আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – খাদ্য গ্রহণ ও সক্রিয়তার আরোপিত প্রভাব
খাদ্য গ্রহণ ও সক্রিয়তার আরোপিত প্রভাব
খাদ্য গ্রহণ ও সক্রিয়তা
সূর্যের আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিপাক ক্রিয়ার হার অনেকগুলো প্রভাবক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ সমস্ত প্রভাবকের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান যা মাছের সক্রিয়তাকে। প্রভাবিত করে থাকে। নিবিড় মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছকে অধিক ঘনত্বে রাখা হয়। ফলে তাদের মধ্যে খুবই সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। তাদেরকে কখনও স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিতে হয় এবং কখনও বা দলবদ্ধভাবে খাবার গ্রহণ করতে হয়।
এভাবে রাখা মাছের মধ্যে সব সময় উচ্চ মাত্রার সক্রিয় বিপাক লক্ষ্য করা যায় যা অবশ্যই ব্যাসাল বা রটিন বিপাক থেকে অধিক মাত্রায় হয়ে থাকে। অনেক কার্পজাতীয় মাছ এবং ট্রাউট মাছের মধ্যে দিনের বিভিন্ন সময়ে সক্রিয়তার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ পার্থক্য সাধারণত বিমাত্রার হয়ে থাকে। অর্থাৎ দিনের আলোয় দুবার অধিক সক্রিয় হতে দেখা যায়। এ সক্রিয়তা কখনও কখনও খাদ্য গ্রহণের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
রেইনবো ট্রাউট মাছের ক্ষেত্রে অন্ধকারে উপবাস অবস্থায় এবং আলোতে খাদ্য গ্রহণের অবস্থায় এ ধরনের দ্বি মাত্রার সক্রিয় অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। সাঁতারের গতি বেড়ে গেলে অথবা স্রোতের বিপরীতে চললে মাছের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্যান্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সাঁতারের গতি বেড়ে গেলে কার্পজাতীয় মাছের অক্সিজেন ব্যবহারের পরিমাণ দুই থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পায়। এরকম ফলাফল স্যামন জাতীয় মাছের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

খাদ্য গ্রহণ এবং হজম প্রক্রিয়া মাছের অক্সিজেন ব্যবহারের পরিমাণ তথা বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। কার্পজাতীয় মাছ খাদ্য গ্রহণের ও হজমের সময় শতকরা ৫০ ভাগ অক্সিজেন বেশি ব্যবহার করে থাকে। একই ভাবে রেইনবো ট্রাউট মাছের ক্ষেত্রে এই হার শতকরা ১৫-৪০ ভাগ। যখন কোন নিবিড় মাছ চাষের ক্ষেত্রে (যেখানে অধিক ঘনত্বে মাছ রাখা হয়) খাবার প্রদান করা হয় তখন অক্সিজেন ব্যবহারের মাত্রা বা বিপাক ক্রিয়া মাছের সাঁতার কার্য, খাদ্য গ্রহণ ও হজম ইত্যাদির সমন্বিত প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়।
কার্পজাতীয় মাছের ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণের সময় কালে বিপাক ক্রিয়া সকল সময়ই উপবাসকালীনের চেয়ে বেশি। মাছের খাবার গ্রহণের সাথে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে মৎস্য পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণ স্পেসিফিক ডিনামিক এ্যাকশন (specific dynamic action) বা এস.ডি.এ. বলে থাকে। খাবার গ্রহণের পরই অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয় এবং দ্রুত তা আবার প বাবস্থায় ফিরে আসে।
এস.ডি.এ. কত হবে তা খাবারের পরিমাণ, প্রকৃতি ও পানির তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। মাছের । বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যেও এস.ডি.এ. এর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ সময় অক্সিজেন ব্যবহারের সর্বোচ্চ পরিমাণ রুটিন বিপাকের দ্বিগুণ হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপশক্তি ও বৃদ্ধি পায়। তাই এ প্রক্রিয়াকে খাদ্য-তাপ সম্পর্কিত প্রভাবও বলা হয়ে থাকে ।
আরও দেখুন :