বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি | অধ্যায়-২ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি । যা ” বাগদা চিংড়ির গুণগতমান সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি

 

বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি | অধ্যায়-২ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

হিমায়ক যন্ত্রের প্রকারভেদ (Types of freezer)

মাছ বা চিংড়ির হিমায়িতকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের হিমায়ক যন্ত্র বা ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত কয়েকটি হিমায়ক যন্ত্রের বিবরণ দেয়া হলো:

১. এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার (Air blast freezer)

২. কন্টাক প্লেট ফ্রিজার (Contact platefreezer)

৩. ইমারসন ফ্রিজার (Immersion freezer)

৪. সার্প ফ্রিজার (Sharp freezer)

৫. অন্যান্য ফ্রিজার (Other freezers)

১. এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার (Air blast freezer)

যে হিমায়ক যন্ত্রের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের বাম্প প্রবাহিত করে চিংড়ি বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যকে হিমায়িত- করণ করা হয়, তাকে এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার বলে। এটি দু’প্রকার, যথা:

ক) সার্বক্ষণিক ফ্রিজার (Continuous freezer): এতে হিমায়িতকরণের সময় উৎপাদন ঘুরতে থাকে। যেমন হিমাগারের ভিতর এক পাশ দিয়ে চিংড়ি ঢাকোনো হয় এবং অন্য পাশ দিয়ে বের করা হয়। খ) ব্যাচ ফ্রিজার (Bacth freezer): এর ভিতর উৎপাদন স্থির থাকে। যেমন- হিমাগারের ভিতর এক ব্যাচ চিংড়ি ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ধরে রেখে দেয়া হয়।

বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি

এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারে সাধারণত সুড়ঙ্গ পথযুক্ত একটি পৃথককৃত ঘর, যার মধ্যে ইভাপােেরটরের উপর দিয়ে এক বা একাধিক ফ্যানের মাধ্যমে উৎপন্ন বায়ু যাকে অ্যামোনিয়া (NH,), ঠান্ডা লবণ পানি অথবা রেফ্রিজারেন্ট (refrigerant) ১২ বা ২২ ঘণ্টা দিয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে, তা যে দ্রব্যকে হিমায়িতকরণ করা হবে তার চারপাশে দিয়ে প্রবাহিত করা হয়।

এই ফ্রিজারের পৃথককৃত ঘরের মধ্যে সাধারণত একবারেই সম্পূর্ণরুপে সেলফের র্যাকে চিংড়ি ভর্তি করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যাককে ঘূর্নায়মান অবস্থায় অথবা স্থির রাখা হয়। সাম্প্রতিককালে উন্নত ফ্রিজারে চিংড়ি উৎপাদনকে সর্বক্ষণ নাড়াচাড়া করানোর জন্য কনভেয়র (conveyor) ব্যবহার করা হয়।

এই ধরনের অধিকাংশ ফ্রিজারে বাস্তুর তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫° থেকে মাইনাস ৪০° সে. এর মধ্যে রাখা হয়। অধিকাংশ অর্থনৈতিক সুবিধাজনক হিমায়িতকরণ করানোর জন্য উৎপদেনের উপর দিয়ে এই ঠান্ডা বাতাস প্রবাহের পতি সাধারণত ৫০০-১০০০ এফপিএম (ফুট পার মিনিটি) এর মধ্যে রাখা হয়। এরূপ ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ করতে সময় লাগে ৬-৮ ঘণ্টা।

২. কন্টাক্ট প্লেট ফ্রিজার (Contact plate freezer)

এই হিমায়ক যন্ত্রে চিংড়িকে সরাসরি প্লেটের উপর রেখে ধীরে ধীরে হিমায়িতকরণ করা হয়। এরূপ ফ্রিজারের চিংড়িকে ফাঁপা ধাতুর প্লেটের মধ্যে রাখা হয়, যার ভিতরে যে কোনো একটি রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করানো হয়। এটি দু’প্রকার, যথাঃ

ক) অনুভূমিক কস্টাক্ট প্লেট ফ্রিজার: এতে ট্রের মধ্যে বসানো চিংড়ির চ্যাপ্টা প্যাক ব্যবহার করা হয়।

খ) উলম্ব কন্টাক্ট প্লেট ফ্রিজার: প্রধানত বড় ধরনের বক তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

বাণিজ্যিক পদ্ধতি

কন্টাক্ট প্লেট ফ্রিজারে একটি ক্যাবিনে বা ঘরের চলাচলক্ষম অনুভূমিক প্লেটগুলোর উলম্বভাবে গাদা দেওয়া থাকে। প্লেটগুলোকে সংযুক্ত পথের মাধ্যমে ঠান্ডা লবণ পানি, NH,, বা রেফ্রিজারেন্ট ১২ বা ২২ ঘণ্টা দিয়ে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা থাকে। এই ধরনের ফ্রিজার গাটবন্দি (packaged) মৎস্য উৎপাদের জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি বক চিংড়িসহ ৫০-৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বকের তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫° সে হয়ে থাকে। মৎস্য উৎপাদকে তাড়াতাড়ি ফ্রিজিং করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

৩. ইমারসন ফ্রিজার (Immersion freezer)

এক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রার তরল পদার্থ উৎপাদকে ডুবানো বা নিমজ্জন করা হয়। এ ধরনের ঠান্ডা তরল পদার্থের মধ্যে চিংড়িকে রেখে সরাসরি তার দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের ঠান্ডা বাতাস থেকে উৎকৃষ্ট। পানি থেকে এই ধরনের তরল পদার্থের ফ্রিজিং পয়েন্ট বেশি হয়ে থাকে।

৪. সার্গ ফ্রিজার (Sharp freezer)

সার্প ফ্রিজার একটি পৃথককৃত ঘর এবং সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ২৫° সে রাখা হয়। এখানে একাধিক পাইপের কয়েল দিয়ে তৈরি সেলফ রাখা হয়। যার ভিতর দিয়ে ঠান্ডা লবণ পানি, ঘঐ, অথবা অন্যান্য রেফ্রিজারেন্টকে প্রবাহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে চিংড়িকে হিমায়িতকরণের সময় সরাসরি সেলফ রক্ষিত প্লেটের উপর রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদের সব অংশ পাইপের সংস্পর্শে থাকতে পারে না। এই পদ্ধতি অনেক পুরাতন বলে বর্তমানে এর ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত।

৫. অন্যান্য ফ্রিজার

ক) তরল নাইট্রোজেনের হিমায়িতকরণ তাপমাত্রা মাইনাস ১৯৬° সে। তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করেও চিংড়ি/মাছ হিমায়িত করা হয়।

খ) CO,, ফ্রিজান্ট (freezant) ব্যবহার করে অনেক সময় চিংড়ি/মাছ হিমায়িত করা হয়।

তাজা বা টাটকা চিংড়ি বা মাছ হিমায়িতকরণের সময় সৃষ্ট প্রধান সমস্যাসমূহ হলোঃ

ক) জারণের ফলে নষ্ট হওয়া।

খ) পানি বের হয়ে যাওয়া।

গ) ভজ্জ্বরতা বৃদ্ধি পাওয়া:

ঘ) অটোলাইসিসের সমস্যা।

ঙ) প্রোটিন ভেঙে নষ্ট হয়ে যাওয়া। এবং

চ) অণুবীক্ষণিক জীবের সমস্যা ইত্যাদি।

ফ্রিজার বার্ন (Freezer burn)

এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের ঠান্ডা বাতাসের গতিবেগ ৫০০ এফপিএম-এর নিচে হলে চিংড়ির উপর একটি সাংঘাতিক ধরনের প্রভাব পড়ে। এই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাবকে ফ্রিজার বার্ন বলে। এই অবস্থায় চিংড়ির পারিপার্শ্বিক জলীয় বাষ্পের চাপ কমে যায়, ফলে চিংড়ির দেহে থেকে পানি বের হয়ে যেতে থাকে এবং চিংড়ি শক্ত হয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ ছাড়া চিংড়ির বর্ণ, গঠন ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায়।

গ্রেজিং (Glazing)

এটি ফ্রিজার বার্ন থেকে চিংড়িকে রক্ষা করার একটি পদ্ধতি। চিংড়ির দেহ থেকে যাতে সহজে পানি বের হয়ে যেতে না পারে, সেজন্য এই প্রক্রিয়ায় চিংড়ির দেহের চারপাশে বরফের একটি আন্তরণ সৃষ্টি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় খুবই অল্প সময়ের জন্য খুব নিম্ন তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্প দ্রবণে চিংড়িকে ডোবানো হয়। ফলে চিংড়ির দেহের চারিদিকে বরফের একটি আস্তরণ পড়ে এবং চিংড়ির দেহ থেকে পানি বের হতে বাধা পায়।

এইং (Thawing)

এইং হলো হিমায়িতকরণের পরের একটি পরিচর্যা যাতে চিংড়ির দেহে কোথাও কোনো বরফ থাকে না। এরূপ অবস্থা তখনই ঘটে যখন চিংড়ির দেহের সর্বত্রই তাপমাত্রা ১ সে এর উপরে থাকে।

চিংড়ি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্যাকেজিং-এয় গুরুত্ব

চিংড়ি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্যাকেজিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। চিংড়ি পণ্যকে বাতাসের আর্দ্রতা, পোকা-মাকড়, ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই ভালোভাবে প্যাকেজিং করা উচিত। ভালো প্যাকেজিং করে না রাখলে চিংড়ি পণ্যের গুণগতমান অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।

 

বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারের হিমায়িতকরণ পদ্ধতি | অধ্যায়-২ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত চিংড়ি পণ্য তৈরি ও বাজারজাতের জন্য উন্নত প্যাকেজিং-এর গুরুত্ব

ক) প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের মানের একটা প্রতিচ্ছবি ক্রেতা/বিক্রেতার নিকট ভেসে উঠে।

খ) প্যাকেজিংয়ের ধরন থেকে অতি সহজেই বুঝে নেয়া যায় পণ্যটি কত ভালোভাবে সক্ষণ করা আছে বা সম্প্রক্ষিত থাকবে।

গ) ভালোভাবে প্যাকেজিং করা থাকলে বিক্রেতা পণ্যটি সুবিধামত স্থানে ও সুবিধামত সময়ে বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ ও স্থানান্তর করতে পারে।

ঘ) ক্রেতাও সবসময় ভালো প্যাকেজিং করা পণ্য ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment