আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ।
মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
মাছ ধরার পর ধৃত মাছের গুণগতমান সঠিক রাখা এবং ক্রেতার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত মাছের সতেজতা বজায় রেখে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকেই মাছ সংরক্ষণ বলে । এ অধ্যায়ে মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন- বরফ দ্বারা, রোদে শুকিয়ে, টিনজাত করে, লবণায়ন ও ধূমায়িতকরণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:
মাছের পুষ্টিমান বজায় রাখা এবং পচন থেকে রক্ষা করার জন্য ধরার পর থেকে মাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। পচনশীল দ্রব্যের মধ্যে মাছ অন্যতম। তাই মাছ ধরার পর থেকে এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। মাছ ধরার একটা নির্দিষ্ট সময় পর থেকে এর পচনক্রিয়া শুরু হয়। মাছ একবার পচে গেলে কোনোভাবেই তা আর পূর্বাবস্থায় ফিরানো যায় না।
অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বিভিন্ন এনজাইমের ক্রিয়া এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে মাছ পচে থাকে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের মাধ্যমে মাছের এই পচনক্রিয়া রোধ করা যায়। মাছের দেহে পানি, আমিষ ও স্নেহ বা তেল জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে এবং শর্করা জাতীয় উপাদান খুব সামান্য পরিমাণে থাকে, ফলে মাছ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য অপেক্ষা তাড়াতাড়ি পচে । প্রধানত দুটো কারণে মাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তা হলো- ক) ভালো দামে বিক্রির জন্য, এবং খ) মাছের সতেজতা ও পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য।
মাছ পচার কারণসমূহ :
মাছের সতেজতা নষ্ট হওয়া বা মাছ পচে যাওয়ার কারণসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো। সাধারণত তিনটি কারণে মাছের সতেজতা নষ্ট হয়ে যায় বা মাছ পচে যায়। এগুলো হলো-
১. ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে;
২. এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে এবং
৩. বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে।
১. ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণ :
মাছের দেহের বিভিন্ন অংশ, যেমন- আঁইশ, ফুলকা, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদিতে অসংখ্য জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া থাকে। জীবিত অবস্থায় এরা মাছের কোনো ক্ষতি করতে পারে না । কিন্তু মাছ মরার পর থেকেই পরিচর্যার সময় মানুষের হাত, পরিবহনে ব্যবহৃত পাত্র এবং পরিবেশ থেকেও মাছ ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক সংক্রমিত হতে পারে।
এই ব্যাকটেরিয়া মাছের দেহে এনজাইম নিঃসরণ করে। ফলে মাছের মাংসপেশি নরম হয়ে যায় এবং দ্রুত পচনক্রিয়া শুরু হয়। মাছ আস্তে আস্তে নরম হতে থাকে। এ সময় বাতাসের অক্সিজেন মাছের দেহের চর্বি ভেঙে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এভাবে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সময়ের সাথে সাথে পচনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
২. এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে:
মাছের দেহে বিভিন্ন এনজাইম থাকে। জীবিত অবস্থায় খাদ্য হজমে মাছ এ এনজাইম ব্যবহার করে। কিন্তু মাছ মারা যাওয়ার পরও এই এনজাইম নিঃসৃত হতে থাকে এবং তার ক্রিয়া চলতে থাকে। এসব এনজাইমের ক্রিয়ায় মৃত মাছের কোষ-কলা ভেঙ্গে যায় এবং মাছ পচতে শুরু করে। এই ক্রিয়াকে অটোলাইসিস (Autolysis) বলে।
৪. বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে:
মাছের দেহ বিভিন্ন জটিল রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা গঠিত। তার মধ্যে প্রোটিন ও চর্বিই প্রধান। মাছের চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে। মাছ মারা যাওয়ার পর মাছের এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডসমূহ বাতাসের সংস্পর্শে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পার-অক্সাইড, অ্যালডিহাইড, কিটোন ইত্যাদি বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে। অধিক মাত্রায় এ জাতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত পদার্থ উৎপন্ন হলে মাছের স্বাভাবিক রং, স্বাদ, তথা গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং মাছ পচে যায় ।
মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ : আমাদের দেশে মাছ সংরক্ষণের তেমন কোনো উন্নত বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করা হয়। ফলে প্রতি বছর মাছ ধরার ভরা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে মাছ নষ্ট হয়ে যায়। মাছের এই পচন রোধকল্পে নিচে মাছ সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
১. বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণ;
২. শুকিয়ে মাছ সংরক্ষণ;
৩. টিনজাত, লবণায়ন এবং ধুমায়িত প্রক্রিয়ায় মাছ সংরক্ষণ; এবং
8.হিমায়নের মাধ্যমে মাছ সংরক্ষণ ।
১. বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণ :
বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণ একটি স্বল্পকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বরফ ব্যবহার করে মাছের দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস কিংবা তার কাছাকাছি নামিয়ে আনা হয় । এতে ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হয় । ফলে এদের আক্রমণও বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া মাছের নিজস্ব এনজাইমের কার্যকারিতা ও অন্যান্য রাসায়নিক ক্রিয়াও বিলম্বিত হয়। ফলে মাছের পচন বিলম্বিত হয়।
বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণের সুবিধা
- এ পদ্ধতি যেকোনো মৌসুমে প্রয়োগ করা যায়; এ পদ্ধতি মাছ সংরক্ষণের অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে সহজ;
- ছোট-বড় সব ধরনের মাছই এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়;
- বরফ দিয়ে সংরক্ষিত মাছ সহজেই পরিবহন করা যায় ও
- এ পদ্ধতিতে গলিত বরফের ঠান্ডা পানি সংরক্ষিত মাছের শরীরে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া, রক্ত ও ময়লা ধুয়ে সরিয়ে ফেলে যা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয়।
বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণের অসুবিধা
- বরফ তৈরিতে প্রায়শ অপরিষ্কার পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে বরফের মাধ্যমে পচনশীল ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু মাছের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
- ব্যবহৃত বরফের টুকরাগুলো বড় এবং বিভিন্ন সাইজের হওয়ার ফলে এবং অনেক সময় বরফের টুকরোর কোনার আঘাতে মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে মাছের বাজারমূল্য কমে যায় ।
- বরফ এবং মাছের অনুপাত সঠিকভাবে দেয়া হয় না বলে সংরক্ষিত মাছের পুষ্টিমান ঠিক থাকে না,
- অনেক সময় তাপ কুপরিবাহী পাত্র ব্যবহার করা হয় না বলে বরফের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না ।
বরফ ও বরফের প্রকারভেদ :
আমরা জানি, পানি শূন্য ডিগ্রি (o° সে.) সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমে যায় একেই আমরা বরফ বলে থাকি। নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ অপসারণের মাধ্যমে পানিকে বরফে পরিণত করা হয়। কারখানাতে সাধারণত ৩ ধরনের বরফ তৈরি করা হয়। যেমন- ব্লক (Block), ফ্লেক (Flake) এবং টিউব (Tube) আইস। আমাদের দেশে মাছ সংরক্ষণের জন্য রক আইস (Block)-ই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় । তবে মাৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ব্যবহারের জন্য ব্লক আইসের চেয়ে ফ্লেক আইস বেশি উপযোগী।
ব্লক অইল আমাদের দেশের অধিকাংশ কারখানাতে ব্লক আইস তৈরি হয়। ব্লক আইস তৈরির পাত্রগুলো প্রতিবারে ভর্তি করার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পাত্রগুলো মসৃণ ও ক্ষয়রোধক ধাতব পদার্থের (Stainless Steel) হওয়া উচিত। যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ কারখানাতে গ্যালভানাইজড শিটের ( Galvanized Sheet) তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হয়। ব্লক আইস বিভিন্ন আকারের ও বিভিন্ন ওজনের হয়ে থাকে। যেমন- ১০ কেজি থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
ক্লেফ আইল :
ক্লেক আইস খুবই ছোট ছোট আকারের হয়ে থাকে এবং এর গুরুত্ব ০.৫ সে.মি. এর চেয়ে কম হয়। এগুলো গুঁড়ো আকারের হয়। মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ফ্রেক আইন ব্যবহার করাই শ্রেয়। কারণ ফ্লেক আইসের টুকরা খুব ছোট হওয়ার এগুলো মাছ কিংবা চিংড়ির পায়ের সাথে লেগে থাকে। ফলে মাছ কিংবা চিংড়ি দ্রুত ঠাণ্ডা হয়। চিট আইস টিউব আইস দেখতে গোলাকার টেস্ট টিউবের মতো। এদেরকেও ব্লক আইসের মতো শুঁড়ো করে ব্যবহার করতে হয়।
ব্লক আইস ও টিউব আইস ড়ো করার পদ্ধতি :
ব্লক আইস অথবা টিউব আইস গুঁড়ো করার জন্য এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটিতে একটি লোহার রোলিং ড্রামের চারিদিকে বড় বড় কাঁটা থাকে। লোহার ড্রামে ঘূর্ণায়মান অবস্থার উপরের দিকে বরফ খণ্ড দিলে সাথে সাথে কাঁটার আঘাতে বরফ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে গুঁড়ো আকারে পাত্রে জমা হয়। যেখানে এ ধরনের সুবিধা নেই সেখানে শক্ত কাঠের টুকরা কিংবা রডের সাহায্যে হাতুড়ির ন্যার আঘাত করেও ব্লক আইস গুঁড়ো করা যায়। সাধারণত বরফ সংরক্ষণের জন্য আলাদা সংরক্ষণাগার থাকে।
বরফ সংরক্ষণাগার সব সময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হবে। বরফ তৈরি, সংরক্ষণ, গুঁড়ো করা বা ব্যবহার করার সময় বরফের মাধ্যমে যাতে মাছে সংক্রমণ ঘটতে না পারে সে দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখা উচিত। আবার মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরক যেন অবশ্যই পরিষ্কার ও দূষণযুক্ত খাওয়ার উপযোগী পানি দ্বারা তৈরি করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

কর দিয়ে মাই ক্ষণের প্রচলিত পদ্ধতি :
আমাদের দেশে বরফের সাহায্যে মাছ সংরক্ষণের প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রথমে মাছকে সাধারণ পানিতে ধুয়ে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে মাছের আঁইশ কিংবা নাড়িভূড়ি বের করা হয় না। বাঁশের চাটাই কিংবা হোগলার তৈরি টুকরিতে বরফ এবং মাছ স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়। এসব ক্ষেত্রে বরফ এবং মাছের অনুপাত আনুমানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত ৪ ভাগ মাছের সাথে এক ভাগ বরফ ব্যবহার করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ভালো ফল পেতে হলে অবশ্যই শীতকালে বরফ এবং মাছের অনুপাত ১:২ এবং গ্রীষ্মকালে ১:১ হওয়া উচিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ ও বরফ পাত্রে রাখার পর এর উপর একটি হোগলার মাদুর বা চটের টুকরো দিয়ে চেপে সেলাই করে সেরা হয়। অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী স্থানে সরবরাহের বেলায় এই পাত্রটি অন্য একটি কাঠের বাক্সে পুরে নেয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারণত ইলিশ মাছ এভাবে দূরবর্তী স্থানে পরিবহন করা হয়।
বরফ দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করার আধুনিক পদ্ধতি :
বর্তমানে মাছ পরিবহনে ব্যবহৃত বাঁশের ঝুড়িকে এই পদ্ধতিতে অতি সহজে এবং সস্তায় তাপ চলাচল প্রতিরোধী বরফ বাক্সে পরিণত করা হয়। উপকূলীয় মৎস্যজীবী গ্রামগুলোতে খুবই কার্যকরভাবে এ ধরনের পরিবর্তিত বরফ বাক্সের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই ধরনের ঝুড়িতে মাছ ঝুড়ির সংস্পর্শে আসে না। তাই বাঁশের চটির ফাঁক-ফোকর থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। এমনকি পলিথিন দিয়ে আগাগোড়া মোড়ানো থাকে বলে ঝুড়ি পরিষ্কার করতেও সমস্যা হয় না।
এই ক্ষেত্রে প্রথমে প্রমাণ সাইজের (২০-৩০ কেজি) বাঁশের ঝুড়ির ভিতরের দিকটা প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে সেলাই করে মুড়ে দিতে হবে। চটের কিছু অংশ বাড়তি থাকবে। চট দিরে মোড়ানোর পর ঝুড়ির ভিতরে এমনভাবে হোগলার পাটি বিছিয়ে দিতে হবে যাতে হোপলার কিছু অংশ বাড়তি থাকে। হোগলার উপর আর এক গ্রন্থ প্লাস্টিকের বস্তা পূর্বের ন্যায় সেলাই করে দিতে হবে। এবার সেলাই করা প্লাস্টিকের উপর পাতলা পলিখিন শিট বিছিয়ে দিয়ে বরফ সেরা মাছ পরিবহন করতে হবে।
প্রথমে পলিখিন শিটের উপর এক স্তর বরফ রেখে যাছ সাজিয়ে দিতে হবে। এর পর ভাঁজে ভাঁজে বরফ ও মাহের স্তর সাজিয়ে উপরে অতিরিক্ত বরফ দিয়ে বাড়তি চট, হোগলা ও পলিখিন শিট এক সাথে মুড়ে ঝুড়ির মুখ বাঁধাই অবস্থার মাছ পরিবহ করতে হবে। এই ধরনের ঝুঁড়ির ক্ষেত্রে ঝুড়ির তলায় বরফ গলা পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য ছিদ্র থাকে। কিছু সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশের ঝুঁড়িতে মাছ পরিবহনের সময় ছিদ্র না থাকার কারণে বরফ গলা পানি সমস্যা সৃষ্টি করে ।
এই পদ্ধতিতে ঝুড়ির তলার পলিথিন, হোগলা ও প্লাস্টিকের চট ছিদ্র করে ১ সে.মি. ব্যাসের ২ ফুট লম্বা একটি প্লাস্টিকের নল ঢুকিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হয়। এবার নলের অপর প্রায় বাঁকিয়ে ঝুড়ির উপরের দিকে এক প্রোপ্তে দেখে রাখা হয়। মাঝে মাঝে নলের মুখ নামিয়ে দিলে বরফ গলা পানি নল দিয়ে বের হয়ে যায়। এভাবে বরফ দেয়া মাছ ২৪ ঘণ্টা পুনরায় বরফ না দিয়েও গুণাগুণ যথাযথ রেখে সংরক্ষণ করা যায়।
প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর একবার করে মাছের উপর সামান্য বরফ দিয়ে প্রায় ৫-৬ দিন পর্যন্ত খুব ভালভাবে এই পদ্ধতিতে মাছকে বরফে সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে হোগলা পাতা একটি চমৎকার তাপ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
বরফের গুণাগুণ বাড়ানোর উপায় :
মাছ সংরক্ষণে বরফের গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে কতিপয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। যেমন-
- বরফ তৈরিতে সব সময় দূষণমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হবে।
- সমুদ্রের লোনা পানি থেকে তৈরি বরফের সংরক্ষণ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই স্বাদু পানিতে ৩% খাবার লবণ মিশিয়ে এই বরফ তৈরি করা যায় ও
- বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সংরক্ষক, যেমন- সোডিয়াম বেনজোয়েট, সোডিয়াম নাইট্রেট, বেনজোয়িক এসিড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ইত্যাদি বরফের সাথে মিশিয়ে এর সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো যায় ।
বরফে সংরক্ষিত মাছ পরিবহন :
বরফে সংরক্ষিত মাছ সাধারণত বাঁশের চাটাই কিংবা হোগলার তৈরি ঝুড়িতে করে পরিবহন করা হয়। এসব ঝুড়ির ভিতরের দিকে শুকনো পাতা কিংবা চটের একটি পাতলা আস্তরণ দেয়া হয়। এসব পাত্রের উপরে ঢাকনা দিয়ে সমস্ত ঝুড়িটাকে চটের আস্তরণ দিয়ে সেলাই করা হয়। পুরাতন কাঠ (চা-বাক্স) দিয়ে বাক্স তৈরি করেও অনেক সময় মাছ পরিবহন করা হয়। ইনসুলেটেট (Insulated) ভ্যানে মাছ পরিবহন করতে পারলে মাছের গুণগতমান দীর্ঘ সময় ভালো রাখা সম্ভব।
ইনসুলেটেড ভ্যান না থাকলে ট্রাক বা ট্রেনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে মাছ পরিবহন করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছের বাক্সগুলো এক সাথে স্তূপাকারে রাখা না হয়। এতে করে উপরের বাক্সের চাপে নিচের মাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ট্রেন বা ট্রাক থেকে মাছ উঠানো নামানোর সময় বিশেষ নজর দিতে হবে যেন মাছের বাক্স জোরে ফেলা না হয় । গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পর পাইকারি বাজারে বিক্রি শেষে খুচরা বাজারে প্রেরণের সময় পুনরায় নতুন বরফ যোগ করে পরিবহন করা উচিত।

২. শুকিয়ে মাছ সংরক্ষণ :
শুকিয়ে মাছ সংরক্ষণ একটি অতি প্রাচীন পদ্ধতি। আমাদের দেশে মাছ সংরক্ষণে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি একটি ব্যাপক ব্যবহৃত পদ্ধতি । তবে সব ধরনের মাছ এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় না। যেমন- ইলিশ মাছসহ যেসব মাছে চর্বি বেশি সেসব মাছ এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় না । প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সূর্যালোক ও বাতাসের মাধ্যমে মাছ থেকে পানি বা জলীয় অংশ হ্রাস করানোকে শুঁটকিকরণ বলে ।
শুঁটকিকরণের ফলে মাছের দেহ থেকে পানি বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। তাই মাছের দেহে পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীবসমূহ পানির অভাবে জন্মাতে বা বৃদ্ধি পেতে পারে না ৷ ফলে মাছের পচন রোধ হয়। উল্লেখ্য টাটকা বা তাজা মাছের শরীরে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ পানি থাকে । শুকিয়ে মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতি : নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে শুকিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা যায় ।
আরও দেখুনঃ