ধূমায়ন প্রক্রিয়া

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ধূমায়ন প্রক্রিয়া – যা মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।

ধূমায়ন প্রক্রিয়া

 

ধূমায়ন প্রক্রিয়া

 

ধূমায়িত মাছের গুণাগুণ নির্ভর করে কাঁচামালের জৈবিক গুণাগুণ এবং মাছের টাটকা অবস্থার ওপর। পরিপক্ক এবং চর্বিযুক্ত মাছ ধূমায়নের জন্য খুবই উপযোগী। স্ত্রী মাছে বেশি চর্বি থাকে বলে পুরুষ মাছের চেয়ে স্ত্রী মাছ ধূমায়নের জন্য বেশি উপযোগী। ধূমায়নের জন্য সাধারণত ছোট মাছ কাটতে হয় না। কিন্তু বড় মাছের ক্ষেত্রে মাছকে মেরুদণ্ড বরাবর লেজ পর্যন্ত কেটে কেটে ফিলেট তৈরি করা হয়। এতে ধূম্রকণাগুলো মাছের পেশিতে সহজে জমতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ও মোল্ডের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করার জন্য মাছকে ৬০-৭০% লবণ দ্রবণে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়। এতে মাছের পেশিতে ২-৩% লবণ প্রবেশ করে।

মাছকে ধূমায়নের জন্য সাধারণত কাঠের গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। কাঠের গুঁড়ায় প্রায় ১৫% পানি থাকে তাই কাঠের গুঁড়া মোল্ড দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য লবণায়িত মাছকে কাঠের গুঁড়া থেকে দূরে রাখতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে ধূমায়নের জন্য চিমনি ব্যবহার করা হয় । কাটা মাছগুলোকে কাঠের প্লেটে সংযুক্ত হুকে ঝুলিয়ে রাখা হয় । চিমনির মেঝেতে কাঠের গুঁড়া পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হয়, উৎপন্ন ধোঁয়া ফিলেটের গায়ে জমা হয় । চিমনির বহির্গমন পথ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে ধোঁয়া অনবরত জমা হয় এবং ঘুরতে থাকে।

এ অবস্থায় চিমনি ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মাছ ধূমায়িত হয় । সাধারণত এই কাজ সারা রাতব্যাপী করা হয় । উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মাছের দেহ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি বেরিয়ে আসে ফলে মাছের দেহে পানির পরিমাণ কমে যায়। চিমনি ঘর থেকে মাছ বের করার পর প্যাকিং করার পূর্বেই মাছ ঠাণ্ডা করে নেয়া হয়। গরম অবস্থায় প্যাকিং করলে প্যাকেটের ভিতর পানি জমে মোল্ড জন্মাতে পারে । ধূমায়িত মাছ সাধারণত কাঠের বাক্সে প্যাকিং করা হয়। অনেক সময় ধূমায়িত মাছকে রেফ্রিজারেটর বা ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়। ধূমায়িত মাছের সংরক্ষণকাল ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

হিমায়নের মাধ্যমে মাছ সংরক্ষণ :

হিমায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খুব নিম্ন তাপমাত্রা ব্যবহার করে মাছের দেহের সব পানিকে বরফে পরিণত করে মাছ সংরক্ষণ করা হয়। হিমায়ন অণুজীবের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এবং মাছের দেহের ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে মাছের গুণগতমান সংরক্ষিত হয়। মাছের দেহ কোষের পানিতে প্রচুর লবণ থাকে; শূন্য ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় তা বরফে পরিণত হয় না এবং -১ ডিগ্রী সে. থেকে ৪০০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয় ।

মাছের দেহের প্রায় ৯০% পানি ‘মুক্ত’ (free) এবং ১০% আবদ্ধ (bound) অবস্থায় থাকে। মুক্ত পানি সহজে বরফে পরিণত হলেও আবদ্ধ পানিকে বরফে পরিণত করতে অত্যধিক কম তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। -৫°সে. তাপমাত্রায় যদিও বিশুদ্ধ পানি সম্পূর্ণরূপে বরফে পরিণত হয় তবে এই তাপমাত্রায় মাছের দেহের ২০% পানি তখনও বরফে পরিণত হয় না। তাই মাছকে সম্পূর্ণভাবে হিমায়িত করতে – ৪০°সে. তাপমাত্রার প্রয়োজন ।

হিমায়ন :

হিমায়ন একটি সংরক্ষণ পদ্ধতি যার মাধ্যমে মাছের দেহের তাপ অপসারণের ফলে দেহস্থিত পানি সম্পূর্ণভাবে বরফে পরিণত হয়। সাধারণত – ৪০°সে. তাপমাত্রায় মাছকে হিমায়িত করা হয়। হিমায়িতকরণে প্রয়োজনীয় সময়ের ওপর ভিত্তি করে হিমায়ন দু’ধরনের হতে পারে। ধীর হিমায়ন ও দ্রুত হিমায়ন। মাছের দেহের তাপমাত্রা ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রায় (০°সে. থেকে -৫°সে.) পৌঁছতে যদি ৩০ মিনিট বা তার চেয়ে কম সময় লাগে তাহলে তাকে দ্রুত হিমায়ন এবং যদি তার চেয়ে বেশি সময় লাগে তাকে ধীর হিমায়ন বলে । দ্রুত হিমায়ন পদ্ধতিতে সংরক্ষিত মাছের গুণগতমান ধীর গতিতে হিমায়নের চেয়ে ভালো থাকে।

দ্রুত হিমায়ন পদ্ধতির সুবিধাসমূহ

১. এই পদ্ধতিতে মাছের দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বরফ ছোট ছোট কণায় পরিণত হয় বলে পেশিকলায় যান্ত্রিক ক্ষতি হয় না বা হলেও কম হয়।

২.যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় কম সময়ে দেহের অভ্যন্তরের পানি বরফে পরিণত হয় সেহেতু কম পরিমাণে পুষ্টি পানিতে দ্রবীভূত হয় ।

৩. . অণুজীবের বৃদ্ধি দ্রুত প্রতিরোধ হয়।

৪. এনজাইমের কার্যকারিতা দ্রুত বাধাগ্রস্ত হয়।

 

ধূমায়ন প্রক্রিয়া

 

ধীর হিমায়নের অসুবিধা

১. এ ক্ষেত্রে হিমায়ন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হয় বলে দেহের ভিতরে বরফের কণাগুলো বড় বড় স্ফটিক (Crystal) আকার ধারণ করে ।

২. স্ফটিক বড় হওয়ার কারণে মাছের দেহের অভ্যন্তরে কোষ প্রাচীর ফেটে যায় ।

৩. যখন মাছকে থয়িং (Thawing) করা হয় তখন বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান অপচয় হয়।

৪. ধীর হিমায়নের সময় মাছের এনজাইম এবং ব্যাকটেরিয়ার কার্যকলাপ কিছু সময় ধরে চলতে থাকে। ফলে সম্পূর্ণভাবে হিমায়নের পূর্বেই মাছের গুনগতমান কিছুটা হ্রাস পায় ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment