রিপিং বা চাপ প্রয়োগ করে সংগ্রহ করা হয়। স্ত্রী মাছকে দ্বিতীয় ইনজেকশন দেওয়ার পর ৫-৬ ঘন্টা পর হতে মাছকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তাদের ডিম দেওয়ার সময় হয়েছে কিনা । ডিম দেওয়ার সময় হলে পানিতে ২-১টা ডিম দেখা যাবে এবং পেটে সামান্য চাপ দিলে সহজে ডিম বের হয়ে আসবে ।

তখন চৌবাচ্চা থেকে স্ত্রী মাছ তুলে পরিষ্কার শুকনো প্লাস্টিকের গামলার উপর ধরে মাছের তলপেটে উপর থেকে নীচের দিকে হাত দিয়ে আস্তে চাপ প্রয়োগ করলে ডিম বের হয়ে আসবে।একই সময়ে পুরুষ মাছ হতে মিন্ট বা শুক্রাণু সংগ্রহ করে ডিমের উপর ছড়িয়ে নিতে হবে। ডিমে পুরুষ মাছের শুক্রাণু মেশানোর পর মুরগি বা পাখির পালকের সাহায্যে ভালোভাবে নেড়ে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত মিশিয়ে ডিম নিষিক্ত করতে হবে।

ডিম নিষিক্ত হওয়ার পর গামলায় সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে নিষিক্ত ডিম হতে অতিরিক্ত মিন্টু ও অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করে কয়েক মিনিটের মধ্যে হ্যাচিং ট্রের মধ্যে স্থাপিত লোহার রড ও কাপড়ের অবকাঠামোর উপর খুব হালকাভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে । খাই পালাশের ডিম আঠালো তাই উপরোক্ত সমস্ত কাজ ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই শেষ করতে হবে নতুৰা ডিম জমাট বেঁধে যাবে।

৮। ডিম ফুটানো।

নিষিক্ত ডিম অবকাঠামোর উপর ছাড়িয়ে দেওয়ার পর ট্রেতে পানিপ্রবাহ বা ঝর্ণা দিয়ে পানি দিতে হবে। পানির তাপমাত্রার উপর হ্যাচিং-এর সময় নির্ভর করে। সাধারণত ২৭°২৯° সেঃ তাপমাত্রার ২০-২১ ঘণ্টার মধ্যেই থাই পাঙ্গাশের ডিম থেকে রেণু বের হয়ে আসে। সব ডিম ফুটে যাওয়ার পর হ্যাচিং ট্রের কাপড়ের ফ্রেমটি ডিমের খোসাসহ ধীরে ধীরে ভুলে নেয়া হয় এবং রে ট্রেতে থেকে যায়। পরে রাবার টিউব দিয়ে সাইফনিং করে ডিমের বাড়তি ময়লা ট্রে থেকে পরিষ্কার করতে হয় ।

আরও দেখুন:

Exit mobile version