ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় পুষ্টির মধ্যে ভিটামিন অন্যতম। ভিটামিন অতি অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর অভাবে জীবের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ ভিটামিন প্রাণীর শরীরে তৈরি হয় না। তাই বাইরে থেকে ভিটামিন মাছের খাবারের সাথে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রাণীদেহে বিপাকীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য ভিটামিন অতীব গুরুত্বপূর্ণ ।

ভিটামিন

ভিটামিন বলতে বুঝায় এক ধরনের অদৃশ্য জৈব পদার্থ যা জীবের বর্ধন ও বেচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এগুলো কোষে বিপাক ক্রিয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রায় ১৫ ধরনের ভিটামিন জৈব পদার্থ থেকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। এদের সবগুলোই একই প্রজাতির মাছের জন্য প্রয়োজনীয় নয়।

কোন ভিটামিন কোন মাছের জন্য প্রয়োজন তা মাছের প্রজাতি, বর্ধনের হার, খাবারের প্রকৃতি ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। ভিটামিন হরমোনের চেয়ে ভিন্নতর, কারণ ভিটামিন প্রধানত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহে সরবরাহ হয়ে থাকে। অন্যদিকে দেহের নির্দিষ্ট গ্রন্থি থেকে হরমোনসম হ সংশ্লেষিত হয়।

প্রবণীয়তার ওপর ভিত্তি করে ভিটামিনকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়

  • পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন এবং
  • তৈলজাতীয় পদার্থে দ্রবীভূত ভিটামিন

সারণি ১১ এ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন দেখান হলো-

সারণি ১১ : পানিতে দ্রবীভূত ও তৈল জাতীয় পদার্থে দ্রবীভূত ভিটামিনের তালিকা

 

ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

 

ভিটামিনের দার্শনিক মতবাদ ও ঐতিহাসিক পটভূমিকা

ভিটামিন আবিষ্কারের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী খুবই চমকপ্রদ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে পুষ্টিবিদগণ মনে করতেন যে একটি সুষম খাদ্যে প্রক্সিমেট উপাদান (Proximate composition) যেমন- আমিষ, হে, শর্করা, খনিজ লবণ এবং পানি সুনির্দিষ্টি পরিমাণে থাকা প্রয়োজন। এই ভিত্তিতে বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ ও গুণগতমান নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

১৮৭১ সালে প্যারিস শহর অবরোধ কালে দুধের অভাব প রণ করতে শিশু খাদ্যে এলবোমিন জাতীয় তরল পদার্থ, শর্করার অভাবে শিশুদের অপুষ্টিতে ভুগতে দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে অজানা পুষ্টি উপাদানকে দায়ী করা হয়। বিভিন্ন প্রাচীন রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, খাদ্যে বিশেষ উপাদানের অনুপস্থিতির কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দিত।

১৫০০ সালে জেস কার্ডিয়ার (Jacques Cartier) নামক একজন বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন যে, পাইন গাছের কাঁটার নির্যাসের (infusion of pine needles) সাহায্যে স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পরবর্তীতে জেমস লিও (Jams Lind ) ১৭৫৩ সালে লেবু জাতীয় ফলের রসের সাহায্যে স্কার্ভি রোগের চিকিৎসায় সফলতা লাভ করেন।

