মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল অর্থাৎ অপরাধসমূহ আমলে নেওয়া

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল অর্থাৎ অপরাধসমূহ আমলে নেওয়া – যা জীব বৈচিত্র্য, মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন এর অন্তর্ভুক্ত।

মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল অর্থাৎ অপরাধসমূহ আমলে নেওয়া

 

মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল অর্থাৎ অপরাধসমূহ আমলে নেওয়া
মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল

 

১. এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে কোন কোর্টে এই ধরনের কেস গৃহীত হলে মৎস্য কর্মকর্তা বা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের নিচে পদ মর্যাদা সম্পন্ন নহেন এমন লোকের নিকট থেকে অভিযোগ আনীত হতে হবে। অথবা সরকার কর্তৃক এতদবিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক নালিশ দায়ের ছাড়া আদালত অত্র আইনের অধীনে কোন অপরাধ আমলে নিতে পারিবেন না ।

২. ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্টেট কোর্টের নিচে কোনো কোর্ট এই অপরাধের বিচার পরিচালনা করতে পারবে না ।

পুকুর উন্নয়ন আইন ১৯৩৯ :

আমাদের দেশে বেসরকারি মালিকানাধীন অসংখ্য ছোট বড় পুকুর শরিকদের মতান্তরের কারণে পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব অকেজো ও পতিত পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষের জন্য ১৯৩৯ সালে পুকুর উন্নয়ন আইন প্রণীত হয়। যা ১৯৮৬ সালের ৩ নং অধ্যাদেশ দ্বারা সংশোধিত করা হয়। নিচে এ আইনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-

১. উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোনো পুকুর-দিঘি বা জলাশয় যে কোনো কারণে পতিত রাখা হয়েছে তাহলে উক্ত পুকুর, দিঘি বা জলাশয় মালিককে যথাযথ নোটিশ প্রদান করতঃ জলাশয় উন্নয়নের জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন ।

২. নোটিশ দেয়ার পর যদি পুকুর মালিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছ চাষ না করেন, তাহা হইলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুকুর মালিককে নোটিশ দিয়ে পুকুরটিকে পতিত পুকুর হিসেবে ঘোষণা দিবেন। অনুরূপ নোটিশের একটি অনুলিপি পুকুরের নিকট কোনো প্রকাশ্য স্থানে লটকাইতে হবে এবং উক্ত তারিখ হতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে পুকুরের মালিক বা অন্য ব্যক্তি কর্তৃক এতদবিষয়ে কোনো আপত্তি দাখিল হলে জেলা প্রশাসক তা নিষ্পত্তি করত পতিত ঘোষণা সংক্রান্ত নোটিশটি হয় বলবৎ করবেন নতুবা প্রত্যাহার করবেন ।

৩. জেলা প্রশাসক ৪ ধারা মোতাবেক পতিত ঘোষিত পুকুরের দখল গ্রহণ করতঃ প্রয়োজনীয় উন্নয়ন/সংস্কার করতে পারবেন অথবা প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সমবায় সমিতি বা আগ্রহী কোন ব্যক্তি বরাবরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা বা দখল অর্পণ করতে পারবেন। তবে পুকুরের মূল মালিক বা কোনো অংশীদার অনুরূপ সংস্কারমূলক কাজ করতে আগ্রহী হলে তিনি অগ্রাধিকার পাবেন।

8. এ আইনের আওতায় কোনো জলাশয় ২০ বছরের জন্য হস্তান্তর করা যাবে। তবে গ্রহীতা জলাশয় মালিককে সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া প্রদানে বাধ্য থাকবেন ।

৫. হস্তান্তর গ্রহীতা মেয়াদবর্তী সময়ে সরকারের অনুমতিক্রমে মৎস্য চাষের জন্য অন্য কাউকে ইজারা দিতে পারবেন।

৬. পতিত পুকুরের সংস্কারের নিমিত্ত্ব প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুকুরের পার্শ্ববর্তী কোনো জায়গা দখল গ্রহণ করতে পারবেন।

৭. ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পুকুরের দখল পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় উন্নয়ন বা সংস্কার করতে ব্যর্থ হন বা গাফিলতির পরিচয় দেন, তবে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুকুরের দখল ফেরত নিতে পারবেন।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

৮. প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক কাজ করার জন্য পরিত্যক্ত ঘোষিত পুকুরের হস্তান্তর সত্ত্বেও পুকুর মালিক বা তার অবর্তমানে তার ওয়ারিশগণ ঐ পুকুরের সংস্কারমূলক কাজের জন্য যে ব্যয় হয়েছে, তা যদি পরিশোধ করতে রাজি হন এবং অবশিষ্ট সংস্কারমূলক কাজ করতঃ মাছ চাষে ওয়াদাবদ্ধ হন, তবে কালেক্টর পুকুরের দখল তার বরাবরে ফেরত দিতে পারবেন।

৯. পরিত্যক্ত পুকুরের সংস্কারমূলক কাজের স্বার্থে উক্ত পুকুর সংলগ্ন যে জমির দখল নেয়া হয়। পুকুরের সংস্কারমূলক কাজের শেষে কালেক্টর উক্ত জমির দখল উহার মালিক বা ওয়ারিশগণ বরাবরে ফেরত দেবেন। তবে পুকুরের ক্ষতি হয় এমন কোনো ভাবে ঐ জমি ব্যবহার করা যাবে না ।

১০. ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে পুকুর বা পুকুর সংলগ্ন জমির দখল ফেরত নিয়ে উহার মালিককে প্রদান করা হলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার দখলে থাকা সময়ের জন্য কোনো খাজনা বা ভাড়া প্রদান করতে বাধ্য নয় যদি না আইনে কিছু স্পষ্ট বলা থাকে ।

১১. পরিত্যক্ত পুকুরের মালিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে কালেক্টর কর্তৃক নির্ধারিত খাজনা/ভাড়া পাইবেন ।

১২. ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার দখলে থাকাকালীন সময়ে অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পুকুর ব্যবহার করা যাবে না, তবে গৃহস্থালি কাজের ক্ষেত্রে এই বিধি নিষেধ প্রযোজ্য হবে না। এই ধারা লঙ্ঘন করার শাস্তি অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা ।

১৩. ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দখলে থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেহ সেচের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারবে না । তবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতিক্রমে অনুরূপ ব্যবহার করা আইনসিদ্ধ হবে। এই ধারা লঙ্ঘন করার শাস্তি অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা ।

১৪. ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরিত্যক্ত পুকুরের দখল নেয়ার পর যদি সঠিকভাবে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ না করেন, তবে কালেক্টর এর দখল ফেরত নিতে পারবেন । অথবা এর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং এই ক্ষেত্রে ব্যয়িত খরচ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে উদ্ধার করতে পারবেন।

১৫. মেয়াদ শেষে পরিত্যক্ত পুকুরের দখল এর মালিক বরাবরে ফেরত দেয়া হবে। পুকুর মালিক বা তার ওয়ারিশগণ যদি উক্ত পুকুরের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ না করেন অথবা কালেক্টর যদি লক্ষ্য করেন যে, পুকুরটিতে সংস্কারের প্রয়োজন, তবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক কাজ করবার নির্দেশ দিয়ে পুকুর মালিক বা তার ওয়ারিশগণের উপর নোটিশ ইস্যু করবেন। যদি নোটিশ জারির ৬ মাসের মধ্যে উক্ত উন্নয়নমূলক কাজ করা না হয়, তবে কালেক্টর নিজেই উক্ত উন্নয়নমূলক কাজ করবেন অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তা করতে ক্ষমতা প্রদান করবেন।

 

মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল অর্থাৎ অপরাধসমূহ আমলে নেওয়া
মৎস্য আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কৌশল

 

১৬. অধিগ্রহণকৃত ও হস্তান্তরিত সম্পত্তির সকল প্রকার বিরোধ সরকার কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হবে ।

১৭. এ আইনের আওতায় গৃহীত কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি আদালতে অভিযোগ করা যাবে না ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment