ইয়োক স্যাক রোগ, ডিম রোগ – “মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা” কোর্স বইটি বিশেষভাবে স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট-এর বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি জানেন, দূর শিক্ষণে শিক্ষকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নেই। তাই পাঠের কোনো কঠিন বিষয় যেন আপনার বুঝতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কোর্স বইটি লেখা হয়েছে। কোর্স বইটির আঙ্গিক ও উপস্থাপনা তাই প্রচলিত পাঠ্যবই থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। যেহেতু সরাসরি শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই কোর্স বইটি আপনাকে নিজে পড়ে বুঝতে হবে, তাই এটি কীভাবে পড়বেন প্রথমেই তা জেনে নিন। এতে কোর্স বইটি পড়তে ও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।
ইয়োক স্যাক রোগ, ডিম রোগ
এ পাঠ শেষে আপনি-
- ইয়োক স্যাক রোগ ও এর প্রতিকার সমন্ধে আলোচনা করতে পারবেন।
- মাছের ডিম রোগ ও এর প্রতিকার সমন্ধে লিখতে ও বলতে পারবেন।
ইয়োক স্যাক রোগ (Yolk Sac Disease)
নিষিক্ত ডিম থেকে পরিস্ফুটনের (Hatch out) পর যে লার্ভা বের হয় তার কুসুম থলিতে যে সকল অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয় তাকে ইয়োক স্যাক রোগ বলে। মাছের লার্ভা বা রেণু পোনা বিভিন্ন রোগ বালাই এর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল (Sensitive)। রেণু পোণার আভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা কার্যক্রম (Defence mechanism) নাজুক হবার কারণে এরা সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। ইয়োক স্যাক রোগ বা কুসুম থলির রোগ এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই রোগে কুসুম থলির স্বাভাবিক রং এর পরিবর্তন ঘটে বাদামী বর্ণ ধারণ করে ও কখনও কখনও কুসুম থলিতে সাদা দাগ দেখা যায়। এই রোগে নার্সারির লার্ভার মজুদে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ মজুদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অসম্পূর্ণ পরিপক্ক রোগাক্রান্ত মাছ হতে ডিম সংগ্রহের ফলে এই রোগ এর প্রকোপ বেশি হচ্ছে, যদিও এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
তবে পানিতে ভারী ধাতুর (Heavy metal) আয়রনের অধিক ঘনত্ব জনিত দূষণ, দ্রবীভূত এ্যামোনিয়ার উচ্চহার ও হ্যাচারীর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। রেণু পোনাগুলোকে স্থানান্তরের সময় এদের যান্ত্রিক ক্ষত (Mechanical injury) হতে পারে। নিষিক্ত ডিমগুলো পরিস্ফুটন ট্যাংকে পরিস্ফুটনের সময় বায়ু সঞ্চালন (Aeration) বেশি হলে অনেক সময় কুসুম থলিতে বা লার্ভার মুখে Gas bubble দেখা দিতে পারে।
এই সময় সতর্কতার সাথে বায়ু সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন পারিবেশিক পীড়ণের (Environmental stress) কারণে কুসুম থলির রোগ হতে পারে। সুস্থ্য, সবল ও পরিপক্ক প্রজননক্ষম মাছের ব্যবহার এই রোগের সম্ভাবনা কমাতে পারে। নিষিক্ত ডিম গুলোকে অক্সি টেট্রাসাইক্লিন মেশানো পানিতে ধৌত করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। পরিচ্ছন্ন দূষণমুক্ত হ্যাচারি পরিবেশ ও যথাযথ কারিগরী জ্ঞানের দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে পারে।
নিষিক্ত ডিম থেকে পরিস্ফুটনের পর যে লার্ভা বের হয় তার কুসুম থলিতে অস্বাভাবিক অবস্থাই হল ইয়োক স্যাক রোগ। বায়ু সঞ্চালন, পারিবেশিক পীড়ণ, ও পরিচর্যার ত্রুটির কারণে এ রোগ দেখা দেয় এবং রেণু পোনা অধিক হারে মারা যেতে পারে।

ডিম রোগ
মাছের ডিম সমূহ বিভিন্ন রোগের প্রতি সংবেদনশীল। প্রজননকৃত মাছগুলো দীর্ঘ মেয়াদী অপুষ্টি, রক্তাল্পজ (Anemia), দুর্বল এমনকি অসম্পূর্ণ পরিপক্ক অবস্থায় প্রজনন করলে ডিমগুলোও অধিকতর নাজুক (Delicate) অবস্থায় থাকে। রোগাক্রান্ত মাছের ডিমেও রোগের সংক্রমন হতে পারে। সংক্রমিত ডিমগুলো সফলভাবে পরিস্ফুটন করান যায়না।
হ্যাচারিতে পারিবেশিক অপরিচ্ছন্নতার জন্য ডিমে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেয়, এর মধ্যে ডিমে ছত্রাক (Fungus) এর আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত ডিমগুলো সাদাটে রং ধারণ করে এবং ডিমের মধ্যকার কোষের মাইটোসিস বিভাজন স্থবির এমনকি বন্ধ হয়ে যায়। ডিমে ছত্রাকের এই আক্রমণ তখনই বোঝা যায় যখন ডিমের অধিকাংশই ছত্রাক আক্রমণের শিকার হয়ে যায়।
ছত্রাকের এ আক্রমণ খুব তাড়াতাড়ি বিস্তার লাভ করে এবং ২-৩ দিনের মধ্যেই সমস্ত ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ছত্রাকজনিত ডিম রোগের প্রতিকারের জন্য সদ্য নিষিক্ত ডিমগুলোকে ১ : ৫০০,০০০ অনুপাতের Diquat দ্রবণ দ্বারা ধৌত করা যেতে পারে, অন্যথায় Phenoxethol দ্রবণ ব্যবহার করা চলে। মিথিলীন ব্লুর ০.১-০.১৫ ppm দ্রবণও ডিম ধৌত করণে বিশেষ ফলদায়ক। সর্বোপরি হ্যাচারির পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যপ্রদ পরিবেশ ডিম রোগের প্রকোপ কমাতে পারে।
ছত্রাক জাতীয় রোগ জীবাণুর আক্রমণে নিষিক্ত ডিম হঠাৎ সাদাটে বর্ণ ধারণ করে এবং এদের পরিস্ফুটন হয়না। মিথিলিন ব্লুর ০.১-০.১৫ পি.পি.এম. দ্রবণে ধৌত করালে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
অনুশীলন (Activity) : মাছের ইয়োক স্যাক রোগ, ডিম রোগ ও এদের প্রতিকার পদ্ধতি সংক্ষেপে লিখুন।
সারমর্মঃ ইয়োক স্যাক রোগে কুসুম থলির স্বাভাবিক রং এর পরিবর্তন হয়ে বাদামি রং ধারণ করে ও কখনও কখনও কুসুম থলিতে সাদা দাগ দেখা দেয়। ইয়োক স্যাক রোগ প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দূষণ ও অণুজীব মুক্ত পরিবেশ। তবে নিষিক্ত ডিমগুলোকে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন মেশান। পানি দ্বারা ধৌত করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। দূষণমুক্ত হ্যাচারিতে কারিগরী জ্ঞানের দক্ষ ব্যবহার এ রোগের প্রাদুর্ভাব বহুলাংশে কমিয়ে দেয়।
মাছের ডিমসমূহ বিভিন্ন রোগ জীবাণুর প্রতি সংবেদনশীল। হ্যাচারিতে অপরিছন্নতার জন্যে ডিমে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। ছত্রাক আক্রান্ত ডিম রোগে ডিমগুলো সাদাটে বর্ণ ধারণ করে এবং ছত্রাক আক্রমণের ২/৩ দিনের মধ্যে সব ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
ডিম রোগের প্রতিকারের জন্য সুস্থ সবল ব্রুড মাছ নির্বাচনের পাশাপাশি হ্যাচারির পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছত্রাকজনিত ডিম রোগ প্রতিরোধের জন্য Diquat, Phenoxethol অথবা Methylene blue এর যে কোনটির দ্রবণে সদ্য নিষিক্ত ডিমগুলোকে ধৌত করে নিতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যপ্রদ পরিবেশে ডিম ও পোনার লালন এই সব রোগজনিত ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুনঃ