উপবাস ও বর্ধন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – উপবাস ও বর্ধন

উপবাস ও বর্ধন

 

উপবাস ও বর্ধন

 

উপবাস

মাছ ও অন্যান্য শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো যে, এরা বেশ কিছু দিন উপবাস অর্থাৎ কোন খাদ্য গ্রহণ না করে থাকতে পারে। অর্থাৎ কোন প্রকার খাদ্য না দিলেও এরা অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে। উপবাসের ফলে অবশ্যই শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মাছের উপবাস করার ক্ষমতা অধিক তাপমাত্রার পানি অপেক্ষা অধিক ঠাণ্ডা পানিতে বেশি।

উষ্ণ পানির কার্পজাতীয় মাছ খুব ঠান্ডা তাপমাত্রায় খাবার গ্রহণ একেবারেই বন্ধ করে দেয়। উলে-খ্য যে, ছোট মাছগুলো উপবাসজনিত কষ্ট দ্রুত অনুভব করে থাকে। বড় মাছ অতি সহজে উপবাসের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। উপবাসের ফলে বিপাক ক্রিয়া হ্রাস পায় এবং নিজস্ব সঞ্চিত পুষ্টি পদার্থ দ্বারা প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান হয়ে থাকে। উপবাসের ফল পেতে খুব বেশি দেরী হয় না। এর লক্ষণ দ্রুত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে বিশেষ করে যকৃতে লক্ষণীয় হয়ে উঠে।

এক বা দুই বছরের কার্পজাতীয় মাছে ১০- ২০° সে. এ মাত্র ৭ দিনের উপবাসে যকৃতের ওজন শতকরা ৩০ ভাগ এবং ১৫ দিন পর শতকরা ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়ে যায়। এ সময়ে চর্বির পরিমাণ প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ হ্রাস পায়। উপবাসের ফলে মাছের যকৃতের আমিষ কমে যায়। যেহেতু যকৃতের প্রোটিন রক্তের সুগার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, সুতরাং রক্তের সুগারের পরিমাণ ও উপবাসের ফলে হ্রাস পায়।

উপবাসের ফলে পানি হ্রাসের কারণে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও হিমাটোক্রিটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে এর সবগুলোই হ্রাস পেতে থাকে। উপবাস মাছের মাংসপেশীতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর মাংসপেশীর ওজন কমিয়ে দেয়।

এর ফলে লাল মাংসপেশীর তুলনায় সাদা মাংসপেশীতে আমিষ ও গাইকোজেনের পরিমাণ অধিক হারে কমিয়ে আনে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে আরও একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে খাবারের স্বল্পতা বা পুরো উপবাস মাছের RNA DNA এর মাত্রা কমিয়ে আনে।

বর্ধন

শরীরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয় তার থেকে অধিক খাদ্য দিলে শরীরের বর্ধন সাধিত হয়। বর্ধনের ফলে মাছের আকার ও আয়তন এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন মাছের বর্ধনের হার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কার্পজাতীয় মাছ দ্রুত হারে অধিক বড় হয়, কিন্তু কই মাছ প্রকৃত বাড়েনা। আবার অধিক বড়ও হয় না।

কোন একক সময়ে মাছের বর্ধনের পরিমাণকে বর্ধন-হার (growth rate) বলা হয়। বর্ধনের হার সাধারণতঃ বিশেষ বর্ধন হার (Specific Growth Rate or SGR) হিসেবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এস.জি.আর বলতে মাছের/জীবের প্রারম্ভিক ওজনের বর্ধন শতকরা কত হারে হচ্ছে তা বুঝায় এবং নিচে বর্ণিত সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

InPt-InPo

বর্ধন/দিন (%) = —————– x 100

t

এখানে হলো খাবার প্রদানের মোট দিন, P, মাছের বর্তমান ওজন, P. মাছের প্রাথমিক ওজন এবং In = natural log |

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

যদি মাছের প্রাথমিক ও বর্তমান ওজন জানা থাকে এবং কতদিন মাছকে খাবার দেয়া হচ্ছে তা জানা থাকে তাহলে উক্ত স ঐ দ্বারা সহজে মাছের বিশেষ বর্ধন হার এস.জি. আর. নির্ণয় করা যায়। সার্বিকভাবে বিপাক ক্রিয়া ও বর্ধন নানা ধরনের পারিবেশিক প্রভাব দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে পানির তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, আলো, মজুদের হার, খাদ্য সরবরাহ ও খাদ্যের গুণাগুণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পারিবেশিক প্রভাবগুলোর মধ্যে তাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মাছের বর্ধন শীতপ্রধান দেশের তুলনায় অনেক বেশি। প্রজাতি ভেদে মাছের বর্ধন- এর জন্য সর্বোচ্চ অনুকূল তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। কার্পজাতীয় মাছ ২৮ ৩০ সে. তাপমাত্রায় অধিক বর্ধন লাভ করে। দ্রবীভূত গ্যাসের মধ্যে বর্ধনের জন্য অক্সিজেনের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতি প্রজাতির মাছের জন্য অক্সিজেনের সর্বোচ্চ অনুকূল মাত্রা লক্ষ্য করা যায়।

যেমন- অক্সিজেনের পরিমাণ ৬-৭ মিলিগ্রাম/ লিটার হলে কার্পজাতীয় মাছ অতিদ্রত বর্ধন লাভ করে এবং সরবরাহকৃত খাদ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে ৪-৫ মিলিগ্রাম/লিটার হলে কার্পজাতীয় মাছের খাদ্য গ্রহণ, বর্ধন ও খাদ্যের ব্যবহার দারুনভাবে কমে যায়। মজুতের ঘনত্ব বর্ধনের হারকে প্রভাবিত করে থাকে।

সাধারণত অধিক হারে মাছ মজুত করলে মাছের বর্ধন কমে যায়। অধিক হারে মাছ মজুত করলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার (NH) পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে মাছ মারা যেতে পারে। আশাপ্রদ বর্ধন লাভের জন্য সুষম খাবারের বিকল্প নাই। খাবারে পরিমাণ মত আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় উপাদান থাকতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ও ভিটামিন খাবারের সাথে প্রয়োগ করতে হবে।

 

উপবাস ও বর্ধন

 

মনে রাখতে হবে প্রজাতি ভেদে মাছের পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন রকম। তাই কোন্ প্রজাতির মাছের চাষ করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে মাছের জন্য সুষম খাবার প্রস্তুত করে মাছকে দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে সুষম খাবার প্রয়োগ করা হলে ১ – ১০০০ গ্রাম কার্পজাতীয় মাছের বর্ধন কত হবে তা নিচের সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা যেতে পারে :

ওজন = ৭.৯৩ × ১০ : ৫/2

এখানে ওজন = সর্বোচ্চ বর্ধন এবং খাবার প্রয়োগের দিন সংখ্যা।

আরও দেখুন :

Leave a Comment