চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব – যা চিংড়ি পরিচিতি, জীববিদ্যা ও চাষ ব্যবস্থাপনা এর অন্তর্ভুক্ত।

চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব

 

চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব

 

আমাদের জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন একান্তভাবেই কৃষিনির্ভর। বিশেষ করে মৎস্য ও চিংড়ি চাষ জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাম্প্রতিককালে ব্যাপক অবদান রাখছে। আমাদের রয়েছে ৪৮০ কি.মি. বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল, যার প্রায় সবটায় চিংড়ি এবং উপকূলীয় মাছ চাষের জন্য উপযোগী। আমাদের দেশে প্রধানত: দুই প্রজাতির চিংড়ি চাষ হয়, যথা- বাগদা ও গলদা চিংড়ি । দেশে উৎপন্ন বাগদা চিংড়ির প্রায় সবটাই বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে।

১৯৯৫-৯৬ সালে যেখানে এর পরিমাণ ছিল ১,১০৬.৩৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ২০১৩-১৪ সালে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছে ৪৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪১১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ রপ্তানি আয়ে চিংড়ির অবদান প্রায় ৯০%।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের ফলে একদিকে যেমন গলদা ও বাগদা চিংড়ির খামার ও হ্যাচারি স্থাপন, উৎপাদিত চিংড়ি পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, চিংড়ি চাষ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অপর দিকে চিংড়ি চাষ সংক্রান্ত নানাবিধ কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এ সুযোগ আরো সম্প্রসারিত করা দরকার। আমাদের দেশে প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি চিংড়ি চাষ উপযোগী এলাকা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১,১৫০০০ হেক্টরে বর্তমানে চিংড়ি চাষ হচ্ছে।

যেখানে বর্তমানে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন মাত্র ৬০০ কেজি। এ উৎপাদন হার বিশ্বের প্রধান প্রধান চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশের উৎপাদন হারের তুলনায় অনেক কম। তবে চাষ ব্যবস্থাপনা ও ঘের কাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এ উৎপাদন হার সহজেই দ্বিগুণ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বিগত কয়েক দশক যাবৎ ঘেরে চিংড়ি চাষ উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

প্রকৃত পক্ষে, মৎস্য বা চিংড়ি সম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বর্তমানে মৎস্য খাত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হিসেবে স্বীকৃত। গার্মেন্টস খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে থাকলেও শ্রম ব্যতীত রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯৮% অর্থ বিদেশ হতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে পূর্বেই ব্যয় হয়। পক্ষান্তরে মৎস্য খাত হতে রপ্তানি আয়ের মাত্র ৫% অর্থ বিভিন্ন মালামাল আমদানীতে ব্যয় হয়।

 

চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব

 

এ দৃষ্টিকোণ থেকে রপ্তানি বাণিজ্যে মৎস্যখাতের অবদান গার্মেন্টস খাতের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । তাই সীমিত সম্পদের এ দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশসম্মত চিংড়ি চাষের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা গেলে এ খাত আমাদের জাতীয় উন্নয়নে আগামীতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment