Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ

অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ : বাংলাদেশের জনগণের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও কল্যাণে ছোট মাছ খাওয়ার পরিমাণ ও হার বাড়ানোর গুরুত্ব অপরিসীম। ছোট-মাছ পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় এতে ভিটামিন এ, আয়রন, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়াম বেশী থাকে এবং এগুলো প্রাণিজ প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় স্নেহ উপাদানের ভালো উৎসও বটে। ছোট-মাছগুলো সাধারণত গোটা খাওয়া হয় বলে এগুলোর পুষ্টিগুণও অনেক বেশী।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ

কাচকি মাছ, Corica Soborna Achilles



গর্ভবতী নারী ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের বেশী করে ছোট মাছ খাওয়া উচিত। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠা ও বিকাশ ত্বরান্বিত হয় এবং তারা স্কুলে ভালো ফলাফল সহ পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভালো করতে পারে। বাংলাদেশের জনগণকে বুদ্ধিমান, শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান জাতি হিসাবে গড়ে তোলার সহায়ক হিসাবে ছোট-মাছ খাওয়ায় উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরী।

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক মানুষ, বিশেষত নারী ও ছোট শিশুরা ভিটামিন এ, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে ভুগছে। এসকল ভিটামিন ও খনিজ উপকরণকে অণুপুষ্টি বলা হয় যা শরীরের পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী।

ঢেলা মাছ

দৈনন্দিন খাবারে যথেষ্ট অণুপুষ্টি না পেলেশিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়, তাদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অণুপুষ্টির অভাবে তাদের মস্তিস্ক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে তাদের পক্ষে স্কুলে শেখা এবং পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভালো করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের ক্ষতি অপূরণীয়, তবে অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোট-মাছ, অন্যান্য প্রাণিজ খাবার, শাক-সবজী ও ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে এই ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সীমিত আয়, অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার কেনার সামর্থ্যের অভাব, প্রথাগত খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ পরিবার খাবার হিসাবে মূলত ভাতের ওপরই নির্ভরশীল। শরীরে শক্তির ভালো উৎস হলেও ভাত সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট অণুপুষ্টির যোগান দিতে পারে না। নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরী।

ছোট মাছের সুফল সমূহ

বিভিন্ন ছোট জাতের মাছ যেমন মলা (Amblypharyngodon mola), দারকিনা (Esomus danricus) এবং ঢেলা মাছ (Ostreobrama cotio cotio) বাংলাদেশের জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। গোটা খাওয়া হয় (মাথা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গও কাঁটা’সহ) এমন ছোট মাছে অনেক ভিটামিন ও খনিজ উপকরণ উচ্চ মাত্রায় থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া মাছ খেলে শরীরে অন্যান্য খাবারের অণুপুষ্টি গ্রহণও সহজতর হয়।

মলা মাছ, এ্যাম্বলিফারিংডন, মৌরোলা, Amblypharyngodon chulabhornae 2

সাংস্কৃতিকভাবেই বাংলাদেশের মানুষের খাবারে ছোট মাছ খুব সাধারণ তরকারী হলেও এগুলো যথেষ্ট পরিমাণে এবং বারে বারে খাওয়া হয় না। বিশেষত গর্ভবতী নারী, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের ছোট-মাছ খাওয়ার হার আরও কম। ছোট-মাছগুলো খুব অল্প পরিমাণেও কেনা যায় এবং অপেক্ষাকৃতভাবে দামে সস্তা বলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যের ভেতরে থাকে।

জীবনের প্রথম ১ হাজার দিনে মাছের গুরুত্ব

একজন স্বাস্থ্য-সবল শিশু জন্যদানে একজন মায়ের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগতঅবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মেয়ে ও নারীদের জন্য অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যাবশ্যক। গর্ভসঞ্চার থেকে শুরু করে ২ বছর বয়স পর্যন্ত একজন শিশুর জীবনের প্রথম ১ হাজার দিন তার বৃদ্ধি ও পরবর্তী বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।

কাচকি মাছ, Corica Soborna Achilles


গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালেশিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে মায়ের অণুপুষ্টি সমৃদ্ধখাবার খাওয়ার ওপর। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি সম্পুরক পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বুদ্ধিমান, স্বাস্থ্যবান ও সবল হিসাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ছোট বাচ্চাদের খাবারে অবশ্যই অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ ছোট মাছ যোগ করতে হবে।

ছোট মাছ দিয়ে খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর পদ্ধতি

রান্না করা মাছ মিহি করে বেটে নিয়ে বাচ্চাদের উপযোগী করে রান্না করা ভাত ও শাকসবর্ত্রীর সাথে মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। পছন্দের খাবার খিঁচুড়ির (চাল, ডাল ও সব্জী সহ) মধ্যে রান্না করা মাছ বেটে দিলেও অনেক সুস্বাদু হয়। এটা বাচ্চাদের জন্য খাওয়া যেমন সহজ তেমনি উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

মলা মাছ, এ্যাম্বলিফারিংডন, মৌরোলা, Amblypharyngodon chulabhornae

বাংলাদেশীদের খাবারে ছোট মাছ খুব জনপ্রিয়। সাধারণত, শাকসবজীর মধ্যে ছোট-মাছ দিয়ে তরকারী রান্না করা হয়। ভাত ও শাক-সবজীর সাথে খাওয়ার জন্য তাজা ছোট-মাছ বা ছোট-মাছের শুঁটকি দিয়ে ভর্তাও (রান্না করে চলে বানানো) বানানো যায়। অনেক সময় মশলা ও তেল দিয়ে শুটকির চাটনিও বানানো যায়। মাছের এসব খাবার অনেক সুস্বাদু বলে সবাইখুব। পছন্দ করে এবং এগুলো অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ। ছোট মাছের শুটকি দিয়ে বানানো খাবার ও চাটনি সারা বাংলাদেশে পুরো বছর জুড়েই খাওয়া যেতে পারে।

নীতিগত সুপারিশসমূহ

বাংলাদেশের জনগণকে বুদ্ধিমান, শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান জাতি হিসাবে গড়ে তোলার সহায়ক হিসাবে ছোট মাছ খাওয়া উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরী।

কাচকি মাছ, Corica Soborna Achilles

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এই তথ্যপত্রটি সাউথ এশিয়া ফুড এ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিওরিটি ইনিশিয়েটিভ (অঅঘবও)- এর অর্থ সহায়তায় প্রণীত হয়েছে। একটি বহুদেশীয় ট্রাস্ট তহবিল হিসাবে সাফানুসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, ডিএফআইডি এবং অসএইড-এর যৌথ প্রয়াসে। সাফান্‌সি সহায়তা পাচ্ছে অসএইড ও ইউকেএইড উভয় সংস্থার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তর থেকে। এখানে প্রকাশিত মতামত উক্ত সংস্থা ও দপ্তরগুলোর অনুষ্ঠানিক নীতিমালার সঙ্গে নাও মিলতে পারে।

আরও  পড়ুন:

ছোট মাছের পুষ্টি

মলা

Exit mobile version