আমাদের আজকের আলোচনার পাঙ্গাশ চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ – যা থাই পাঙ্গাশ ও কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ প্রযুক্তি এর অন্তর্ভুক্ত।
পাঙ্গাশ চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ
পাঙ্গাশ চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ
- সমান আকারের পোনা মজুদ করতে হবে। সম্ভব হলে ১০০ গ্রাম ওজনের পোনা মজুদ করতে হবে। কারণ পোনা যখন ঐ ওজন প্রাপ্ত হয় তখন সুষম সম্পূরক খাদ্য পেলে প্রত্যেক দিন কমপক্ষে ১০ গ্রাম করে দৈহিক বৃদ্ধি হয়। এর নিচের ওজনের পোনার দৈহিক বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম,
- প্রত্যেক সপ্তাহে ঝাঁকি জালের মাধ্যমে নমুনায়ন করে মাছের গড় ওজন তথা মোট জীবভর জেনে সেই অনুযায়ী সুষম সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
- পাঙ্গাশের জন্য প্রয়োগকৃত খাদ্যে কমপক্ষে ৩০% আমিষ থাকতে হবে।
- পাঙ্গাশ চাষে ভালো ফল লাভের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আমিষের পরিমাণ জানাই যথেষ্ট নয়। তৈরি খাদ্যে আমিষের গুণগতমানও ভাল হতে হবে।
- ভালো ফল লাভে পাঙ্গাশের পুকুরে কোনো ক্রমেই গলানো অবস্থায় খাদ্য প্রয়োগ করা যাবে না। বিভিন্ন উপকরণ মিলে বল আকারে খাদ্য তৈরি করে তা প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে হলে সুষম পিলেট জাতীয় খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- পাঙ্গাশের সাথে সিলভার কার্প এবং কাতলা মজুদ করলে সিলভার কার্পের তুলনায় বড় আকারের কাতলা মজুদ করতে হবে।
- নিতান্ত প্রয়োজন না হলে পাঙ্গাশের পুকুরে ঘন ঘন জাল টানা যাবে না। ঘন ঘন জাল টানলে পাঙ্গাশ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয় বা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম খাদ্য গ্রহণ করে ফলে মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
- সম্ভব হলে মাঝে মাঝে পুকুরে গভীর অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি যোগ করলে মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হয় । পানি পরিবর্তন করতে না পারলে এবং নিবিড়ভাবে পাঙ্গাশ চাষ করলে অনেক সময়
- অব্যবহৃত খাদ্যকণা পচে গিয়ে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে সিলভার কার্প মাছ মারা যায়।

আজকাল প্রায়ই একটি কথা শুনা যায় সেটা হলো “পাংগাস মাছের বিশ্রী গন্ধ কথাটা যে আদৌ সঠিক নয় তা নয়। প্রত্যেক মাছেরই একটি আলাদা গন্ধ রয়েছে যা তার জেনিটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়ে থাকে। তবে যে বিশ্রী গন্ধের কারণে ঐতিহ্যবাহী দামী মাছ বলে খ্যাত পাংগাস আজ তার বাজার হারিয়েছে তা তার নিজের কারণে নয়-চাষ পদ্ধতিই এর কারণ।
অর্থাৎ এর মাংশপেশীর দুর্গন্ধের কারণ হলো অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে পাংগাস চাষের সময় খাদ্য হিসেবে শামুক-ঝিনুক, হাঁস-মুরগীর নাড়ীভূড়ি, কসাই খানার বর্জ্য, ছোট ছোট মরা পচা মাছ প্রভৃতি প্রয়োগে পানি দূষণের ফলে দূষিত পানিতে বিশ্রী গন্ধযুক্ত প্ল্যাংকটন ( Mycrocystis, Nostoc) জন্ম নেয়। মাছ যখন দিনের পর দিন ঐ পরিবেশে বসবাস করে এবং ঐ ধরণের প্ল্যাংকটন ভক্ষন করে তখন প্ল্যাংকটনের বিশ্রী গন্ধ মাছের মাংসপেশীতে স্থানান্তরিত হয়- মাছ হয় বিশ্রী গন্ধ যুক্ত। কোন ক্রেতা যখন ঐ ধরণের পুকুরে পালিত পাংগাস ক্রয় করে একবার ঠকে থাকেন তখন তিনি আর কখনো পাংগাশ কিনতে চান না।
অথচ পুষ্ঠিগত দিক থেকে অন্যান্য মাছের চেয়ে পাংগাসের পুষ্টিমান ( প্রোটিন ১৪%, লিপিড ১১%, এবং ভিটামিন ও মিনারেলস্ ১.৫%) কোন অংশেই কম নয়। তাই ভাল পরিবেশে, ভাল খাদ্য প্রয়োগ করে পাংগাস চাষ করে পাংগাসের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
আরও দেখুনঃ