জাপানী নৌবাহিনীর নাবিকদের বহুদিন সমুদ্রে থাকার ফলে অধিকাংশের বেরিবেরি ( beriberi) রোগে (যা একটি ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ) আক্রান্ত হতে দেখা যেত। ১৮৮০ সালে তাকাকি (এধশষশর) অনেক গবেষণার পর নাবিকদের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনেন। খাদ্য তালিকায় মাংস, শাক শবজি এবং দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে নাবিকদের স্বাস্থ্যের নাটকীয় উন্নতি ঘটে। এর পর থেকে খুব কম সংখ্যক নাবিকদের এই রোগ দেখা যায়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পৃথিবীর যেসব দেশে মানুষের প্রধান খাদ্য ছাঁটাই করা (Polished) চাউল যেখানে বেরিবেরি রোগের প্রানুভাব দেখা যায়। ১৮৯৭ সালে Eijkman নামক একজন ডাচ চিকিৎসক জাভা দ্বীপে খাদ্যে চাউলের কুঁড়া সংযোজনের মাধ্যমে বেরিবেরি রোগের উপসম করতে সমর্থ হন। তিনি মুরগিকে ছাটাই করা চাউল খাওয়ানোর মাধ্যমে বেরিবেরি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বহুবিদল্লায় প্রদাহের মত উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করেন।

অন্যদিকে যে সমস্ত মুরগিকে অছাটাইকৃত চাউল খাওয়ানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে এই রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। কোন কোন সময় ছাটাইকৃত চাউলের কুঁড়ার নির্যাস ব্যবহার করে বেরিবেরি রোগের উপসর্গসমূহ থেকে তড়িৎ আরোগ্যলাভ সম্ভব হয়েছে। উপরিউক্ত গবেষণার প্রেক্ষিতে পেলেহারিং (Pekelharing) নামক একজন বিজ্ঞানী পুনরায় বিশুদ্ধ। খাদ্য উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে একটি গবেষণা কাজ পরিচালনা করেন।

তিনি বিশুদ্ধ খাদ্য উপাদান ইঁদুরকে খাওয়ান এবং দেখেন যে প্রথমাবস্থায় তারা ভালভাবে খায় এবং তাদেরকে স্বাস্থ্যবান দেখায়। কিন্তু চার সপ্তাহ পর সবগুলো ইঁদুর মারা যায়। ইঁদুরের খাদ্যে যদি পানির পরিবর্তে দুধ অথবা ঘোল খাওয়ানো হয় তাহলে তারা বেঁচে থাকে। উপসংহারে তিনি বলেন যে, দুধে একটি অজ্ঞাত উপাদান আছে এবং তা খুব সামান্য পরিমাণে হলেও পুষ্টির জন্য অতীব আত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের অসবোর্ন এবং মেন্ডেল (Osborne and Mendel) পৃথকভাবে ইঁদুরের ওপরে একই ধরনের গবেষণা কার্য পরিচালনা করেন। তাঁরা শস্যদানা থেকে পৃথককৃত বিশুদ্ধ প্রোটিন (Purified protein) এর পুষ্টিমান যাচাই করে দেখেন যে, যদি খাদ্যে দুধ সংযোজন করা না হয় তাহলে ইঁদুরের বৃদ্ধি থেমে যায়, এমনকি ওজনেও কমে যায়। ১৯১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকুলাম (McCollum) এবং ইংল্যান্ডের হপকিন্‌স ( Hopkins) তাদের গবেষণায় একই ধরনের ফল লাভ করেন।

আবার ১৯১১ সালে ফাংক (Funk) চাউলের কুঁড়া থেকে দানাদার (Crystalline) পদার্থ পৃথক করেন, যা কবুতরের বহুবিধল্লায়ুপ্রদাহ প্রতিরোধ এবং উপসমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তার বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে, ঐ পদার্থটিতে মূল উপাদান হিসেবে নাইট্রোজেন বিদ্যমান এবং যা সম্ভবত আমাইন (Amine)।

 

ভিটামিন, দার্শনিক মতবাদ, ঐতিহাসিক পটভূমিকা

 

যেহেতু এটি জীবনের জন্য অপরিহার্য্য তাই এটির নামকরণ করেন “Vitamine” পরবর্তীতে এই বানানটি পরিবর্তন করে “Vitamin” করা হয় এবং খাদ্যে পাওয়া যায় এমন একই ধরনের উপাদানকে কোন রাসায়নিক গঠন ব্যতিরেকে ভিটামিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment