আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ফিস কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং – ১ প্রথমপত্র ব্যবহারিক।
ফিস কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং – ১ প্রথমপত্র ব্যবহারিক
জব নং- ১ – মাছের বাহ্যিক অনসমূহ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ।
মাছের দেহকে মোটামুটি তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. মাথা খ. উদর, ও গ. লেজ।
ক. মাথা:
মুখছিদ্র হতে কানকো পর্যন্ত অংশকে মাথা বলা হয়। মাছের মাথা শরীরের প্রধানতম অঙ্গ। মাথার মুখ, চোখ, ফুলকা প্রভৃতি অঙ্গাদি অবস্থিত।
খ. উদর :
কানকুরা থেকে পায়ু পর্যন্ত অংশকে উদর বলে। মাছের দেহের মধ্যে উদর অংশ বেশি প্রশস্ত। উদর সাধারণত স্ফীত হয় কারণ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গ উদরের ভিতরে থাকে।
গ. লেজ :
পায়ূর পশ্চাতের অংশকে লেজ বলা হয়। লেজ মাছের চলাচলে সাহায্য করে। যাথা, উদর ও লেজ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক অঙ্গের মধ্যে আঁইশ ও পাখনা অন্যতম। আইশ মাছের শরীরকে ঢেকে রাখে। অনেক মাছের আঁইশ থাকে না। মাছের শরীরে জোড় বা বিজোড় সংখ্যক পাখনা থাকে। পাখনা দ্বারা মাছ পানিতে চলাচল করে। কোনো কোনো মাছের শুঁড় থাকে। এসব শুঁড় দিয়ে মাছ খাদ্যবস্তু খুঁজে বেড়ায়। শুঁড়ওয়ালা মাছকে Cat fish বলে।
উপকরণ
১. ট্রে
২. আতশ কাঁচ
৩. নিল
৪. রুইজাতীয় একটি তাজা মাছ
৫. স্পেসিমেন জার ও
৬. ফরমালিন ইত্যাদি ।
১. নিকটস্থ বাজার বা খামার হতে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের তাজা বা সদ্যকৃত রুই বা কাতলা মাছ সংগ্ৰহ করি।
২. মাছের বাহ্যিক অঙ্গপ্রতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করি এবং চিত্র অনুযায়ী শনাক্ত করি।
৩. পর্যবেক্ষণের সময় আতশ কাঁচ ও নিডল ব্যবহার করে আইন, পার্শ্বরেখা, নাসারন্ত্র ইত্যাদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। ব্যবহারিক খাতায় মাছের ছবি এঁকে বাহ্যিক অঙ্গপ্রতঙ্গসমূহ চিহ্নিত করি।
৪. অনুশীলনের পর মাছকে স্পেসিমেন জারে ফরমালিন প্রবণে সংরক্ষণ করি।

ভাব নং- ২: মাছের অভ্যন্তরীণ অনসমূহ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ ।
প্রাসধিক তথ্য
মাছের স্বাস্থ্য রক্ষা, রোগবালাই, খাদ্যগ্রহণ, খাদ্যের উপাদান প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মাছের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। যেসব অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় সেগুলো হলো-
ক. ফুলকা
খ. পাকস্থলী
গ. অ
ঘ. কৎপিণ্ড
ঙ. গল ব্লাডার বা পিত্তথলি
চ. কৃষ্ণ
ছ, পটকা
ঞ. অগ্ন্যাশয়।
ঝ. ডিম্বাশয়

ক. ফুলকা:
মাছের মাথার কানকোর নিচে ফুলকার অবস্থান। মাছের শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ফুলকা ব্যবহৃত হয়। মাথার দুই পাশে কানকোর নিচে ৪ থেকে ৫ জোড়া ফুলকা দেখতে পাওয়া যায় যা টকটকে লাল রঙের।
খ. পাকস্থলী:
মাছের উদর ব্যবচ্ছেদ করলে নাড়ি-ভুঁড়ি দেখা যার এ নাড়ি-ভুঁড়ি হচ্ছে মাছের খাদ্যনালী । খাদ্যনালীর যে অংশ মুখগহ্বরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে পাকস্থলী বলে। খাওয়ার পরে প্রাথমিকভাবে পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তু জমা হয় ।
গ. অস্ত্র :
খাদ্যনালীর পাকস্থলীর পরের অংশ থেকে পায়ু পর্যন্ত অংশকে অস্ত্র বলে। অস্ত্রে হজমকৃত খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষিত হয়।
ঘ. বপিত :
পাকস্থলীর কাছাকাছি ছোট্ট যে অঙ্গের অবস্থান তা হৃৎপিণ্ড। মাছের দেহে রক্ত সঞ্চালনের মূল কেন্দ্র
হিসেবে হৃৎপিণ্ড কাজ করে।
ঙ . গলরাফার :
সব মাছের গলব্লাডার বা পিত্তখনি সহজে চেনা যায় না। বড় বড় আকারের মাছে পাকস্থলীর নিচে গলব্লাডারের অবস্থান বুঝা যায়। পিত্তরস সরবরাহ করা গলব্লাডারের কাজ।
চ. যকৃত :
হৃৎপিণ্ড ও গলব্লাডারের মাঝখানে যকৃতের অবস্থান। ভাষা রঙের যকৃত মাছের রক্তে বিভিন্ন নির্যাস নিঃসৃত করে।
ছ. পটকা:
মাছের দেহ গহ্বরে বেলুন সদৃশ্য পটকা খুব সহজে চেনা যায়। পটকার সাহায্যে মাছ পানির মধ্যে ভেসে থাকতে পারে ।
জ. বৃক্ক :
পটকার উপরে মাছের মেরুদণ্ডের সাথে বৃক্ক লেগে থাকে । বৃক্ক শরীরের মধ্যে হতে বর্জ্য পদার্থ মল মূত্রের সাথে বের করতে সাহায্য করে ।
ঝ. ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় :
প্রজননযোগ্য মাছের দেহাভ্যন্তরে ডিম্বাশয় (স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে) বা শুক্রাশয় (পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে) সহজেই চেনা যায়। প্রজনন পরবর্তী সময়ে এ অঙ্গ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ডিম্বাশয়ে ডিম এবং শুক্রাশয়ে শুক্র তৈরি হয়।
ঞ. অগ্ন্যাশয় :
যকৃতের সাথে সংযুক্ত খুব ছোট গ্রন্থিকে অগ্ন্যাশয় বলে। মাছের দেহে বিভিন্ন রস নিঃসরণ করা অগ্ন্যাশয়ের কাজ।
উপকরণ
১. ব্যবচ্ছেদ টে
২. আতশ কাচঁ
৩. কাঁচি
৪. চিমটা
৫. নিডল
৬. স্কালপেল
৭. ব্রাশ/তুলি
৮. স্পেসিমেন জার
৯. ফরমালিন দ্রবণ
১০. রুইজাতীয় তাজা মাছ
কাজের ধারা
১. নিকটস্থ বাজার বা খামার হতে আনুমানিক আধা কেজি ওজনের দুইটি রুই ও মৃগেল মাছ সংগ্রহ করি।
২. ব্যবচ্ছেদ ট্রের উপর মাছকে পেটের অংশ উপরের দিকে এবং পিঠের অংশ নিচের দিকে দিয়ে শায়িত করি ।
৩. এবার ধারালো কাঁচির সাহায্যে পায়ুপথের সামনে থেকে চোয়াল পর্যন্ত ব্যবচ্ছেদ করি।
৪. যথাযথ ব্যবচ্ছেদের পর উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্ত করি ।
৫. অনুশীলনকৃত নমুনাটি (মাছ) স্পেসিমেন জারে ফরমালিন দ্রবণে সংরক্ষণ করি ।
৬. অনুশীলনকৃত কার্য পদ্ধতি ছবিসহ ব্যবহারিক খাতায় লিখি এবং কাজ শেষে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে ল্যাবে জমা দেই ।
জব নং-৩ : গলদা ও বাগদা চিংড়ি পর্যবেক্ষণ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গলদা ও বাগদা চিংড়ি আমাদের দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সম্পদ । তাই এদের পর্যবেক্ষণ একান্ত প্রয়োজন ।
উপকরণ
১. গলদা চিংড়ি
২. বাগদা চিংড়ি
৩. আতশ কাঁচ
৪. খাতা
৫. পেন্সিল
৬. ট্রে ও বালতি
কাজের ধারা
১. বাজার বা খামার থেকে সংগৃহীত চিংড়ি সাবধানে বালতিতে করে নিয়ে আসি ।
২. চিংড়ি গুলোকে ট্রেতে স্থাপন করি এবং আতশ কাঁচের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করি ।
৩. চিত্র অঙ্কন করি এবং বৈশিষ্ট্যগুলো খাতায় লিপিবদ্ধ করি।
পর্যবেক্ষণ : নমুনা – ১
ক. বর্ণ হালকা সবুজ থেকে কালচে বাদামি।
খ. রোস্ট্রাম লম্বা ও বাঁকানো এবং উপরে নিচে খাজ কাটা ।
গ. শিরোক্ষ বেশ বড়।
ঘ. রোস্ট্রামের উপরিভাগে ১২-১৫টি ও নিম্নভাগে ১১-১৪টি দাঁত আছে।
ঙ. উপরের দ্বিতীয় জোড়া পা বেশ শক্ত, মোটা ও চিমটা যুক্ত ।
সিদ্ধান্ত : এটি গলদা চিংড়ি

পর্যবেক্ষণ : সমুনা – ২
ক. বর্ণ হালকা বাদামি বা হালকা সবুজ।
খ. রোস্টাম বাঁকা ও প্রশস্ত।
গ. গাৱে জোৱাকাটা কালচে দাগ আছে।
ঘ. রোস্ট্রামের উপরিভাগে ৬-৮টি ও নিম্নভাগে ২-৩টি দাঁত আছে।
সিদ্ধান্ত : এটি বাগদা চিংড়ি

জব নং-৪ : একটি আদর্শ পুকুরের প্রতিবেশ পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন উপাদান শনাক্তকরণ ।
প্রাসনিক তথ্য
পুকুরের প্রতিবেশ হলো পানি, মাটি, সূর্যালোক, তাপমাত্রা, প্রাণী ও উদ্ভিদের সমষ্টি। প্রতিবেশে জীব ও অর্জীব উভয় প্রকার উপাদান বিদ্যমান। জীবন্ত উপাদানের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন, জলজ প্রাণী, যেমন- মাছ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, প্রাণী গ্ল্যাংকটন, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি বিদ্যমান। অজৈব উপাদানের মধ্যে আলো, তাপমাত্রা, মাটি ও পানিতে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার অজৈব পদার্থ বিদ্যমান । প্রতিবেশের জীব উপাদানের সাথে অজৈব উপাদানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আন্তক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে।

উপকরণ
১. গেলা জাল
২. স্পেসিমেন জার বড়- ২টা, ছোট- ৪টা
৩. ফরমালিন
৪. বিকার
৫. পামছা
৬. খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি।
কাজের ধারা
১. নিকটস্থ একটি পুকুরের কাছে যাই।
২. পুকুরের প্রতিবেশে জৈব ও অজৈব উপাদান পর্যবেক্ষণ করি।
৩. জৈব উপাদানের অংশ হিসেবে জাল নিয়ে উপর ও নিম্নস্তরের মাছ সংগ্রহ করি।
৪. গামছা দিয়ে হেঁকে কিছু প্ল্যাংকটন সংগ্রহ করি এবং বিকারে নিয়ে সূর্যের আলোর বিপরীতে দেখি।
৫. পানিতে বিদ্যমান শ্যাওলা, জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করি।
৬. পুকুরের তলার কাদা হতে শামুক, ঝিনুক, পোকা ইত্যাদি সংগ্রহ করি।
৭. সংগৃহীত সব নমুনা ফরমালিন দ্রবণে পৃথক পৃথক জারে সংরক্ষণ করি।
৮. ব্যবহারিক খাতার চিত্রসহ অনুশীলনকৃত কার্যক্রম লিখি । ৯. অনুশীলন শেষে জাল, প্ল্যাংকটন মেট, গামছা ইত্যাদি পরিষ্কার করে রেখে দেই।
জব নং- ৫ : পুকুর নির্মাণ কৌশল অনুশীলন।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্মাণ করা হয়। নতুন পুকুর নির্মাণ যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই পুকুর নির্মাণের সময় বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। যেমন- পুকুরের অবস্থান, মাটির প্রকৃতি, পুকুরের আকার, গভীরতা, পাড়, তলদেশ প্রভৃতি। মাছ চাষের প্রকার ও পানির উৎস অনুযায়ী উপরের বিষয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
একটি পুকুরের ৪টি অংশ থাকে। যেমন—
ক. পাড়
গ. বকচর
গ. পাড়ের চাল
ঘ. ভলদেশ।
পাঁড় :
পাড় পানির উপরে ৬০ সে.মি. উঁচু এবং পাড়ের চূড়া ০.৫-১.৫ মিটার প্রশস্ত হলে ভালো হয়। মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী পাড়ের চাল বাহিরের দিকে ১.২ বা ১.৫ হতে হবে।
বকচর :
পাড়ের স্থায়িত্ব, জাল টানার সুবিধা ও মাছের বিচরণের সুবিধার জন্য বকচর রাখা হয়। ১.৫-২.০ মিটার গভীর পুকুরের জন্য ১ মিটার প্রশস্ত বকচর থাকা ভালো।
পাড়ের চাল বা দেয়াল:
পুকুর খননের সময় পাড় বরাবর খাড়াভাবে নিচের দিকে খনন না করে এবং ক্রমে ঢালু করে নিচের দিকে খনন করাকে ঢাল রাখা বলে। মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী পুকুরের ভিতর চারিদিকের ঢাল ১৪১ বা ১৪২ হতে পারে।
তলদেশ :
পুকুরের তলদেশ সমতল তবে একদিকে সামান্য চালু হলে ভালো হয় ।
উপকরণ
১. ঝুজি
২. কোদাল
৩. মাপার ফিতা
৪. বাঁশের খুঁটি

কাজের ধারা
১. খনন করা হচ্ছে এমন একটি পুকুরের কাছে যাই ।
২. কাছে গিয়ে পুকুরের ভিন্ন অংশ শনাক্ত করি।
৩. বুড়ি, কোদাল দ্বারা মাটি কেটে ঢাল তৈরি করি এবং মাপন ফিতা দিয়ে মেপে দেখি।
৪. খনন হচ্ছে পুকুরের অভাবে বিদ্যালয়ের আশপাশে কোনো ছোট জায়গায় নমুনা পুকুর বা মিনি পুকুর খনন করে বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে শনাক্ত করি।
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবন্ধ করি।
জব নং-৬ : পুকুরের বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুরের প্রতিবেশে বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ ও শ্যাওলা পাওয়া যায়। সাধারণভাবে এসব উদ্ভিদ মাছ চাষের জন্য ক্ষতিকর। এসব উদ্ভিদ পানি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দ্রব্য শোষণ করে, পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা প্রদান করে এবং মাছের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে ।
পুকুরের প্রতিবেশের উদ্ভিদকুলকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
১. শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ;
২. অর্ধডুবন্ত উদ্ভিদ;
৩. ভাসমান উদ্ভিদ;
৪. নির্গমনশীল উদ্ভিদ ও
৫. লতানো উদ্ভিদ ।
উপকরণ
১. বড় মুখওয়ালা কাঁচের বোতল বা বয়াম ৫-৭টি
২. ফরমালিন
৩. খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি ।
কাজের ধারা
১. যথেষ্ট পরিমাণে জলজ উদ্ভিদ আছে এমন একটি পুকুর নির্বাচন করি এবং সেখানে যাই।
২. পুকুরের পাড় থেকে, পানির উপর ভাসমান, লতানো বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করি এবং শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী শনাক্ত করি।
৩. প্রতিটি শ্রেণির দুই একটি করে নমুনা ফরমালিন দ্রবণে লেবেল যুক্ত বোতলে সংরক্ষণ করি ।
৪. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।

জব নং- ৭ : বিভিন্ন প্রকার অবাঞ্ছিত মাছ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ।
প্রাসনিক তথ্য
চাষের জন্য পুকুরে ছাড়া হয় না এমন মাছকে অবাঞ্ছিত মাছ বা আমাছা বলে । কারণ এরা চাষকৃত মাছের খাদ্য খেয়ে ফেলে, দ্রুত প্রজনন করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য চাষকৃত মাছের প্রতিযোগিতা করে । এসব মাছ আকারে ছোট, বৃদ্ধির হার কম এবং বাজারে মূল্য ও চাহিদা কম। তাই চাষির জন্য লাভজনক হয় না । পুঁটি, চান্দা, বইচা, দারকিনা, চেলা প্রভৃতি অবাঞ্ছিত মাছের উদারণ।
উপকরণ
১. বিভিন্ন প্রকার গুঁড়ামা
২. ২৫০ এম এল আকারের কাচের জার
৩. ফরমালিন ও
৪. খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি ।
কাজের ধারা
১. নিকটস্থ বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার গুড়া মাছ তাজা অবস্থায় সংগ্রহ করি।
২. সংগৃহীত মাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অবাঞ্ছিত মাছ শনাক্ত করি।
৩. প্রতি প্রকারের মাছ পৃথক করে নেডেল সম্বলিত গ্লাসজারে ফরমালিন দ্রবণে সংরক্ষণ করি।
৪. ব্যবহারিক খাতায় বিভিন্ন প্রজাতির অবাঞ্ছিত মাছের ছবিসহ গৃহীত কার্যক্রমের বিবরণ লিপিবদ্ধ করি।

জব নং-৮ : বিভিন্ন প্রকার রাক্ষুসে মাছ পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
যেসব মাছ চাষকৃত মাছের পোনা খেয়ে ফেলে তাদের রাক্ষুসে মাছ বলে। যেসব পুকুর বন্যার সময় ডুবে যায় বা বাইরে থেকে খাল বিলের মাছ ঢুকতে পারে সেসব পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকার আশঙ্কা বেশি। শোল, বোয়াল, গজার, টাকি, চিতল, ভেটকি, বেলে ইত্যাদি রাক্ষুসে প্রকৃতির মাছ। অবাঞ্ছিত মাছের তুলনায় রাক্ষুসে মাছ পুকুরে মাছ চাষের জন্য বেশি ক্ষতিকর।

উপকরণ
১. বিভিন্ন প্রজাতির রাক্ষুসে মাছ
২. বড় আকারে কাচের জার-১-২ লিটার মাপের
৩. ফরমালিন প্রবণ
৪. খাতা ও পেন্সিল ইত্যাদি।
কাজের ধারা
১. নিকটস্থ বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার রাক্ষুসে মাছ যেমন- শোল, বোয়াল, গজার, টাকি প্রভৃতি মাছ জীবিত অথবা ভাজা অবস্থার সংগ্রহ করি।
২. প্রতিটি রাক্ষুসে মাছের আকৃতি ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করি ও শনাক্ত করি।
৩. বিভিন্ন প্রজাতির রাক্ষুসে মাছ লেবেল এঁটে কাচের জারে ফরমালিন দ্রবণে সংরক্ষণ করি।
৪. প্রতিটি শনাক্তকৃত রাক্ষুসে মাছের ছবি খাতার আঁকি ও নাম লিখি।

জব নং-৯ : রোটেনন প্রয়োগে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দমন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
রোটেনন ডেরিস গাছের শিকড় থেকে তৈরি এক ধরনের বাদামি রঙের পাউডার। যা পানিতে প্রয়োগ করলে মাছ মারা যায়। পানিতে রোটেনন প্রয়োগ করলে মাছ পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা হারায়। ফলে মাছ ফুলকার সাহায্যে পানি থেকে দ্রবীভূত অেিজন গ্রহণ করতে পারে না বলে মাছ অক্সিজেন গ্রহণের জন্য পানির উপরিতলে চলে আসে। সচরাচর ২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানি হিসেবে রোটেনন ব্যবহার করা হয় । রোটেনন দ্বারা মৃত মাছ খাওয়া যায়। রৌদ্রময় সময়ে রোটেননের কার্যকারিতা বেশি।
উপকরণ
১. রোটেনন পাউডার
২. বড় বালতি
৩. মগ
৪. বড় গামলা
৫. মাপন ফিতা
৬. টানা জাল
৭. খাতা ও পেন্সিল ইত্যাদি।
কাজের ধারা
১. রোটেনন প্রয়োগের জন্য নিকটস্থ একটি পুকুর নির্বাচন করি ।
২. পুকুরে জলায়তন নির্ণয়ের জন্য মাপন ফিতা ব্যবহার করে পানি বরাবর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা মেপে নিই ।
৩. এবারে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ গুণ করে জলায়তন নির্ণয় করি। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ফুটে দেয়া থাকলে তাকে ৪৩৫.৬ দ্বারা ভাগ করে শতাংশ বের করি (৪৩৫.৬ বর্গফুটে ১ শতাংশ)।
৪. এবার ২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানি হিসেবে মোট রোটেননের পরিমাণ নির্ণয় করি । ব্যবহারিক খাতায় ছকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা, জলায়তন ও রোটেননের পরিমাণ লিপিবদ্ধ করি ।
৫. মোট রোটেননের ৩ ভাগের ২ ভাগ রোটেনন (৩০০ গ্রাম) বালতিতে করে যথেষ্ট পরিমাণে পানিতে গুলে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে ।
৬. বাকি ৩/১ ভাগ রোটেনন (২০২ গ্রাম) অল্প পানি দিয়ে গামলায় এমনভাবে গুলাই যেন শুকনা শুকনা দলা বানানো যায়। এভাবে তৈরিকৃত দলাকে ছোট ছোট বল আকারে তৈরি করে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দেই ।
৭.জাল টেনে পুকুরের পানি উলটপালট করে দেয়ার ব্যবস্থা করি ।
৮. ৫-১০ মিনিট পর জাল টেনে আক্রান্ত মাছ ধরে ফেলি।
৯. গৃহীত কাজের ধারাটি ব্যবহারিক খাতায় চিত্রসহ লিপিবদ্ধ করি।
জব নং-১০ : পুকুরে চুন প্রয়োগ ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুর প্রস্তুতি ও চাষের সময় পুকুরে চুন প্রয়োগ করা হয়। চুন পানির অম্লত্বকে নিরপেক্ষ করে ফলে পুকুরে দেয়া সার দ্রুত কাজ করে। অনেক সময় চুন প্রয়োগ করলে সার প্রয়োগ না করেই পানিতে যথেষ্ট প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। চুন প্রয়োগের ফলে মাছের রোগবালাই দূর হয়, বাজে গ্যাস নিয়ন্ত্রণ হয়। তাই সচেতন মৎস্য চাষি পুকুর প্রস্তুতির সময় এবং শীতের প্রাক্কালে চুন প্রয়োগ করে থাকেন। সাধারণত প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা হয়।
উপকরণ
১. চুন, ২. মাটির চাড়ি বা অর্ধেক কাটা ব্যারেল, ৩. ছোট বালতি, ও ৪. ছোট মগ বা বাটি ।
কাজের ধারা
১. চুন প্রয়োগের জন্য আগেই প্রয়োজনীয় উপকরণ নির্দিষ্ট পুকুরের পাড়ে মজুদ রাখি ।
২. মাগন ফিতা দিয়ে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মিটারে বা ফুটে মাপি এবং নিচের হিসাব অনুযায়ী পুকুরের আয়তন নির্ণয় করি। দৈর্ঘ্য (মিটার) X গ্রন্থ (মিটার) ৪০.৪৮ = শতাংশ অথবা, দৈর্ঘ্য (ফুট) X গ্রন্থ (ফুট) ৪৩৫.৬
৩. আয়তন অনুযায়ী শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন কাটা ব্যারেলে রাখি। খুব সাবধানে আস্তে আস্তে চুনের মধ্যে পানি ঢালি। চুনে পানি দিলে সহসা গরম হয়ে চুন টগবগ করে ফুটতে শুরু করবে।
৪. এ সমর চুনের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। কারণ যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ৪. চুন ঠাণ্ডা হলে ব্যারেলে বেশি করে পানি মেশাই। এবারে তরল চুন বালতিতে নিয়ে বাটির সাহায্যে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দেই।
৫. পুকুর শুকনো হলে ব্যারেলের পরিবর্তে সমতল মাটিতে চুন রেখে হালকা করে পানি আগের দিন রাতে ছিটিয়ে দেবার ব্যবস্থা করি। কয়েক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে চুন ফেটে যাবে এবং সব চুন গুঁড়া পাউডারের মতো হবে। চুন যথেষ্ট ঠাণ্ডা হলে পরে ঝুঁড়িতে করে পাড়সহ সারা পুকুরে ছিটিয়ে দেই।
৬. চুন ভেজানোর জন্য প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার না করি।
৭. চুন ছিটানোর সময় বাতাসের অনুকূলে ছিটাই। বাভাসের বিপরীতে ছিটালে চোখে মুখে এসে চুন লাগতে পারে। সম্ভব হলে চুন ছিটানোর সময় নাকে মুখে গামছা বেঁধে নিই। ৮. গৃহীত কার্যক্রমটি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবন্ধ করি ।

জব নং-১১ঃ পুকুরে সার প্রয়োগ :
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপন্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্য থাকা আবশ্যক । পুকুরে সার প্রয়োগেরদ্বারা পুষ্টির যোগান দেয়া হয়। অজৈব সারের মধ্যে ইউরিয়া অথবা টিএসপি, জৈব সারের মধ্যে গোবর, হাঁস- মুরগির বিষ্ঠা, কম্পোস্ট প্রভৃতি মাছের পুকুরে প্রয়োগ করতে হয় । পুকুর প্রস্তুতির সময় একটু বেশি মাত্রায় এবং পোনা মজুদের পর দৈনিক অথবা সাপ্তাহিক মাত্রায় মিশ্রসার প্রয়োগে বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়। পুকুরে সার দিতে হবে কিনা তা বুঝার জন্য সেকিডিস্কের সাহায্য নিতে হবে। সার ব্যবহারের জন্য নিচের ছক অনুসরণ করা যেতে পারে ।
প্রতি শতাংশ পুকুরের জন্য সারের মাত্রা
উপকরণ
১. ইউরিয়া
২. টিএসপি
৩. গোবর
৪. পাল্লা ও বাটখারা
৫. বালতি বা গামলা
৬. মগ
৭. মাপন ফিতা
৮. সেকিডিস্ক
কাজের ধারা
১. নিকটস্থ একটি পুকুরের নিকট যাই। সেকিডিস্কের সাহয্যে পুকুরের গভীরতা পরিমাপ করি । সেকিডিস্ক গভীরতা ৩৫ সে.মি. এর বেশি হলেই সার প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করি ।
২. মাপন ফিতার সাহায্যে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করে জলায়তন নির্ণয় করি ।
৩. আয়তন অনুযায়ী ইউরিয়া, টিএসপি ও গোবর সারের পরিমাণ নির্ণয় করি।
৪. টিএসপি এবং গোবর সার একটি গামলা বা বালতিতে ৩-৪ গুণ পানির মধ্যে ১২-২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখি। অতঃপর প্রয়োগকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় মাত্রায় ইউরিয়া সার মিশিয়ে নেই।
৫. ভেজানো সার একটি কাঠি দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নেই।
৬. সূর্যালোকিত দিনে ১০-১১ টার মধ্যে মিশ্রিত সার সারা পুকুরে ছিটিয়ে দেই।
৭. গৃহীত কার্যক্রম চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি।
জব নং- ১২ : পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততা নির্ণয়।
প্রাসঙ্গিক তথ্য :
পোনা মজুদের আগে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা হয় । পানির রং সবুজাভ বা বাদামি সবুজ হলে খালি চোখে বুঝা যায় যে, পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য আছে কিনা। পানিতে কী পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য আছে তা নিম্নলিখিত পদ্ধতির সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
১. সেকিডিস্ক ব্যবহার করে :
সেকিডিস্ক একটি লোহার থালা যার ব্যাস ২০ সেন্টিমিটার। থালাটি সাদা ও কালো রঙে রং করা এবং একটি সুতা দ্বারা বাঁধা যাতে একে পানিতে ঝুলিয়ে দেয়া যায়। সকাল ১০-১১টায় রৌদ্রময় অবস্থায় সেকিডিস্কটি পানিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। এবার উপর হতে দেখার চেষ্টা করতে হবে কখন ডিস্কটি পানিতে অদৃশ্য হয়ে যায়।
যখন চাকতিটি পানিতে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায় সেই বিন্দুতে সুতা বরাবর পানির গভীরতা পরিমাপ করা হয়। সেকিডিস্কটির গভীরতা ২৫ সেন্টিমিটার বা তার কম হলে বুঝতে হবে পানিতে অতিরিক্ত খাদ্য আছে। যদি এ গভীরতা ২৬ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় তবে বুঝতে হবে পানিতে পরিমিত পরিমাণ মাছের খাদ্য আছে। আর যদি এ গভীরতা ৩৫ সেন্টিমিটার এর বেশি হয় তখন বুঝতে হবে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা কম আছে। তবে পানি কোনো কারণে ঘোলাটে থাকলে সেকিডিস্ক গভীরতা পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা নির্দেশ করে না ।
২. হাত ব্যবহার করে :
পানিতে হাত ডুবিয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায়। সূর্যালোকিত দিনে সকাল ১০-১১টার দিকে পানিতে হাত আস্তে আস্তে ডুবাতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে কোথায় যেয়ে হাতের তালু অদৃশ্য হয়। যদি কনুই পর্যন্ত যাওয়ার পর হাতের তালু অদৃশ্য হয় তাহলে বুঝতে হবে পানিতে পরিমিত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
৩. কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করে :
স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে পুকুরের পানি নিয়ে সূর্য্যের আলোর দিকে দেখলে গ্লাসের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাদ্যকণা দেখা গেলে বুঝতে হবে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
উপকরণ :
১. সেকিডিস্ক
২. মিটার স্কেল
৩. কাঁচের গ্লাস
৪. গামছা
৫. আতশ কাঁচ
৬. খাতা, পেন্সিল ।
কাজের ধারা
সেকিডিস্ক ব্যবহার করে
১. মাছ চাষ হয় এমন একটি পুকুরের কাছে রৌদ্রময় দিনে সকাল ১০-১১টার মধ্যে যাই ।
২. পানি ঘোলা হয়নি এমন স্থানে ধীরে ধীরে ঊরু সমান পানিতে নামি ।
৩. সেকিডিস্ককে আস্তে আস্তে পানিতে ডুবাতে থাকি এবং উপর থেকে দেখতে থাকি কখন চাকতিটি পানির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় ।
৪. এবারে সেকিডিস্ক বাঁধা সুতা মিটার স্কেল দিয়ে মেপে সেকিডিস্কের গভীরতা নির্ণয় করি ।
৫. এভাবে পুকুরের আরও দুইটি স্থানে ঘোলাত্ব এড়িয়ে সেকিডিস্ক গভীরতা নির্ণয় করি।
হাত ব্যবহার করে
১. পুকুরে পানি ঘোলা হরনি এমন স্থানে রৌদ্রময় দিনে ১০-১১টায় ধীরে ধীরে ঊরু সমান পানিতে নামি এবং নিজের একটি হাত সোজা করে পানিতে ডুবিয়ে দেই ।
২. এবারে উপর হতে হাতের তালু দেখার চেষ্টা করি। যদি হাতের তালু দেখা না যায় তাহলে বুঝতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য আছে । পানি ঘোলা হলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না ।
কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করে
১. একটি গামছা দুইজনে কিছুদূর পানির মধ্যে টানি। মাছ ধরার মতো করে পানি আস্তে আস্তে কমাই ।
২. এবারে গামছার মধ্য থেকে স্বচ্ছ গ্লাসে এক গ্লাস পানি নেই ।
৩. এবারে গ্লাসটি সূর্যের আলোর দিকে ধরি এবং পানির মধ্যে ভাসমান খাদ্যকণা দেখার চেষ্টা করি ।
৪. যদি গ্লাসের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুজির মত খাদ্যকণা পর্যাপ্ত পরিমাণে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে গ্লাসের পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। খাদ্যকণাগুলো বড় দেখার জন্য আঁতশ কাচের সাহায্যে নেয়া যেতে পারে।
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং-১৩ : সুস্থ ও সবল পোনা নির্বাচন কৌশল ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুরে মাছ চাষের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে সুস্থ ও সবল পোনা মজুদের ওপর। পোনা ব্যবসায়ী দূরদূরান্ত থেকে পাতিলে করে মাছের পোনা নিয়ে আসে। অনেক সময় এসব পোনা দুর্বল, রোগাক্রান্ত ও সঠিক আকারের হয় না। এ জন্য পোনা ক্রয়ের আগে একটি সাদা গামলায় কিছু পোনা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভালো পোনা চঞ্চল, লাফালাফি করবে।
পোনার গায়ের রং ঝকঝকে উজ্জ্বল হবে। আঁইশ স্বাভাবিক থাকবে, গায়ে কোনো দাগ থাকবে না, পাখনা অক্ষত থাকবে। ভালো পোনা হাত দিয়ে ধরলে শরীর পিচ্ছিল মনে হবে। সাধারণত ৮-১০ সে.মি. আকারের পোনা পুকুরে মজুদের জন্য ভালো। এ আকারের পোনাকে আঙ্গুলে পোনা বলে।
উপকরণ
১. মাছের পোনা
২. সাদা গামলা
৩. স্কেল
৪. আতশ কাঁচ
৫. খাতা ও পেন্সিল
কাজের ধারা
১. পূর্বে থেকে একজন পোনা ব্যবসায়ীকে ঠিক করে রাখি যাতে অনুশীলনের সময় পোনা নিয়ে আসে।
২. একটা বড় সাদা গামলায় কতগুলো পোনা পাতিল থেকে নেই।
৩. হাতের আঙ্গুল দিয়ে পোনার আকার ৮-১০ সে.মি. কিনা অনুমান করি। স্কেল ব্যবহার করে ২-১টা পোনার
৪.সঠিক আকার সম্পর্কে নিশ্চিত হই । ৪. মাছের পোনা লাফালাফি করে কিনা এবং যথেষ্ট প্রাণশক্তি আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করি।
৫. পোনার গায়ের রং স্বাভাবিক উজ্জ্বল কিনা, আঁইশ উঠা কিনা বা শরীরে কোনো দাগ আছে কিনা তা আঁতশ কাঁচ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি ।
৬. পোনার পাখনা অক্ষত কিনা, কোনটা ভাঙা, ছেড়া কিনা আঁতশ কাঁচ দিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করি।
৭. পোনার গা পিচ্ছিল কিনা অর্থাৎ গায়ে শ্লেষ্মা আছে কিনা অথবা খসখসে কিনা হাত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি ।
৮. প্রতিটি পোনার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক, হৃষ্টপুষ্ট আছে না রোগাক্রান্ত, দুর্বল বা চিকন তা লক্ষ্য করি ।
৯. গৃহীত কার্যক্রম ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং- ১৪ পোনা পরিবহন ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
দূরদূরান্ত হতে মাছের পোনা জীবন্ত পরিবহন বা স্থানান্তর করা হয়। এরকম স্থানান্তর বা পরিবহনের সময় পোনা মাছ যথেষ্ট ধকলের সম্মুখীন হয়। পোনা ওয়ালাদের কাছ থেকে পুকুরে মজুদের জন্য পোনা ক্রয় করা হয়। তবে কেহ কেহ নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারি পোনা উৎপাদন খামার হতে সরাসরি পোনা ক্রয় করে পুকুরে মজুদ করে থাকে।
পোনা উৎপাদন খামার হতে অক্সিজেন দিয়ে পলিথিন ব্যাগে পোনা সরবরাহ করা হয়। পোনা ব্যবসায়ীর নিকট থেকে মজুদের জন্য নির্বাচিত পোনা পুকুরে ছাড়ার আগে অভ্যস্থকরণ এবং শোধন করে পুকুরে ছাড়া হয়। পক্ষান্তরে পুকুরের মালিক পোনা উৎপাদন খামার থেকে মজুদের জন্য পোনা করলে পোনা উৎপাদন খামারেই পোনা শোধন করে পরে পরিবহন করা হয়।
উপকরণ
১. মাছের পোনাসহ পোনা বিক্রেতা
২. থার্মোমিটার
৩. মাঝারি বালতি
৪. লবণ বা পটাশ
৫. হাত জাল।
কাজের ধারা
১. হাঁড়িতে করে আনা পোনা পুকুর পাড়ে ছায়ায় বা ঠাণ্ডা স্থানে রাখি, থার্মোমিটার দিয়ে হাড়ির পানির তাপমাত্রা মাগি । ঐ সময় পুকুরের পানির তাপমাত্রা মেপে দেখি।
২. হাঁড়ির পানির এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রার ব্যবধান ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের বেশি হলে ধীর ধীরে পুকুরের পানি হাড়ির পানিতে মিশাই এবং ১৫-২০ মিনিটি অপেক্ষা করি।
৩. প্রথমে হাড়ি হতে এক-পঞ্চমাংশ পরিমাণ (২০%) পানি ঢেলে ফেলি এবং পুকুরের পানি দিয়ে হাঁড়ি পূর্ণ করে দেই এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করি। মাছের হাঁড়ির পানি পুকুরের মধ্যে না ফেলি।
৪. অভাবে ২০% পানি পরিবর্তনের ফলে যখন হাঁড়ির পানির তাপমাত্রা পুকুরের পানির ভাপমাত্রার সমান হয় তখন পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। তবে পোনা ছাড়ার আগে শোধন করা ভালো।
৫. অক্সিজেন সমৃদ্ধ পলিখিন ব্যাগে পরিবহনকৃত পোনা কিছুক্ষণ পুকুরের পানিতে রেখে উভয় তাপমাত্রা সমান হলে ব্যাগের মুখ খুলে আস্তে আস্তে পোনা ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।

জব নং-১৫ : পোনা টেকসইকরণ ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পোনার দৈর্ঘ্য ৭-১০ সে.মি. হলেই এদের বিক্রি শুরু হয়। লালন পুকুর হতে দূরদূরান্তে ছোট পোনা পরিবহনের আগে পরিবহনকালীন ধকল সহ্যের জন্য টেকসই করে নিতে হবে। পুকুরে জাল টেনে পোনাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে পানির ঝাঁপটা দিয়ে পোনাকে টেকসই করা হয়। টেকসই করা পোনা দূর দূরান্তে পরিবহন করা সহজ।
কাজের ধারা
১. পোনা ধরার জন্য চট জাল বা গুজরী জাল নিয়ে নার্সারি পুকুরে যাই ।
২. জাল টেনে সব পোনা এক জায়গায় এনে আস্তে আস্তে পানির ঝাঁপটা মারতে থাকি ।
৩. . ঘণ্টা খানেক ধরে এভাবে পানির ঝাঁপটা দিয়ে স্রোত সৃষ্টি করি ।
৪. পরপর দুই দিন এভাবে জাল টেনে পোনা একত্রিত করে পানির ঝাঁপটা দিয়ে কৃত্রিম স্রোত সৃষ্টি করি ।
৫. স্রোতের বিপরীতে আসা পোনা গুলো যথেষ্ট টেকসই বলে ধরে নেওয়া হয়।
৬. এভাবে টেকসই করা পোনা দূরদূরান্তে পরিবহনের জন্য উপযুক্ত হয়।
৭. কাজ শেষে চট জাল, বালতি ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিছন্ন করে রেখে দেই।
৮. গৃহীত কার্যক্রমটি ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি।
জৰ নং-১৬ : গোনা শোষন অনুশীলন।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পোনাকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য শোধন করে নেয়া দরকার। একটি পাত্রে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা ২০০ গ্রাম লবণ মিশাতে হবে। এবারে হাত জালে বা মশারির কাপড়ের মধ্যে ৩০০-৪০০ পোনা নিয়ে ঐ মিশ্রণে আধা মিনিট গোসল করিয়ে পুকুরে ছাড়া যায়। মশারি বা হাতজালের অনুপস্থিতে পাতলা গামছা ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাজের ধারা
১. একটি বালতির মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ পটাশ (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) বা ২০০ গ্রাম লবণ মিশাই ।
২. এবার অভ্যস্তকরণকৃত পোনা হতে হাত জাল দিয়ে পোনা উঠিয়ে বালতির মিশ্রণে ৩০ সেকেন্ড ডুবিয়ে পুকুরে ছাড়ি। প্রজাতি অনুযায়ী পোনা গণনার কাজ এ সময় করে নিই ।
৩. ৩০০-৫০০টি পোনা শোধনের পর আরেক বালতি মিশ্রণ তৈরি করি এবং আরও পোনা শোধন করে পুকুরে মজুদ করি ।
৪. পুকুরে পোনা মজুদের কাজটি মৃদু ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সম্পন্ন করি। এজন্য সকালে পোনা ছাড়া সবচেয়ে ভাল। তবে বিকালেও ছাড়া যেতে পারে। মেঘলা দিনে বা ভ্যাপসা গরমের সময় পোনা ছাড়া উচিত নয়।
৫. পুকুরে পোনা ছাড়ার ৬-১২ ঘণ্টা পর পাড়ের কাছে যেয়ে পোনার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করি। মৃত পোনা পাড়ের কাছে ভেসে থাকতে দেখা যাবে। বেশি পোনা মারা গেলে সমসংখ্যক পোনা আবার পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করি ।
৬. গৃহীত কার্যপ্রণালি ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি।

জব নং- ১৭ : পুকুরে পোনা মজুদ কৌশল অনুশীলন ।
প্রাসনিক তথ্য
দূরদূরান্তে মাছের পোনা জীবন্ত পরিবহন বা স্থানান্তর করা হয়। এরকম স্থানান্তর বা পরিবহনের সময় গোনা যথেষ্ট ধকলের সম্মুখীন হয়। পোনা মাছ সাধারণত পালি বা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন করা হয়। পোনা পরিবহনের পর পরই যদি পুকুরের পানিতে সরাসরি ঢেলে দেয়া হয় তাহলে অনেক পোনা মারা যাবে। ভাই মজুদকৃত পোনার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য পুকুর পাড়ে এনে পোনাকে পুকুরের পানির সাথে অত্যন্ত করে পুকুরে ছাড়া হয়।
কাজের ধারা
১. পাতিল বা ব্যাগে করে আনা পোনা ছায়ায় বা ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে।
২. থার্মোমিটার দিয়ে পাতিলের বা ব্যাগের পানির তাপমাত্রা এবং পুকুরের তাপমাত্রা মেপে নিতে হবে।
৩. উভয় পানির তাপমাত্রার ব্যবধান ২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের বেশি হলে ধীরে ধীরে পুকুরের পানি নিয়ে পাতিলের পানিতে মিশাতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
৪. এবার পাতিল থেকে এক-পঞ্চমাংশ পানি (২০%) ফেলে দিয়ে পুকুরের পানি নিয়ে পাতিল পুর্ণ করতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৫. এভাবে ২০% হারে পানি পরিবর্তনের ফলে পানির ভাপমাত্রা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমান হলে বাপের মুখ পুকুরের পানিতে কাজ করে ধরে ব্যাগের ভিতর হাত দিয়ে পানির স্রোত দিতে হবে।
৬. স্রোতের বিপরীতে পোনাগুলো পাতিল থেকে বের হয়ে পুকুরে চলে যাবে।
৭. এবার হাঁড়ি বা পাতিল দিয়ে পানিতে ঢেউ দিতে হবে ফলে পোনাগুলো সারা পুকুরে ছড়িয়ে পড়বে।
৮. মেঘলা দিনে ৰা প্ৰচণ্ড রৌদ্রের সময় পুকুরে পোনা ছাড়া যাবে না ।
৯. সকাল অথবা বিকেল বেলায় পোনা ছাড়া ভালো।
১০. পুরা কার্যক্রমটি ধৈর্য সহকারে করতে হবে এবং গৃহীত কার্যক্রমটি ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
জব নং- ১৮: সম্পূরক খাদ্য তৈরিকরণ ।
প্রাসনিক তথ্য
পুকুরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন খাদ্য মাছের পুষ্টি চাহিদা পুরণ করতে পারে না। মাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের খাদ্যের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তাই আশানুরূপ উৎপাদন পাওয়ার জন্য মাছকে সম্পূরক খাদ্য দেয়া হয়। সম্পূরক খাদ্য দুই প্রকার, যথা-
১. প্রাকৃতিক সম্পূরক খাদ্য : চাল, গম, ডাল এদের কুড়া বা ভুসি, খৈল, সবুজ ঘাস, পাতা, ক্ষুদিপানা, শামুক, ঝিনুক, পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদি।
২. তৈরি সম্পূরক খাদ্য : বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ও কিছু কিছু রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে যান্ত্রিকভাবে এ খাদ্য তৈরি করা হয়। যেমন- ফিশমিল, ব্লাডমিল, খৈল, কুঁড়া, তুমি ইত্যাদি মিশিয়ে বল বা পিলেট আকারে এ খাদ্য তৈরি করা হয়।
উপকরণ
১. চালের কুঁড়া, গমের ভূসি, সরিষার খৈল, ফিশমিল ইত্যাদি
২. প্লাস্টিকের গামলা ২টি, মগ ১টি ৩. ওজন করার জন্য দাঁড়িপাল্লা।
কাজের ধারা
১. এক কেজি খাদ্য তৈরি করার জন্য ৪০০ গ্রাম চালের কুঁড়া, ২০০ গ্রাম গমের ভূসি, ২৫০ গ্রাম সরিষার খৈল ও ১৫০ গ্রাম ফিশমিল ওজন করে পৃথক করে রাখি।
২. সরিষার খৈল দ্বিগুণ পরিমাণ পানিতে একটা গামলায় ১০-১২ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখি।
৩. এবারে ভেজা খৈল ও ফিশমিলের সাথে কুঁড়া ও ভূসি মিশিয়ে হাত দিয়ে ভালোভাবে মেশাই।
৪. মিশ্রিত খাদ্যের মঞ্চ দ্বারা ছোট ছোট বল আকৃতির বানাই। এসব বল খাদ্যদানি বা ফিডিং ট্রেতে করে পুকুরে প্রয়োগ করি। অতিরিক্ত পরিমাণ বল আকৃতির খাদ্য রোদে শুকিয়ে ৭ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য রেখে দেই।
৫. গৃহীত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখে রাখি ।

জব নং–১৯: ফিডিং বা খাদ্যদানি তৈরি এবং এর ব্যবহার।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের জন্য ফিডিং ট্রে ব্যবহার করা হয়। এটি বর্গাকার একটি ছোট চালুনির মতো। ১ মিটার x ১ মিটার আকারের কাঠ বা বাঁশের প্রেমে মশারির জাল লাগিয়ে এটি তৈরি করা হয়। একটি বীপের আগার ট্রে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ৩০ শতাংশ পুকুরের জন্য ২টি ফিডিং ট্রে ব্যবহার করা হয়। ট্রেতে খাদ্য প্রয়োপ করলে খাদ্যের অপচয় কম হয় ফলে চাষির খরচ বাঁচে। তবে বানিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োজ্য নয়।
উপকরণ
১. ১ মিটার x ১ মিটার কাঠের টুকরা ৪টা
২. নাইলনের মশারির জাল ১ বর্গ মিটার
৩. লোহার পেরেক ১° এবং ১/২” আকারের পরিমাণ মতো ও ছোট হাতুড়ি
৪. ট্রে ঝুলানোর জন্য নাইলনের রশি
৫. চিকন বাঁশের আগা ১ টুকরা
৬. বাঁশের খুঁটি ৪-৫ হাত লম্বা ১ টা ৭. পূর্বে তৈরি করা কিছু খাদ্য ।
কাজের ধারা
১. প্রথমে চওড়া কাঠের টুকরা চারটাকে পেরেক ঠুকে বর্গাকৃতির ফ্রেম তৈরি করি ।
২. মশারির কাপড়কে টাইট করে ফ্রেমের সাথে আটকানোর ব্যবস্থা করি। পাতলা কাঠের টুকরা দিয়ে আটকানো মশারির কাপড়কে আরও মজবুত করে আটকাই ।
৩. এভাবে তৈরিকৃত চালুনির মতো খাদ্যদানিকে চার কোনায় রশি বেঁধে বাঁশের আগার সাথে বাঁধি। পানিতে সহজে ডুবার পর খাদ্যদানির চার কোনায় ছোট ছোট ইটের টুকরা বেঁধে দিই ।
৪. এবারে পুকুরের পাড়ে একটি খুঁটি পুঁতে খাদ্যদানির বাঁশ এমনভাবে বাঁধি যাতে বাঁশটি ঘুরিয়ে খাদ্যদাি পুকুরের মধ্যে ১.০-১.৫ মিটার গভীরে স্থাপন করা যায়।
৫. এবারে পূর্বে প্রস্তুতকৃত সম্পূরক খাদ্যের বল খাদ্যদানীতে দিয়ে বাঁশের হাতল ঘুরিয়ে খাদ্যদানি পুকুরের ভিতরে ১ মিটার গভীরে বা তলদেশের ৩০-৪০ সে.মি. উপরে স্থাপন করি। ৬. এবার গৃহীত পদক্ষেপগুলো চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিখি।

আরও দেখুনঃ