আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – উদ্ভিদজাত খাদ্য উপাদানে পুষ্টিবিরোধী দ্রব্যসমূহ এবং তার ব্যবস্থাপনা
উদ্ভিদজাত খাদ্য উপাদানে পুষ্টিবিরোধী দ্রব্যসমূহ এবং তার ব্যবস্থাপনা
উদ্ভিদজাত খাদ্য উপাদানে পুষ্টিবিরোধী দ্রব্যসমূহ এবং তার ব্যবস্থাপনা
উদ্ভিদজাত খাদ্য উপকরণে যে সমস্ত পুষ্টিবিরোধী উপাদান রয়েছে তাদেরকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় :
প্রোটিন (Protein) : প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর (Protease inhibitor), হিমাগ্লোটিনিন (Haemaglotinin)
গ্লাইকোসাইজ (Glycosides) : সেপোনিন (Saponine), ফাইটিক এসিড (Phytic acid) , গ্লুকোসাইনোলেট (Glucosinolate )
ফিনলস (Phenols) : গসিপল (Gossypol), ট্যানিন (Tanins)
অন্যান্য : এনজাইম বিরোধী দ্রব্যাদি, ভিটামিন বিরোধী দ্রব্যাদি, বিষাক্ত অ্যামাইনো এসিড ফুড এলার্জেন (Food allergen) ইত্যাদি
এসব দ্রব্যাদির ক্ষতিকারক প্রভাবের ফলে মৎস্য খাদ্যে উদ্ভিদ-জাত দ্রব্যাদির ব্যবহারের নিরাপদ মাত্রা/পরিমাণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর (Protease inhibitor)
প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর হলো এমন সব দ্রব্যাদি যা প্রোটিনকে ভঙ্গনকারী এনজাইমসম হের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এগুলো উদ্ভিদজাত খাদ্য উপকরণ, বিশেষ করে সয়াবিন মিলে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন- সয়াবিন মিলে পাঁচ ধরনের প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর পাওয়া যায়।
এগুলো কখনো কখনো বিশেষ কোন অ্যামাইনো এসিডের বিপাককে প্রভাবিত করে থাকে, যেমন- সিটিন (Cysteine) । তবে প্রায় সব ধরনের প্রোটিয়েজ ইনহিবিটরই তাপ-প্রবণ এবং তাপে অথবা সিদ্ধ করলে এরা এদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
হিমাগে- টিনিন (Haemaglotinin)
হিমাগে-টিনিন অথবা লেকটিনস (Lectins) এক ধরনের প্রোটিন, যার শর্করা বা চিনির প্রতি বিশেষ আসক্তি আছে। এগুলো রক্তের লোহিত কণিকাকে জমাট করে ফেলে। সাধারণত এদেরকে উদ্ভিদের বীজে পাওয়া যায়। তবে গাছের কন্দ, মূলেও পাওয়া যায়। এইসব লেকটিন প্রাণীর পরিপাক নালী থেকে শরীরে পুষ্টি শোষণকে বাধাগ্রস্থ করে। ফলে প্রাণীর বৃদ্ধি কমে যায়। প্রোটিয়েজ ইনহিবিটরের ন্যায় এগুলোও তাপ-প্রবণ।

ফাইটিক এসিড (Phytic acid)
শসা বীজ এবং তৈল বীজ উপকরণ, যেগুলো সচরাচর মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেসব উপকরণে ফাইটিক এসিড পাওয়া যায়। এই ফাইটিক এসিড সাধারণত দ্বি-যোজী মিনারেলসমূহ যেমন Ca Mg, Zn, Phosphorus ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে অদ্রবনীয় ফাইটেট এ রূপান্তরিত হয়। ফলে মাছের অন্তে এসব মিনারেলস শোষিত হতে পারে না।
অনেক সময় ফাইটিক-এসিড খাদ্যের প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে খাদ্যের প্রোটিনের পরিপাচ্যতা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন খনিজ উপাদান মাছের দেহে সঠিকভাবে শোষিত না হলে মাছে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
গ্লুকোসাইনোলেট (Glucosinolate )
বিভিন্ন তৈলবীজ, যেমন- রাইসরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ইত্যাদিতে গু-কোসাইনোলেট পাওয়া যায় । এই গুকোসাইনোলেট নির্দিষ্ট এনজাইম, যেমন- সাইরোসাইনেজ দ্বারা আর্দ্র বিশেষিত হয়ে থায়োসায়ানেট বা আইসো-থায়োসায়ানেট তৈরি হয়। এসব দ্রব্যাদি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি খাদ্যের আয়োডিন শোষণ করতে পারে না।
থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যাবলী বাধাগ্রস্থ হওয়ায় মাছের বৃদ্ধি ও ব্যাহত হয়। রাইসরিষা এবং সরিষার খৈল মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিধায় এই সব উপকরণে পুষ্টিবিরোধী উপাদানের উপস্থিতি এর গুণগত মান কমিয়ে দেয়। তাপ প্রয়োগ অথবা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এই গ্লুকোসাইনোলেটের পরিমাণ বা এর কার্যকারিতা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
গসিপল (Gossypol)
ত লাবীজ মাছের খাদ্যের একটি অন্যতম উপকরণ কিন্তু গসিপলের উপস্থিতি প্রাণীজ খাদ্যে এর ব্যবহারকে সীমিত করে দেয়। সাধারণত এটি তুলা বীজের রঞ্জক গ্রন্থিতে থাকে। খাদ্যে উচ্চ মাত্রার গসিপলের উপস্থিতি মাছের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। তাছাড়া এটি মাছের যকৃৎ (Liver) ও বৃক্কে (Kidney) বিরূপ প্রভাব ফেলে। গসিপল লাইসিন নামক অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের সাথে যুক্ত হয় এবং মাছের দেহে এই অ্যামাইনো এসিডের প্রাপ্যতা কমিয়ে দেয়।
উল্লিখিত পুষ্টি-বিরোধী উপাদানগুলোর প্রায় সবগুলোই তাপ প্রকা। এদেরকে সহজেই সিদ্ধ করে অথবা তাপ প্রয়োগে ধ্বংস করা সম্ভব। এসব দ্রব্যাদি গ্রহণের ফলে মাছের কতটুকু তি হবে, তা নির্ভর করবে খাদ্যে এদের উপস্থিতির পরিমাণ, মাছের প্রজাতি, আকার, বয়স এবং শারীরবৃত্তীয় অবস্থার ওপর। উদ্ভিদজাত খাদ্য উপকরণে বিভিন্ন পুষ্টিবিরোধী উপাদানের একটি তালিকা সারণি ২২ এ প্রদত্ত হলো:
সারণি ২২ : বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাদ্য উপকরণের অঙ্ক ঃস্থিত পুষ্টিবিরোধী উপাদানসমূহ
আরও দেখুন :