ক্ষত রোগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ক্ষত রোগ যা  ইউনিট ৩ রোগ ও রোগের কারণ এর অংশ।

এ পাঠ শেষে আপনি-

কোন কোন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ক্ষতরোগ সৃষ্টি করে সেগুলোর নাম বলতে পারবেন।

পানির গুণাবলীর কিরূপ পরিবর্তনের ফলে ক্ষতরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তার বর্ণনা দিতে পরবেন।

ক্ষতরোগের লক্ষণ বলতে পারবেন।

 

ক্ষত রোগ

প্রসঙ্গ কথা

ক্ষতরোগ বর্তমানে মাছ চাষে একটি প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে এ রোগ প্রথম দেখা দেয়। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭২ সালে এ রোগ প্রথম শনাক্ত করা হয় বিশেষজ্ঞদের অভিমত অষ্ট্ৰেলিয়া থেকে পর্যায়ক্রমে নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্পুচিয়া, লাওস, মায়ানমার, ফিলিপাইন ৩ শ্রীলংকা হয়ে এ রোগ বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।

রোগজীবাণু ক্ষতরোগের সুনির্দিষ্ট রোগজীবাণু নিয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এ্যাপানোমাইসেস (Aphanomyces) নামক একপ্রকার ছত্রাক জলজ পরিবেশের বিশেষ অবনতিতে এ রোগ সৃষ্টি করে।

অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে এরোগ সৃষ্টি হয়। নিম্নবর্ণিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসসমূহ ক্ষতরোগ সংক্রমিত মাছের আক্রান্ত স্থান হতে শনাক করা হয়েছে। ধারণা করা হয় এগুলোর সম্মিলিত ক্রিয়ায় মাছের ক্ষতরোগ সৃষ্টি করে থাকে।

 

ক্ষত রোগ

 

ব্যাকটেরিয়া

আরোমনাস হাইড্রফিলস (Aeromonus hydrophils)

অ্যারোমনাস পাংটেটা (Aeromonus punctata)

কোনেব্যাকটেরিয়াম (Chromeobacterium sp.)

সাইট্রোব্যাকটেরিয়াম (Citrobacterium sp.)

এডওয়ারছিলা টারডা (Edwardriella tarda)

ফ্রেডোব্যাকটেরিয়াম (Flavobacterium sp.)

সিউডোমনাস (Pseudomonas sp)

স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococeus sp)

ভিবরিও এনকুইলেরাম (Vibrio anquillarum)

ভিবরিও প্যারাহেমোলাইটিকা (Vibrio parahaemolyticus)

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ভাইরাস

র‍্যাবডোভাইরাস (Rhabdovirus)

বির্ণাভাইরাস (Bima virus )

রিওভাইরাস (Reovirus ) পিকর্ণা ভাইরাস (Picorna virus)

রোগের বিস্তার

চাষযোগ্য সব মাছেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে জিওল মাছ, যথা- শোল, টাকি, গজার এবং ছোট মাছ, পুঁটি, মেনি, টেংরা ইত্যাদিতে এরোগের অধিক সংক্রমণ ঘটে থাকে। কম তাপমাত্রায় ও জলাশয়ের বিরূপ পরিবেশে এ রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। পানির গুণাবলীর নিম্নরূপ পরিবর্তনে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকেঃ অম্লতা

বৃদ্ধি,  পি.এইচ (p)- এর কমতি (৪-৬)

ক্ষারত্ব (alkalinity) হ্রাস পাওয়া (৬৫-৭৫ পিপিএম)

– তাপমাত্রা কমে যাওয়া (৭-১৯ সেলসিইয়াস – ক্লোরাইডের ঘাটতি (৬-৭.০ লিপিএম)

শীতকালের প্রান্ত থেকে বর্ষা তার পূর্ব পর্যন্ত এরোগের সংক্রমণ চলতে থাকে। কম বৃষ্টিপাতে এরোগের সংক্রমণের ব্রতা বৃদ্ধি পায়। উল্লিখিত কারণে জলজ পরিবেশের ভারসাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হলে আরোমনাস হাইড্রফিলা এবং আরোমনাম সোরবিয়া দেবে । পরবর্তীতে উক্ত ক্ষতস্থানসমূহ ছত্রাক, অন্যান্য রোগজীদের সৃষ্টি করে। ক্ষতরোগ মাছের মারাত্মক সংক্রামক রোগ ।

 

ক্ষত রোগ

রোগের লক্ষণ

  • প্রাথমিকভাবে মাছের গায়ে লাল দাগ দেখা যায় এবং পরবর্তীতে উক্ত স্থানে গভীর ক্ষতের হয়।
  • মাছ খুব দূর্বল হয় ও ভারসাম্যহীনভাবে পানির উপর ভেসে থাকে। .
  • মাছ অস্বাভাবিক ও নিষ্ক্রিয়ভাবে ধীরে ধীরে সাঁতার কাটে।
  •  আক্রান্ত মাছ খাদ্যগ্রহণে অনীহা দেখায়।
  • আক্রান্ত স্থানে যা হয় এবং ঘা থেকে পুঁজ ও তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়।
  •  মারাত্মক আক্রান্ত মাছের লেজ ও পাখনা এসে পড়ে।
  • মাছের চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
  •  আক্রান্ত মাছ ১০-১৫ দিনের মা মারা যায়

 

অনুশীলন ( Activity) : বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে ক্ষতরোগ মারত্মক আকারে দেখা দিয়েছে সেসব এলাকার একটি তালিকা তৈরি করুন।

সারমর্ম :

বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে মাছের ক্ষতরোগ প্রথম শনাক্ত করা হয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে পানিবাহিত হয়ে এ রোগ বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস এবং পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণে এ রোগ সৃষ্টি হয়।

চাষযোগ্য প্রায় সব মাছেই ক্ষতরোগ আক্রান্ত হয়। জিওল মাছে ক্ষতরোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। পানির অম্লতা বৃদ্ধি, ক্ষারত্বহ্রাস, তাপমাত্রা হ্রাস এবং ক্লোরাইডের ঘাটতিতে ক্ষতরোগের | প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। শীতের শুরু থেকে বর্ষার পূর্ব পর্যন্ত এরোগের প্রকোপ দেখা যায়। মাছ চাষে ক্ষতরোগ একটি প্রধান সমস্যা। এটি একটি মারাত্বক সংক্রামক রোগ। পুকুরের পরিবেশে নিয়ন্ত্রণ করে, বিশেষ করে পরিমিত মাত্রায় চুন প্রয়োগ করে ক্ষত রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment