অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ

অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ – “মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা” কোর্স বইটি বিশেষভাবে স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট-এর বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি জানেন, দূর শিক্ষণে শিক্ষকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নেই। তাই পাঠের কোনো কঠিন বিষয় যেন আপনার বুঝতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কোর্স বইটি লেখা হয়েছে। কোর্স বইটির আঙ্গিক ও উপস্থাপনা তাই প্রচলিত পাঠ্যবই থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। যেহেতু সরাসরি শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই কোর্স বইটি আপনাকে নিজে পড়ে বুঝতে হবে, তাই এটি কীভাবে পড়বেন প্রথমেই তা জেনে নিন। এতে কোর্স বইটি পড়তে ও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।

 

অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ

 

অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ

এ. পাঠ শেষে আপনি-

  • মাছের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গের রোগ সমন্ধে বলতে ও লিখতে পারবেন।
  • আভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগগুলোর নিয়ন্ত্রণের উপায় সমন্ধে আলোচনা করতে পারবেন।

মাছের শরীরের উপরের অংশ, মস্তক, ফুলকা, পাখনা, আইশ ইত্যাদি ছাড়া অভ্যন্তরের সকল অঙ্গই সাধারণত আভ্যন্তরীণ অঙ্গ হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য বড় বড় প্রাণী বা মানুষের মত আভ্যন্তরীণ অঙ্গের রোগ মাছে ততবেশী সুনির্দিষ্ট নয়। রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত, পুষ্টিজনিত বা পীড়ণের মাধ্যমে মাছের আভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়া শরীরতাত্ত্বিক অস্বাভাবিক কার্য্যকলাপে নানা ধরনের রোগের লক্ষণ মাছের আভ্যন্তরীণ অঙ্গে প্রকাশ পায়। নিম্নে এসকল গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সাধারণ রোগ সমন্ধে আলোচনা করা হলো।

বডি ক্যাভিটির রোগ (Disease of Bodycavity)

মাছের পেট বরাবর অভ্যন্তরে যে বিরাট গহ্বর রয়েছে তা সরাসরি অঙ্গ হিসেবে না ধরলেও সকল গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ অঙ্গ এর মধ্যেই অবস্থিত। বিভিন্ন অঙ্গের রোগের প্রভাবে এই গহ্বরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন- ড্রপসি রোগের কারণে এই গহ্বরেই পানি জমে তা ফুলে যায় অথচ তার কারণ ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যকোন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কিডনী বা অন্য কোন অঙ্গের অস্বাভাবিক কার্য্যকারীতার ফল।

বডি ক্যাভিটির প্রাচীরে অনেক সময় ক্ষত দেখা যায় আবার পরজীবীর সিস্ট থেকে মাছে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করে। আন্ত পরজীবীর আক্রমণ বন্ধ করা সরাসরি বেশ কঠিন- পরোক্ষভাবে পরজীবীগুলোর অন্য মাধ্যমিক পোষক যেমন- শামুক পুকুর থেকে অবাঞ্চিত প্রাণী হিসেবে উঠিয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য কোন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত বুঝা গেলে তা পাঠ ৪.২ অনুযায়ী প্রতিকার করা যেতে পারে। আর ক্ষত রোগ দেখ দিলে তো পাঠ ৪.৩ অনযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

 

মাছের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সুনির্দিষ্ট রোগের সংখ্যা অন্যান্য বড় বড় প্রাণীর তুলনায় কম। বডি ক্যাভিটি, লিভার, কিডনী ইত্যাদি অঙ্গে কিছু কিছু রোগ উল্লেখযোগ্য।

 

বডি ক্যাভিটির রোগ (Disease of Bodycavity)

মাছের পেট বরাবর অভ্যন্তরে যে বিরাট গহ্বর রয়েছে তা সরাসরি অঙ্গ হিসেবে না ধরলেও সকল গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ অঙ্গ এর মধ্যেই অবস্থিত। বিভিন্ন অঙ্গের রোগের প্রভাবে এই গহ্বরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন- ড্রপসি রোগের কারণে এই গহ্বরেই পানি জমে তা ফুলে যায় অথচ তার কারণ ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যকোন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কিডনী বা অন্য কোন অঙ্গের অস্বাভাবিক কার্য্যকারীতার ফল।

বডি ক্যাভিটির প্রাচীরে অনেক সময় ক্ষত দেখা যায় আবার পরজীবীর সিস্ট থেকে মাছে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করে। আন্ত পরজীবীর আক্রমণ বন্ধ করা সরাসরি বেশ কঠিন- পরোক্ষভাবে পরজীবীগুলোর অন্য মাধ্যমিক পোষক যেমন- শামুক পুকুর থেকে অবাঞ্চিত প্রাণী হিসেবে উঠিয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য কোন রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত বুঝা গেলে তা পাঠ ৪.২ অনুযায়ী প্রতিকার করা যেতে পারে। আর ক্ষত রোগ দেখ দিলে তো পাঠ ৪.৩ অনযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

লিভারের রোগ (Disease of Liver)

যকৃত বা লিভার মাছের রোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। বিভিন্ন পাচক রস উৎপন্ন করা থেকে শুরু করে নানাবিধ শরীরতাত্ত্বিক কার্য্য সম্পাদন করে থাকে এই লিভার। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার রোগজীবাণুর আক্রমণ ও পরিমিত পুষ্টির অভাবজনিত কারণে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায় এবং তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মাছের খাদ্যে অনীহা আসে, দুর্বলতা দেখা দেয়, জন্ডিস বা অন্যান্য উপসর্গ প্রকাশ পায়।

চাইনিজ লিভার ঢুক (Chinese Liver Fluke, Clonorchis chinensis) কেবলমাত্র স্বাদু পানির মাছের লিভারে আক্রমণ করে। এতে লিভার নষ্ট হয়ে যায়, এবং এর কার্য্যকারিতা হারিয়ে বিভিন্ন রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়। উল্লিখিত পরজীবী ছাড়াও মাছের লিভারে আরও অন্যান্য হেলমিন্থস (Helminths) গ্রুপের পরজীবীর আক্রমণ হয়। এসকল রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রন করার জন্য তেমন কোন ভাল ঔষধ নেই- তবে পরজীবীগুলো শনাক্ত করে তার।

মাধ্যমিক পোষক বা বাহক পোষক (Carrier Host) এর মাধ্যমে বিস্তার লাভ যাতে না করে তার জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পরজীবী ছাড়াও সেপটিসেমিয়া জাতীয় রোগ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা হলে তার ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমন কি লিভার সিরোসিস (Cirrhosis) হয়ে যায়। ভাইরাসের আক্রমণের জন্য তেমন কোন প্রতিকার নেই। তবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে যাতে ঐ রোগের বিস্তার না ঘটে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ব্যাকটেরিয়া রোগ জীবাণু হিসেবে শনাক্ত করতে পারলে পাঠ ৪.২ অনুযায়ী তার প্রতিকার করা যেতে পারে।

 

লিভার বা যকৃত সবচেয়ে বড় গ্রন্থি, পরজীবীর আক্রমণ এখানে খুবই সাধারণভাবে ব্যাকটে-রিয়া বা ভাইরাস দ্বারা মাছ আক্রান্ত হলে তা লিভারেও দেখা দিতে পারে। লিভার ক্ষতিগ্রন্থ হয়ে সিরোসিস দেখা দিতে পারে।

 

হৃদপিন্ডের রোগ (Disease of heart)

অনেক সামুদ্রিক মাছে টিউবারকুলোসিস রোগ বা অনুরূপ রোগ হতে দেখা গিয়েছে। Mycobacterium spও Nocardia sp নামক ব্যাকটেরিয়া এজন্য দায়ী বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এধরনের রোগের ফলে মাছের হৃদপিন্ড আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতেপারে। চাষকৃত খাঁচায় মাছের খাদ্যের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক পাঠ ৪.২ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়।

কিডনীর রোগ (Disease of Kidney)

আভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির মধ্যে কিডনী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শারীরতাত্ত্বিক কার্য্যকলাপ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) জাগানো-বিশেষ করে এন্টিবডি তৈরির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রোগজীবাণুর আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে নানা রকম রোগের লক্ষন প্রকাশ করে। বিশেষ করে সকল প্রকার সেন্টিসেমিক রোগে কিডনী আক্রান্ত হয়ে যায় যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া উভয় প্রকার রোগজীবাণুর মাধ্যমেই ঘটে থাকে।

ফলে কিডনী তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় ঘা দেখা দিতে পারে, ড্রপসি দেখা দেয়, মাছের মৃত্যু ঘটে। কিডনীর একটি বিশেষ রোগের নাম “ব্যাকটেরিয়াল কিডনী রোগ” (Bacterial Kidney Disease, সংক্ষেপে B.K.D) যা সাধারণত সামুদ্রিক স্যামন (Salmon) জাতীয় মাছে হতে দেখা যায়।

আমোদের দেশে ইলিশ মাছের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে গবেষণার দ্বারা এখনও তা জানা যায়নি। রোগ উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম, Renibacterium salmoninarum একে প্রাথমিক পর্যায়ে মাছে শনাক্ত করা কঠিন এবং সে কারণে এ রোগের চিকিৎসাও খুব জটিল। সময় উপযোগী ঔষধ প্রয়োগ না করলে চাষকৃত মাছ বিশেষ করে খাঁচায় চাষকৃত মাছের খুব ক্ষতি হয়- মৃত্যুর হার খুব বেশি।

পাঠ ৪.২ এ বর্নিত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে বিশেষ করে খাবারের সহিত মিশিয়ে এরোগ প্রতিকার করা যেতে পারে। এককোষী পরজীবী, Myxobolus sp কার্প জাতীয় বিশেষ করে Gold Fish এর কিডনীতে আক্রমণ করতে দেখা গেছে, ফলে পেটে পানি জমে ড্রপসি রোগ লক্ষণ প্রকাশ করে। এর তেমন কোন প্রতিকার করা যায় না। তবে রোগাক্রান্ত মাছ গুলো চিহ্নিত করার পর পুকুর বা একোরিয়াম থেকে আলাদা করে ২০-২৫ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে সহ্য করা সময় পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে।

 

কিডনীতে সেপ্টিসেমিক রোগ হলেই তার প্রভাব পড়ে এবং নানা রকম উপসর্গ প্রকাশ করে। ব্যাকটেরিয়াল কিডনী রোগ এর একটি মারাত্মক রোগ।

 

অগ্ন্যাশয়ের রোগ (Disease of Pancreas)

অগ্ন্যাশয় (Pancraeas)ও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আসলে এটা একটি অন্যতম প্রধান গ্রন্থি যা থেকে পাচক রস নিঃসৃত হয়ে খাদ্য পরিপাকে অংশ গ্রহণ করে। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ বা শীত প্রধান দেশে ভাইরাসজনিত একটি অতি সাধারণ রোগ স্যামন (Salmon) সহ অন্যান্য মাছের অগ্ন্যাশয়ে আক্রমণ করে।

রোগটির নাম আই.পি.এন (IPN- Infectious Pancreatic Necrosis) যা IPNV (Infectous Pancreatic Necrosis Virus) দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটা একটি মারাত্মক রোগ এবং খুব সহজেই সংক্রমিত হয়ে সকল চাষকৃত অথবা সকল মজুত মাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এরোগের ফলে অগ্নাশয়ে নেক্রোসিস (Necrosis) ঘটে এবং স্বাভাবিক কার্য্যকলাপ বন্ধ হয়ে গ্রন্থির অকর্মন্যতা দেখা দেয়। এতে নানা রকম রোগের লক্ষন প্রকাশ পায় – মাছ খাবার বন্ধ করে দেয়, মৃত্যু ঘটে যায়। ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার করা খুবই কঠিন যা হউক একে প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংক্রমণ যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

অগ্ন্যাশয়ের একটি বিশেষ রোগ হল IPNযা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। অগ্নাশয়ের কার্য্য-কারিতা বন্ধ হয়, নেক্রো-সিস দেখা দেয় এবং মাছ মারা যায়।

 

অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ

 

অন্যান্য গ্রন্থির কার্যহীনতা (Disfunction of other Glands)

গ্রন্থি সমূহের কার্য্যকারিতা সাধারণত শারীরতাত্ত্বিক। সে জন্য যদি কোন গ্রন্থির কোন কারণে কার্যহীনতা দেখা দেয় তা হলে স্বাভাবিকভাবেই সেই গ্রন্থির নির্দিষ্ট কাজ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে নানাভাবে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। পুষ্টিহীনতা, পারিবেশিক পীড়ণ এবং রোগজীবাণুর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে এই রোগ দেখা দেয়।

পিটুইটারী গ্রন্থির (Pituitary Gland) কার্যহীনতা

মাছের শরীরতাত্ত্বিক ভারসাম্যতা লোপ পায়, অন্যান্য গ্রন্থির নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এটা একটি নালীবিহীন গ্রন্থি (Endocrine Gland) কিন্তু এর প্রাধান্য রয়েছে সকল Endocrine Gland এর ওপর। মাছ চাষে সুব্যবস্থা ও উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থাপনার দ্বারা এ গ্রন্থির কার্যকারিতা ঠিক রাখা সম্ভব।

থাইরয়েড গ্রন্থির (Thyroid Gland) কার্যহীনতা

থাইরয়েড গ্রন্থিও একটি অন্যতম প্রধান নালীবিহীন গ্রন্থি (Endocrine Gland)। বিভিন্ন কারণে এর কার্যহীনতা দেখা দিলে গ্রন্থির নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাছের গলা ফুলে যায় এবং ভিতরের দিকে টিউমার দেখা দেয় তখন মাছ শ্বাস কষ্টে ভোগে। এ অবস্থাকে থাইরয়েড হাইপারপ্লেসিয়া (Thyroid Hyperplasia) বলে।

এর অনেক কারণের মধ্যে একটি প্রধান কারণ হলো মাছের শরীরে আয়োডিনের অভাব। এছাড়াও রোগজীবাণুর আক্রমণ বা ভিটামিনের অভাব (Pantothenic Acid) হলেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। উল্লিখিত কারণের জন্য মাছেকে আয়োডিন বা প্যান্টোথেনিক এসিড মিশ্রিত খাবার দিলে আস্তে আস্তে আরোগ্য লাভ করে।

 

গ্রন্থির কার্যহীনতা হলে নানা উপসর্গ প্রকাশ পায়। পিটুইটারী গ্রন্থির কার্যহীনতা হলে দেহের ভারসাম্য লোপ পায়, থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে পাইবাযড হাইপার-প্লেসিয়া এবং যৌনাঙ্গের কার্য-হীনতার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

যৌন গ্রন্থির কার্যহীনতা (Disfucntion of sex Gland)

যৌনাঙ্গ বলতে পুরুষ মাছের জন্য শুক্রাশয় (Testes) আর স্ত্রী মাছের জন্য ডিম্বাশয়কে বুঝায়। সঠিকভাবে হরমোনের ক্রিয়া না হওয়ার কারণে রোগ জীবাণুর আক্রমণ, পারিবেশিক পীড়ণ বিশেষ করে দূষকের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে মাছের ডিম নিষিক্ত হতে পারেনা অথবা ডিম বা শুক্রানু পরিপক্ক হতে পারেনা অথবা বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।

এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য নির্বাচিত পরিপক্ক পুরুষ ও স্ত্রী মাছের যত্ন আলাদাভাবে করতে হবে। এদেরকে ব্রুড ফিশ (Brood fish) বলা হয়। এদের সর্ব প্রকার রোগ থেকে রক্ষার জন্য বিশেষভাবে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় ঔষধ প্রয়োগের দ্বারাও ডিমের ক্ষতি হতে পারে তাই উত্তম ব্যবস্থাপনার দ্বারা পরিচর্যা করাই ভাল।

টিউমার (Tunour)

নানা রকম শরীরতাত্ত্বিক কারণ, কোষ ও কলার প্রতিক্রিয়া, রোগজীবাণুর আক্রমণে মাছের আভ্যন্তরীণ যে কোন অঙ্গেই কোষ ও কলার অস্বাভাবিক বর্ধন এবং কলাগুচ্ছের সৃষ্টি হয়। ক্রমশ: তা বেড়ে ফুলে যায় এ অবস্থাকে সহজ ভাষায় টিউমার বলা হয় তবে এর অন্যান্য নামও রয়েছে যেমন- নিউপ্লেসিয়া (Neoplasia)। সাধারণত ক্ষতিকারক নয় (Benign) ও ক্ষতিকারক (Mailgnant) এই দু’ধরনের টিউমার মাছের আভ্যন্তরীণ অঙ্গে দেখা দেয়। উদাহরণ হিসেব Benign Tumour-টেরাটোমাস (Terratomas) এবং Malignant Tumour-হিসেবে কারসিনোমাস (Carcinomas) উল্লেখ করা যায়। এদের নিয়ন্ত্রণ করার কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।

অনুশীলন (Activity): মাছের আভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ সমন্ধে আলোচনা করুন। এসকল রোগসমূহের নিয়ন্ত্রণ করার উপায়গুলো লিখুন।

সারমর্ম: মাছে আভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির রোগ অন্যান্য বড় বড় প্রাণীর ন্যায় ততটা সুনির্দিষ্ট নয়। তথাপিও রোগজীবাণুর আক্রমণ, পরিবেশজনিত কারণ, শরীরতাত্ত্বিক এবং পুষ্টিজনিত কারণে কোন কোন আভ্যন্তরীণ অঙ্গ বিশেষ বিশেষ রোগের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল। বডি ক্যাভিটির প্রাচীরে হেলমিস্থিস্ পরজীবীর সিস্ট পাওয়া যায় যেগুলো অনেক সময় ক্ষতের সৃষ্টি করে।

অন্য অঙ্গের রোগের প্রভাবে এই গহ্বরে পানি জমে ড্রপসি রোগ সৃষ্টি করে। লিভারে বিভিন্ন প্রকার হেলমিন্থস্ পরজীবীর আক্রমণে লিভার সিরোসিস করে থাকে ফলে লিভার কার্যহীনতায় ভুগে এবং শরীরে এরজন্য অন্যান্য উপসর্গ প্রকাশ পায়। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসেরও আক্রমণ হতে পারে। এর প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া ফলদায়ক।

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সামুদ্রিক মাছের হৃদপিন্ডে, কিডনীতে হতে দেখা গিয়েছে। কিডনীতে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম Renibacterium salmoninarum ভাইরাসের আক্রমণে অগ্ন্যাশয়ের কর্মহীনতা লক্ষ্য করা গেছে। অগ্ন্যাশয়ের Necrosis করে যে ভাইরাস থাকে সংক্ষেপে IPNV বলে।

নালিবিহীন গ্রন্থির মধ্যে পিটুইটারী ও থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যহীনতা উল্লেখযোগ্য যথাক্রমে দেহের ভারসাম্য হারায় ও গলায় থাইরয়েড হাইপারপ্লেসিয় (Tumour) করে।অনেক সময় যৌনাঙ্গের কার্যহীনতার কারণে বন্ধ্যাত্ব লক্ষ্য করা গেছে। এছাড় আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষকিকারক নয় (Benign) ও ক্ষতিকারক (Malignant) টিউমার চিহ্নিত হয়েছে তবে এদের নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিকার করার ব্যবস্থা নেই।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment