আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – মাছের খাদ্য তৈরি করা ও খাদ্য উপাদানের আনুপাতিক হার নির্ধারণ
মাছের খাদ্য তৈরি করা ও খাদ্য উপাদানের আনুপাতিক হার নির্ধারণ
প্রাসঙ্গিক উপস্থাপনা
মাছের প্রজাতিভেদে এবং একই প্রজাতির মাছের জীবনচক্রের ভিন্ন ভিন্ন স্তরে পুষ্টি চাহিদা ভিন্নরূপে হয়ে থাকে। এজন্য সুষম খাদ্য তৈরির আগে মাছের পুষ্টি চাহিদা জেনে নেওয়া দরকার। দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় প রণের জন্য মাছের খাদ্যে আমিষজাতীয় উপাদানের ব্যবহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
কার্পজাতীয় মাছের খাদ্যে আমিষের চাহিদা প্রজাতিভেদে ৩০-৪০ শতাংশ। সুতরাং সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়ার জন্য কার্পজাতীয় মাছের খাদ্যে গড়ে ৩৫ শতাংশ আমিষ থাকা প্রয়োজন। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে কার্পজাতীয় মাছের খাদ্যে ২০- ২৫ শতাংশ আমিষ থাকলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
খাদ্য উপাদান
মাৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহারপোযোগী ৮৩ টি খাদ্য উপাদান আমাদের দেশে রয়েছে। এসব দ্রব্যের প্রাপ্যতা, বাজার মূল্য এবং পুষ্টিগুণ বিবেচনায় ৩৫ টি উপাদান মাছের খাদ্য তৈরিতে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, সরিষার খৈল, গবাদিপশুর রক্ত ও নাড়িভূড়ি, মসুরের ভূষি, মাসকলাই ভূষি, ক্ষুদে পানা, কুটিপানা, আটা, চিটাগুড়, রেশমকীট মিল, তিলের খৈল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মিশ্রণের অনুপাত ও খাদ্য তৈরির সুত্র
মাছের খাদ্য তৈরির লক্ষ্যে মিশ্রণের অনুপাত নির্ণয়ের জন্য প্রথমে উপাদানসমুহ এমনভাবে বেছে নিতে হবে যাতে মাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং নামও কম থাকে। সুষম খাদ্য তৈরির জন্য খাদ্যের সাথে ০.৫১% ভিটামিন এ প্রিমিক্স ব্যবহার করতে হয়। খাদ্য পানিতে বেশি সময় স্থিতিশীল রাখার জন্য বাইন্ডার হিসেবে আটা, ময়দা বা চিটাগুড় ব্যবহার করতে হয়।
এতে খাদ্যের মানও কিছুটা বাড়ে।
আঙুর পুকুরে পোনা চাষ, রুইজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ এবং জিওল মাছের উপযোগী খাদ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের মিশ্রণের হার ও প্রাপ্ত আমিষের মাত্রা তৃতীয় পাঠের আলোচনা থেকে আপনারা জেনেছেন।
নিচে মাছের খাদ্য তৈরির ভিন্ন একটি সুত্র উল্লেখ করা হলো:
মনে করুন, চালের কুঁড়া ও সরিষার খৈল মিশিয়ে ২০ শতাংশ আমিষ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য তৈরি করতে হবে। প্রদত্ত, চালের কুঁড়ায় আমিষের হার ১৪ শতাংশ, সরিষার খৈল-এ আমিষের হার ৩২ শতাংশ।
প্রথমে পরস্পরছেনী ২টি রেখা দিয়ে একটি কৌনিক ক্ষেত্র অঙ্কন করুন। রেখাদ্বয়ের বাম পাশে খাদ্য উপাদান ও আমিষের হার উল্লেখ করুন। অতঃপর খাদ্যে প্রত্যাশিত আমিষের মাত্রা থেকে উপাদানের আমিষের মাত্রা বিয়োগ করুন এবং বিয়োগফল বিপরীত কোনে স্থাপন করুন।

প্রয়োজনীয় উপকরণ
- কুঁড়া ও খৈল
- চিটাগুড়
- ভিটামিন প্রিমিক্স
- বড় মুখওয়ালা পাত্র
- চাটাই ইত্যাদি।
কার্যপদ্ধতি
- প্রথমে পরিমাণমত মানসম্পন্ন উপাদান বেছে নিন।
- নির্ধাতির উপাদানগুলো গ্রাইন্ডারে, আটাকলে বা ঢেঁকিতে পিষে ভালভাবে চূর্ণ বা গুড়া করে নিন।
- গুড়া করা উপাদান চালুনিতে ভালভাবে ঢেলে নিন।
- এরওপর সুত্রানুযায়ী পরিমাণমত কুঁড়া ও খৈল কোন পাত্রে নিয়ে হাত দিয়ে বা মিক্সার মেশিনে ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণে অল্প অল্প পানি দিয়ে এমনভাবে নাড়ুন যেন মিশ্রণটি আঠালো পেষ্ট বা মন্ডে পরিণত হয়। এ সময় অল্প পরিমাণে (৫.০) চিটাগুড় এবং ভিটামিন প্রিমিক্স (০.৫০) যোগ করনে।
- তৈরি মন্ড বা পেষ্ট তাৎক্ষনিকভাবে মাছকে খাদ্য হিসেবে সরাসরি দিতে পারেন। অথবা পিলেট বা বড়ি বানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।
- হাত দিয়ে বা হাতে চালিত সেমাই বানানোর মেশিন দিয়ে পিলেট বা বড়ি বানানো যায়। তৈরি খাদ্য যে মাছকে দেওয়া হবে সে মাছের মুখের আকার অনুযায়ী পিলেট তৈরি করতে।হবে। সম্প্রতি শক্তি চালিত পিলেট তৈরির যন্ত্র বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এর সাহায্যে খাদ্য উপাদান মিশ্রিতকরণ ও পিলেট তৈরি করা যায়।
- তৈরি পিলেট পলিথিনের সিটে বা চাটাইয়ে রেখে ভালভাবে শুকিয়ে রাখুন। শুকানোর সময় খাদ্যে মাটি লাগলে খাদ্যের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- শুকানো খাদ্য বস্তায় বা কোন পাত্রে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করুন।
- সংরক্ষিত খাবার মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিন। তা নাহলে আর্দ্রতার কারণে ছত্রাক বা পোকা মাকড়ের সংক্রমণে খাদ্যের মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- অনুশীলন করা পদ্ধতি ব্যবহারিক খাতায় লিখুন এবং ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্য দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য তৈরি করুন ।
আরও দেখুন :