সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি – যা চাষযোগ্য মাছের খাদ্য ও পুষ্টি এর অন্তর্ভুক্ত।

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

  • খাদ্যটি অবশ্যই সুস্বাদু এবং গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন;
  • সম্পূরক খাদ্যের উপাদানসমূহ সহজে পরিপাক ও আত্তীকরণ হওয়া দরকার;
  • অধিক মাত্রায় রূপান্তরিতকরণে সমর্থ হওয়া প্রয়োজন;
  • পানিতে যেন খাদ্য উপাদানসমূহ সহজে গলে না যায়;
  • প্রয়োগকৃত খাদ্যটি যেন মাছ খেতে অভ্যস্ত থাকে;
  • অপেক্ষাকৃত দামে সস্তা ও সর্বদা হাতের কাছেই পাওয়া যায়; গুদামজাতকরণে সহজে যেন নষ্ট না হয়;
  • সর্বোপরি পুষ্টিমানের দিক থেকে সম্পূরক খাদ্যটিতে যেন ২৮-৩৫% আমিষ, ৩০-৪০% শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে এবং প্রতিগ্রাম খাদ্যে যেন ৪ কিলো ক্যালরি শক্তি উৎপাদক ক্ষমতা থাকে।

কৃত্রিম বা সম্পুরক খাদ্যের গুরুত্ব

  • যেসব কারণে মাছচাষে সম্পূরক খাদ্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে তা হলো-
  • অধিক ঘনত্বে পোনা ও বড় মাছচাষ করা যায়;
  • অল্প সময়ে বড় আকারের সুস্থ-সবল পোনা উৎপাদন করা যায়;
  • পোনা বাঁচার হার অনেক বেড়ে যায়;
  • মাছচাষে মৃত্যুহার অনেকাংশে হ্রাস পায়,
  • মাছ পুষ্টির অভাবজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে;
  • মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে মাছ অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়;
  • মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে ও কম সময়ে অল্প পরিমাণ জলাশয় হতে অধিক মাছ ও আর্থিক মুনাফা পাওয়া যায় ।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

মাছের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা:

মাছের খাদ্য চাহিদা প্রজাতি, বয়স ও আকার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছের জন্য পোনার দৈহিক ওজনের ৮-২৫%, বড় মাছের জন্য ২-১০% এবং প্রজননক্ষম মাছের জন্য ২-৮% হারে সম্পুরক খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। এভাবে খাদ্য সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায় । নিচে প্রজাতি ও জীবনস্তর ভেদে মাছের খাদ্য চাহিদা দেয়া হলো –

সারণি-৫ : প্রজাতি ও জীবনস্তর ভেদে মাছের খাদ্য চাহিদা

 

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

 

চাষকৃত মাছের জন্য সুষম সম্পুরক খাদ্য প্রস্তুত ও প্রয়োগ পদ্ধতি:

যেকোনো খাবার প্রস্তুতের সময় খাদ্যে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের গুণগতমান, সহজলভ্যতা ও বাজারদরকে প্রাধান্য দিতে হয়। কেননা প্রস্তুতকৃত খাদ্যের বাজার মূল্য যত কম হবে এবং খাদ্যের গুণগতমান যত মানসম্পন্ন হবে মাছের উৎপাদন খরচ তত কম হবে। সাধারণত মাছের দেহ বৃদ্ধির জন্য ৩০% এর বেশি আমিষের প্রয়োজন হয় না। নিচে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে বিদ্যমান আমিষ, শর্করা, চর্বি, অ্যাশ এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ দেয়া হলো ।

সারণি-৬ : বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান

 

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

 

সারণি-৭ : মাছের খাদ্যে আমিষ, শর্করা এবং লিপিডের চাহিদা

 

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

 

এখন প্রজাতি এবং বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মজুদকৃত মাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য উপাদান মিশিয়ে সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি করতে হলে নিম্নোক্ত সারণি-৮ অনুসরণ করে খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে।

সারণি-৮ : সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির নমুনা

 

সম্পূরক খাদ্যের গুণাবলি

 

খাদ্য প্ৰস্তুত প্রণালি

সারণি- ৮ এ বর্ণিত সূত্রানুযায়ী পরিমাণ মতো খাদ্য উপাদান গ্রাইন্ডারে ভাল করে চূর্ণ বা গুড়া করে নিতে হবে এবং চালনি দিয়ে চেলে নিতে হবে। এর পর ফর্মুলা অনুযায়ী উপাদানসমূহ একটি একটি করে নির্দিষ্ট মাত্রায় মেপে নিতে হবে এবং অল্প অল্প করে মিক্সার মেশিনে বা বড় একটি পাত্রে ঢেলে হাত কিংবা কাঠি দিয়ে শুকনা অবস্থায় ভালভাবে মিশাতে হবে।

মিশানোর সময় সবচেয়ে কম খাদ্য উপাদানসমূহ অপেক্ষাকৃত বেশি খাদ্যের সাথে মিশাতে হবে। এভাবে মেশানোর পর অল্প অল্প করে পানি এমনভাবে মিশিয়ে নাড়তে হবে যাতে সমস্ত মিশ্রণটি একটি আঠালো পেষ্ট বা মন্ডে পরিনত হয়। বাইন্ডার হিসেবে চিটাগুড় ব্যবহার করলে চিটাগুড়কে প্রথমে পানিতে মিশিয়ে পাতলা করে উপরে বর্ণিত খাদ্যের সাথে মিশিয়ে মত্ত তৈরি করতে হবে। এ মস্ত ভেজা খাদ্য হিসেবে গোলাকৃতির বল আকার বানিয়ে সরাসরি মাছকে খাওয়ানো যেতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment