আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ফিস কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং – ১ দ্বিতীয়পত্র ব্যবহারিক।
ফিস কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং – ১ দ্বিতীয়পত্র ব্যবহারিক
জব নং- ১: মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
তেলাপিয়া মাছ ঘন ঘন প্রজনন করে। একটি পূর্ণ বয়স্ক তেলাপিয়া বছরে ৩ বারেরও অধিক প্রজনন করে থাকে। ফলে চাষকৃত পুকুরে এদের সংখ্যাধিক্য ঘটে থাকে। পরিণতিতে খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে তেলাপিয়ার মাঝে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। ফলে বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয় ও উৎপাদন হ্রাস পায়। আবার পোনা দেয়া ও পোনা লালন পালনে স্ত্রী তেলাপিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কারণে স্ত্রী তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার পুরুষ তেলাপিয়ার চেয়ে অনেক কম। তেলাপিয়ার এই অনাকাঙ্খিত প্রজনন ঠেকানোর জন্য স্ত্রী ও পুরুষ তেলাপিয়া শনাক্তকরণ বা মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা শনাক্তকরণ প্রয়োজন।
উপকরণ
১. তেলাপিয়ার পোনা (প্রতিটি ৩৫-৪০ গ্রাম )
২. স্কুপ নেট
৩. টে
৪. হাপা
কাজের ধারা
পোনা শনাক্তকরণের জন্য ৩৫-৪০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া পোনা সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর নিম্নোক্ত অঙ্গসমূহ বা দেহের বর্ণ পর্যবেক্ষণ করে স্ত্রী ও পুরুষ তেলাপিয়া শনাক্ত করা যেতে পারে।
এভাবে সংগৃহীত মনোসেক্স পুরুষ তেলাপিয়া চাষের জন্য পুকুরে মজুদ করা যেতে পারে।
জব নং – ২ থাই পাঙ্গাশের পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ক্যাট ফিল্ম (Cat fish)-জাতীয় মাছের মধ্যে থাই পাঙ্গাল অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। শক্ত গড়ন, পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম। যেকোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণে অভ্যন্ত। থাই পাঙ্গাশ সুস্বাদু ও বাজারে সহজলভ্য। নিচে থাই পাঙ্গাশ মাছের পোনা শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যাবলি দেয়া হলো।
পোনা শনাকরণ উপকরণ
১. পাঙ্গাশ মাছের পোনা
২. প্লাস্টিকের গামলা
৩. স্কুপনেট
৪. টে
৫. ফোরসেপ
৬. খাতা ও পেন্সিল
৭. বালতি
পোনা শনাক্তকরণে কাজের ধারা
- থাই পাঙ্গাশ মাছের পোনার পিঠের দিকটা কালচে রঙের এবং পেটের দিক উজ্জ্বল সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- এদের পৃষ্ঠদেশে ১টি এবং বক্ষ পাখনায় (Pectoral fin) ২টি ধারালো খাঁজ কাঁটা শক্ত কাঁটা বিদ্যমান ।
- পৃষ্ঠদেশের পিছনে নরম, মাংসল এবং তৈলাক্ত একটি অঙ্গ বিদ্যমান থাকে যা Adipose fin বলে পরিচিত;
- এটি Cat fish-জাতীয় মাছের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এদের দেহে কোনো আইশ থাকে না।
শনাক্তকরণ- ইহা পালাশের পোনা
জব নং- ৩ থাই কৈ মাছের পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
দেশি ছোট মাছগুলোর মধ্যে কৈ মাছ অন্যতম । এক সময়ে ধানক্ষেত, বিল ও হাওড়ে প্রচুর পরিমাণে দেশি কৈ মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে যা আর পাওয়া যায় না। তাই সম্প্রতি আমাদের দেশে দেশি কৈ মাছের অভাব পূরণের লক্ষ্যে থাইল্যান্ড থেকে দ্রুত বর্ধনশীল যে কৈ মাছ আনা হয়েছে তা থাই কৈ নামে পরিচিত ।
পোনা শনাক্তকরণ উপকরণ
১. কৈ মাছের পোনা
২. প্লাস্টিকের গামলা
৩. স্কুপনেট
8. ট্রে
৫. ফোরসেপ
৬. খাতা ও পেন্সিল
৭. বালতি
কাজের ধারা
- বাজার থেকে কৈ মাছ সাবধানে বালতিতে করে নিয়ে আসি । সংগৃহিত কৈ মাছকে ট্রেতে স্থাপন করে দৈহিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি।
- দেহের বর্ণ হালকা ফ্যাকাসে ।
- দেহ মাংসল এবং চওড়া।
- দেহের উপরিভাগে ছোট ছোট কালো দাগ বিদ্যমান ।
- পাখনা হালকা হলুদ রঙের।
- কানকোর পিছনে ও পুচ্ছ পাখনার গোড়ায় কালো দাগ বিদ্যমান ৷ মুখ প্রশস্ত এবং ইউ (U) আকৃতির ।
- কানকোর কাঁটা তুলনামূলক নরম ও খাঁচ কাটা এবং অঙ্কীয় দিকে আঁইশের সজ্জা ভি (V) আকৃতির।
শনাক্তকরণ :
এটি থাই কৈ মাছের পোনা।
জব নং- ৪ ভিয়েতনাম কৈ মাছের পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
আমাদের দেশে সাধারণত ৩ ধরনের কৈ মাছ পাওয়া যায়, যেমন-দেশি, থাই এবং ভিয়েতনাম কৈ। পুকুরে দেশি কৈ মাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় না। সে কারণে থাইল্যান্ড থেকে ২০০২ সালে থাই কৈ আমাদের দেশে আনা হয়। এ মাছটি দ্রুত বর্ধনশীল হলেও নানাবিধ কারণে এর দ্রুত বর্ধনশীল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। এছাড়া ফ্যাকাশে বর্ণের কারণে বাজারমূল্যও কম।
সমস্যা উত্তোরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে আমাদের দেশে ভিয়েতনাম কৈ আমদানি করা হয়। গবেষণালব্ধ ফল থেকে দেখা যায়, ভিয়েতনাম কৈ মাছ থাই কৈ অপেক্ষা প্রায় ৬০% বেশি উৎপাদনশীল। ভিয়েতনাম কৈ এর রং ও স্বাদ অনেকটাই দেশি কৈ -এর মতো এ কারণে খুব দ্রুত এ মাছটি চাষিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে চাষের ক্ষেত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভিয়েতনাম কৈ মাছের পোনা শনাক্তকরণের উপকরণ
১. ভিয়েতনামী কৈ মাছের পোনা
২. প্লাস্টিকের গামলা
৩. স্কুপনেট
8. ট্রে
৫. ফোরসেপ
৬. খাতা ও পেন্সিল
৭. বালতি
কাজের ধারা
- বাজার থেকে কৈ মাছ সাবধানে বালতিতে করে নিয়ে আসি।
- সংগৃহীত কৈ মাছকে ট্রেতে স্থাপন করে দৈহিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি ।
- দেহ মাংসল এবং চওড়া ধরনের।
- মাছের শরীরে কোনো ফোটা দাগ দেখা যায় না ।
- পাখনা হালকা হলুদ রঙের।
- কানকোর পিছনে ও পুচ্ছ পাখনার গোড়ায় কালো দাগ বিদ্যমান ।
শনাক্তকরণ :
এটি ভিয়েতনাম কৈ মাছের পোনা ।
জব নং- ৫ শিং মাছের পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
শিং মাছ একটি জনপ্রিয় জিওল মাছ। পরিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ ভরাট ও পানিশ্ব
হওয়ায় এ মাছ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া শিং মাছ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ ম সহজেই হাজা-মজা বা ভালো পুকুরে এককভাবে বা অন্যান্য চাষযোগ্য প্রজাতির সাথে মিশ্রচাষ করা যায়। নি শিং মাছের পোনার শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো-
শিং মাছের পোনা শনাক্তকরণের উপকরণ
১. শিং মাছের পোনা
২. প্লাস্টিকের গামলা
৩. স্কুপনেট
8. ট্রে
৫. ফোরসেপ
৬. খাতা ও পেন্সিল
৭. বালতি
পোনা শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য
- সরবরাহকৃত মাছের দেহ লম্বা, সামনের দিক নলাকার, পিছনের দিক চাপা ।
- দেহ আঁইশবিহীন,মাথা উপরে-নিচে চ্যাপ্টা ।
- দেহের রং ছোট অবস্থায় বাদামি লাল এবং বড় অবস্থায় ধূসর কালচে ।
- মুখে ৪ জোড়া গোঁফ বা বার্বেল বিদ্যমান।
- মাছের পিঠের দিকটা কালচে রঙের এবং পেটের দিক উজ্জ্বল সাদা রঙের
- পৃষ্ঠদেশে ১টি এবং বক্ষ পাখনায় ২টি ধারালো খাঁজ কাঁটা বিষাক্ত শক্ত কাঁটা বিদ্যমান ।
- পৃষ্ঠ পাখনা ছোট গোলাকৃতি, পায়ু পাখনা বেশ লম্বা এবং পুচ্ছ পাখনা গোলাকৃতির –
শনাক্তকরণ :
এটি শিং মাছের পোনা।
জব নং- ৬ মাগুর মাছের পোনা শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
মাগুর মাছ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় জিওল মাছ। পরিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ ভরাট ও পানিশূন্য হওয়ায় এ মাছ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া মাগুর মাছ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ মাছ সহজেই হাজা-মজা বা ভালো পুকুরে এককভাবে বা অন্যান্য চাষযোগ্য প্রজাতির সাথে মিশ্রচাষ করা যায়। নিচে মাগুর মাছের পোনার শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো-
মাগুর মাছের পোনা শনাক্তকরণের উপকরণ
১. মাগুর মাছের পোনা
২. প্লাস্টিকের গামলা
৩. স্কুপনেট
৪. ট্রে
৫. ফোরসেপ
৬. খাতা ও পেন্সিল
৭. বালতি
পোনা শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য
- সরবরাহকৃত মাছের দেহ লম্বা ।
- দেহ আঁইশবিহীন, মাথা বেশ চ্যাপ্টা, মুখ প্রশস্ত ।
- দেহের রং লালচে বাদামি বা ধূসর কালো।
- মুখে ৪ জোড়া গোঁফ বা বার্বেল বিদ্যমান।
- মাছের পিঠের দিকটা কালচে রঙের এবং পেটের দিক উজ্জ্বল সাদা রঙের
- বক্ষ পাখনায় ২টি ধারালো খাঁজ কাঁটা শক্ত কাঁটা বিদ্যমান ।
- পৃষ্ঠ পাখনা ও পায়ু পাখনা বেশ লম্বা এবং লেজের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
- পুচ্ছ পাখনা বা লেজের অংশ চাপা ও গোলাকৃতি ।
শনাক্তকরণ:
জব নং- নং- ৭ মাছের খাঁচা তৈরিকরণ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
আমাদের দেশে অসংখ্য নদ-নদী ও মুক্ত জলাশয় রয়েছে। যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মাছচাষ করা সম্ভব নয়। বর্ষী মৌসুমে বিশাল এলাকা বন্যাকবলিত হয় এবং ৪-৬ মাস পর্যন্ত পানি থাকে। এসব জলাশয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে খুব কম পরিমাণ মাছ উৎপন্ন হয়। একটু চেষ্টা করলে এ ধরনের জলাশয়ে বাঁচায় মাছ চাষ করা যায়। আবার অনেকের মাছ চাষের ইচ্ছা এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পুকুর বা জলাশয় না থাকার কারণে মাছচাষ করতে পারে না। অথচ বাড়ির পাশে যদি একটি প্রবহমান নদী থাকে তাহলে সে ইচ্ছা করলে খাঁচায় মাছচাষ করতে পারে।
বাচা তৈরির উপকরণ
১. নাইলন, টায়ার কর্ড বা পলিথিনের জাল (৩/৪ ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি);
২. খাদ্য আটকানোর বেড় তৈরির জাল:
৩. খাঁচার তলায় ট্রে হিসেবে ব্যবহার করার জাল;
8. নাইলনের রশি
৫. ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ ও ৩ সুতা রড;
৬. ফ্লোট হিসেবে ব্যবহৃত ব্যারেল বা ড্রাম;
৭. অ্যাংকর বা গেরাপি
কাজের ধারা
- প্রথমে ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ দ্বারা আয়তাকার (২০ ফুট x ১০ ফুট) ফ্রেম তৈরি করা হয়। মাঝে ১০ ফুট আরেকটি পাইপ বসিয়ে ঝালাই করে দেয়া হয়।
- অতঃপর দুই ফ্রেমের মাঝে ৩টি ড্রাম সারিবদ্ধ ভাবে স্থাপন করা হয়।
- এরপরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেরাপি অথবা নোত্তর যারা খাঁচাগুলোর ড্রামগুলো নির্দিষ্ট স্থানে আটকানো হয়।
- অতঃপর প্রতিটি ফ্রেমের সাথে পৃথক পৃথক ভাবে পূর্বে তৈরিকৃত জাল সেট করা হয় এবং রশির
- সাহায্যে ফ্রেমের সাথে বেঁধে দেয়া হয়।
- অতঃপর খাঁচা তৈরির পরে শ্যাওলা জমার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করে পরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা মজুদ করা হয় ।
- পরিশেষে ব্যবহারিক খাতায় অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি চিত্রসহ লিপিবদ্ধ করি।
আরও দেখুনঃ