চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব। ৬ষ্ঠ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব। যা ” বাগদা চিংড়ির খামার প্রস্তুতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব

 

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব। ৬ষ্ঠ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

ক্ষারত্ব ও খরতা

ক্ষারত্ব ও খরতা হলো পানিতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের আয়নের পরিমাপক।

১. ক্ষারত্ব: সাধারণত ক্ষারত্ব হলো কার্বোনেট, বাইকার্বোনেট ও হাইড্রোক্সিল আয়নের পরিমাপক। পুকুরে এর মাত্রা ২০ মিগ্রা/লিটার এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।

২. খরতা: সাধারণত খরতা হলো ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়নের পরিমাপক। যা প্রকাশ করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে। মোট খরতার পরিমাণ মোট ক্ষারত্বের সাথে সম্পর্কিত। পানির খরতা ২০ মিগ্রা/লিটার।

এর কম হলে পানিয় বাফার ক্রিয়া (buffer sction) নষ্ট হয়ে যায় এবং চিংড়ির জন্য তা বিশেষভাবে ক্ষতিকর। সাধারণভাবে বলা যায় যে, ভালো জলাশয়ের খরতা ৪০-২০০ দিগ্রা/লিটার এর মধ্যে হওয়া উচিত

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব

চিংড়ি চাষের জন্য হালকা খর পানি সবচেয়ে ভালো। ক্ষারত্ব ও খরতার মান ২০ মিগ্রা/লিটার এর কম ও ৩০০ মিগ্রা/লিটার এর বেশি হলে পানির বাফারিং ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পানির পিএইচ দ্রুত উঠানামা করে। পুকুরে সায় দিলে তা কার্যকর হয় না। ক্ষারত্ব ৩০০ মিগ্রা/লিটার এর বেশি হলে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশী- লতা (ফাইটোপ্ল্যাংকটন) হ্রাস পায়। কারণ তখন সালাকেসংশেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ যুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে না। চিংড়ি সহজেই অম্লতা ও অন্যান্য ধাতুর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

জার্ডনেস: হার্ডনেস- এরদ্বারা পানিতে দ্রবীভূত ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম লবশসমূহের মাত্রা বুঝায়। হার্ডনেস মাছ/চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে।

পুকুরে সার প্রয়োগ

কৃষিজ ফসলেয় অধিক ফলনের জন্য যেমন জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়, তেমনি চিংড়ির অধিক উৎপাদনের জন্যও পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে জৈব এবং অজৈব (রাসায়নিক) উভয় সারই প্রয়োগ করা হয়। পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য পর্যান্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের দরকার হয়। তাছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, কপার, জিংক প্রভৃতি যৌগের দরকার হয়। পুকুরে যে চুন দেয়া হয় তা ক্যালসিয়ামেয় উৎস হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশের মাটিতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাল ব্যতীত বাকি মৌলগুলো চিংড়ির প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য মোটামুটি যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। তাই পুকুরে মাছেরু প্রাকৃতিক খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরির জন্য বাইরে থেকে কেবল নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সরবরাহ করলেই চলে।

সারের প্রকারভেদ: সার প্রধানত দু’ধরনের, যথা

ক) জৈব সার, যেমন- গোবর, কম্পোস্ট ইত্যাদি।

খ) অজৈব সার, যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ইত্যাদি।

প্রয়োগ মাত্রা

ক) গোবর= ৮-১০ কেজি/শতক ও কম্পোস্ট= ১০-১২ কেজি/শতক

খ) ইউয়িরা= ২০০ গ্রাম/শশুফ ও টিএসপি= ১০০ গ্রাম/শতক্ষ

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সার প্রয়োগে বিবেচ্য বিষয়সমূহ হলোঃ

ক) কী পরিমাণ সার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে তা নির্ভর করে মাটির গুণাগুণ ও উর্বরতা শক্তির উপর।

খ) সাধারণত বেলে মাটিতে যেখানে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কম থাকে সেখানে সারের পরিমাণ একটু বেশি দিতে হয়। আবার পলি মাটিতে যেখানে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে সেখানে পরিমাণ একটু কম। দিতে হবে।

গ) জৈব সারের পরিমাণ একটু বেশি দিলে অজৈব সারের পরিমাণ সে অনুপাতে কম দিলেই চলবে।

ঘ) জৈব সার খুব বেশি পরিমাণে দেয়া ঠিক না। কারণ জৈব সার পচে নাইট্রোজেন ও ফসফরাস মুক্ত করার সময় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে এর পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং পানিতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়।

ঙ) জৈব সার পুকুর শুকনো অথবা পানি থাকা অবস্থায় দেয়া যাবে। তবে শুদ্ধ অবস্থায় দিলে তা মাটির সাথে মিশানোর জন্য চাষ দিতে হবে।

চ) অজৈব সার ঢক্ষ পুকুরে দেয়া আখে না।

ছ) অজৈব সার চিংড়ি ছাড়ার ৪/৫ দিন পূর্বে দিতে হবে।

জ) সার বৃষ্টির দিনে না দিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঝ) পুকুর শুকনো থাকলে নাইট্রোজেনের উৎস হিসেবে ধৈঞ্চার চাষ করে ২ ফুট লম্বা হওয়ার আগেই মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।

অজৈব সার হতে পাওয়া যায়ঃ

ক) ইউরিয়া- নাইট্রোজেনের উৎস।

খ) টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ফসফরাসের উৎস।

 

চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষারত্ব ও খরতার প্রভাব। ৬ষ্ঠ অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

সাবধানতা

ক. সার খুব বেশি পরিমাণে দেয়া উচিত নয়। বিশেষ করে জৈব সার বেশি দিলে সেগুলো পচনের সময় পানি থেকে অধিক অক্সিজেন ব্যবহার করে পানিকে অক্সিজেন শুন্য করে ফেলে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে।

খ. অজৈব সার অধিক ব্যবহারে পুকুরে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের পরিমাণ অধিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে পানি খুব বেশি সবুজ হয়ে পুকুরের উপরিভাগে সবুজ বা বাদামি স্তর সৃষ্টি করে। যার ফলেও অক্সিজেনের অভাব ঘটে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment