আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য খাতের ভূমিকা – যা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ এর অন্তর্ভুক্ত।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য খাতের ভূমিকা
কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে মৎস্য সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মৎস্যসম্পদ থেকে এ দেশের প্রায় ১২ লক্ষ লোকের সার্বক্ষণিক কর্মসংস্থান হয়। এর পাশাপাশি প্রায় ১.২ কোটি লোক মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে খণ্ডকালীন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ লোক জীবিকা অর্জনের জন্য মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মৎস্যসম্পদ সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-
১. নদী ও খাড়ি অঞ্চলে মৎস্য আহরণ :
দেশের অসংখ্য নদ-নদী ও খাড়ি অঞ্চলে প্রায় ৪ লক্ষ মৎস্যজীবী ইলিশ ও অন্যান্য মাছ আহরণে নিয়োজিত বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের শতকরা ১০-১৫ ভাগ আসে ইলিশ থেকে। বর্তমান প্রাপ্যতার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬৪ শতাংশ ইলিশ সমুদ্র ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা হতে এবং বাকি ৩৬ শতাংশ ইলিশ বিভিন্ন নদ-নদী থেকে আহরিত হয়।
২. সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মৎস্য আহরণ :
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। এ বনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত আধা-লবণাক্ত পানির নদী, খাড়ি ও খাল বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব এলাকায় সারা বছর ধরে প্রায় লক্ষাধিক জেলে মৎস্য ও মাৎস্য সম্পদ আহরণের সাথে জড়িত।

৩. হাওর ও প্লাবনভূমি অঞ্চলে মৎস্য আহরণ :
দেশের হাওর ও প্লাবনভূমি এলাকায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার মৎস্যজীবী বছরের প্রায় অর্ধেক সময় বিভিন্নভাবে মাছ আহরণের সাথে জড়িত থাকে। উল্লেখ্য যে, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে হাওর ও প্লাবনভূমি ।
৪. উপকূলীয় চিংড়ি চাষ :
দেশের উপকূলীয় এলাকায় ছোট বড় প্রায় ২০-২৫ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে যা চিংড়ি চাষ এলাকা নামে পরিচিত। এসব ঘেরে আনুমানিক ১.৫ লক্ষ কর্মী সারা বছরের জন্য কর্মে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
৫. মৎস্যচাষ ও মৎস্য প্রজনন :
দেশে প্রায় ১৯ লক্ষ পুকুর-দিঘি রয়েছে। এসব পুকুর-দিঘিতে লক্ষ-লক্ষ লোক লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছচাষ করছে। এতে দেশে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এবং বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশে মাছচাষ কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এ ছাড়াও দেশে প্রায় দুই হাজারের বেশি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে এবং এসব প্রজনন কেন্দ্রে সারা বছর প্রায় লক্ষাধিক কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
৬. সমুদ্র উপকূলীয় মৎস্য আহরণ :
আমাদের সামুদ্রিক মৎস্য-আহরণের প্রায় সবটাই উপকূলীয় অগভীর সাগরে ছোট ছোট নৌকার সাহায্যে হয়ে থাকে। এ কাজে আনুমানিক ৩ লক্ষ জেলে সারা বছর মৎস্য আহরণে নিয়োজিত রয়েছে।
৭. গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ :
অতি সম্প্রতি গভীর সমুদ্রে মৎস্য-আহরণের প্রক্রিয়া চলছে। এ লক্ষে নতুন নতুন ফিশিং ভ্যাসেল ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। অতি সম্প্রতি মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা গভীর সমূদ্রে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মালিকানা অর্জন করেছি।
বিশাল এ সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে । উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়াও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিপণন, মৎস্য খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণ, মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ ইত্যাদি কর্মে সরকারি ও বেসরকারি আরও ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লোক নিয়োজিত রয়েছে। ভবিষ্যতে মৎস্যচাষ বাড়ার সাথে সাথে এ সেক্টরে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায় ।
আরও দেখুনঃ