Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

খাদ্য উপকরণ

খাদ্য উপকরণ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় খাদ্য উপকরণ – যা শিং কার্প মাছের মিশ্রচাষ প্রযুক্তি এর অন্তর্ভুক্ত।

খাদ্য উপকরণ

খাদ্য উপকরণ

খাবার হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ক্যাটফিশ ফিড (শিং মাছ) কিংবা নিম্নে উল্লেখিত ফর্মুলা অনুযায়ী খাবার তৈরি করে দেয়া যেতে পারে।

সারণি-১৫ : ক্যাটফিশ (শিং মাছ)-এর খাদ্যোপাদানে মিশ্রণের হার

 

 

খাদ্য গ্রহণ :

পুকুরে শিং মাছের পোনা মজুদের পর প্রথম ১০ দিন মাছের দৈহিক ওজনের ২০% হারে খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। ছোট শিং মাছ সাধারণত রাতের বেলায় খাদ্য খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই মোট খাদ্যের ঔ অংশ সকাল বেলায় ও ঔ অংশ সন্ধ্যার সময় পুকুরে দিতে হবে। শিং মাছের খাদ্যে প্রোটিন চাহিদা একটু বেশি । খাদ্যে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন থাকা প্রয়োজন, তন্মধ্যে কমপক্ষে ১২ শতাংশ প্রাণিজ প্রোটিন অবশ্যই থাকতে হবে। মানসম্মত সুষম খাদ্য না খাওয়ালে শিং মাছ আশানুরূপ বড় হয় না । শিং মাছের খাদ্যের ব্যাপারে দুটি বিষয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

প্রথম বিষয়টি হলো দেশী ফিশমিল বা শুঁটকি নিয়ে। ফিশমিলে ব্যবহৃত শুঁটকি যদি শতকরা পাঁচ ভাগও কীটনাশকযুক্ত হয় তাহলে সবগুলো ফিশমিলই বিষাক্ত হয়ে যাবে যা শিং মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিং মাছের খাদ্যে দেশি ফিশমিল ব্যবহার করলে ঐ ফিশমিলের সামান্যতম অংশও যদি কীটনাশকের প্রভাবে বিষাক্ত হয় তাহলে কিছুতেই শিং মাছ বাঁচানো যাবে না। “স্লো পয়জনিং” হয়ে মড়ক দেখা দিয়ে ধীরে ধীরে সব মাছ মারা যাবে।

একবার “স্লো পয়জনিং” হলে কোনোভাবেই সেই মাছ বাঁচানো যায় না। তাই নিজের তৈরি খাদ্য হোক আর বাজারে তৈরি খাদ্য হোক খাদ্য ব্যবহারের পূর্বে দেশী ফিশমিলের ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ জন্য দেশী ফিশমিল পরিহার করে বিদেশি উন্নতমানের ফিশমিল ব্যবহার করলে বিষক্রিয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো খাদ্য উৎপাদনের মান নিয়ে । শিং মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদানগুলো যাতে সতেজ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুরোনো খাদ্য উপাদান (যেমন-খৈল, কুঁড়া, ভুট্টা, রাইচ পলিশ, সয়ামিল ইত্যাদি) ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অনেক সময় খালি চোখে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে ছত্রাক দেখাও যায়না। যদি ছত্রাকে আক্রান্ত খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি খাদ্য শিং মাছকে খাওয়ানো হয় তাহলেও শিং মাছের মড়ক দেখা দেয়। তাই পুরোনো খাদ্য উপাদান পরিহার করে তরতাজা খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি খাদ্যই শিং মাছকে খাওয়ানো বাঞ্ছনীয়। সয়ামিল ছত্রাকে বেশি আক্রান্ত হয় । তাই শিং মাছের খাদ্য উপাদান থেকে সয়ামিল বাদ দেয়া উচিত। উপরোক্ত দুটি বিষয়ে সর্বদা সতর্ক না থাকলে শিং মাছ চাষিকে এর জন্য চরম ক্ষতির শিকার হতে হবে।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পুকুর ব্যবস্থাপনা :

পুকুর ব্যবস্থাপনার জন্য নিচে লিখিত কাজগুলো সঠিকভাবে করা দরকার-

বর্ষাকালে পুকুরের পাড় বেয়ে শিং-মাছ পুকুর থেকে চলে যায়, এ ধারণাটা আসলে পুরোপুরি সত্য নয় । যে কোন উৎস (যেমন-পুকুর পাড়, রাস্তা, বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি) থেকে বৃষ্টির সময় যদি ধারা আকারে পুকুরে পানি প্রবেশ করে তখন দলবদ্ধ হয়ে শিং-মাছ ঐ ধারা অনুসরণ করে ওঠার চেষ্টা করে।

এছাড়া চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন মাছের পেটে ডিম আসে তখন হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি হলে কোনো উৎস থেকে যদি ক্ষীণ ধারায়ও পুকুরে পানি প্রবেশ করে তখন পানির ঐ ধারা অনুসরণ করে শিং-মাছ ওঠার প্রবণতা দেখা যায়। এ সমস্যার সমাধানের জন্য পুকুর প্রস্তুতির সময়ই পানি প্রবেশের ঐ স্থানগুলি মজবুত করে মাটি দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।

শিং-মাছের বর্ধন হার :

যেকোনো মাছের বর্ধনের হার অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন- মাছের ঘনত্ব, খাদ্যের পরিমাণ, পুকুরের উর্বরতা, মাটি ও পানির গুণাগুণ, পানি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়। মৎস্য খামারের বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১০ মাসের চাষে প্রতিটি স্ত্রী শিং ১২৫ গ্রাম পর্যন্ত বড় হয়। পুরুষ শিং একই সময়ে ৪০-৫০ গ্রামের বেশি বড় হয় না। অধিক ঘনত্বে শিং-মাছের একক চাষে যদি সব ব্যবস্থাপনা সুচারুরূপে করা হয় তাহলে প্রতিটি শিং গড়ে নিঃসন্দেহে ৬০-৭০ গ্রাম বড় হয় ।

 

 

রোগবালাই প্রতিরোধ :

শিং-মাছ একটু শক্ত প্রকৃতির মাছ হওয়ায় রোগ ব্যাধি খুব একটা দেখা যায় না । পুকুরে শিং-মাছ সাধারণত পরজীবী বা জীবাণু দ্বারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ক্ষতরোগ ও পেটফোলা রোগ অন্যতম । এসব রোগ প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শীতকালের পূর্বে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। যদি রোগ হয়েই যায় তাহলে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ ৪/৫ দিন পর পর ২/৩ বার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি শতাংশ প্রতি স্বাভাবিক গভীরতায় ১ গ্রাম হারে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version