আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় খাদ্য শিকল – যা মাছচাষে প্রতিবেশের বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব এর অন্তর্ভুক্ত।
খাদ্য শিকল
পুকুরে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এসব উদ্ভিদ, উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন, শ্যাওলা প্রভৃতির ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ অংশ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে খাদ্য তৈরি করে। এজন্য এদেরকে প্রাথমিক উৎপাদক বলা হয়। পুকুরে উৎপাদিত এসব উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনকে প্রাণি প্ল্যাংকটন ও অন্যান্য প্রাণী খায়। এসব প্রাণী ও প্রাণী প্ল্যাংকটনকে বলা হয় প্রাথমিক ভোক্তা। প্রাণী প্ল্যাংকটন ও প্রাথমিক ভোক্তা দলের অন্যান্য প্রাণীকে খেয়ে বেঁচে থাকে আরেক ধরনের মাছ বা প্রাণী । এদেরকে ২য় শ্রেণির ভোক্তা বলা হয় ।
এভাবে ২য় শ্রেণির ভোক্তাকে আবার খেয়ে ফেলে তৃতীয় শ্রেণির ভোক্তা। এ প্রক্রিয়ায় শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে স্থানান্তরিত হয়। প্রাথমিক উৎপাদক থেকে শুরু করে ভক্ষণ এবং পুনঃভক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদক থেকে সে খাদ্য শক্তি উদ্ভিদ ভক্ষণকারী প্রাণীতে স্থানান্তরিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে ভক্ষণ ও পুনঃভক্ষণের মাধ্যমে মাংশাসী প্রাণীতে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে সর্বশেষ প্রাণী- টির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্থানান্তর প্রক্রিয়া থেমে যায়। খাদ্য শক্তির উৎস উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্য শিকল।
অন্যভাবে বলা যায় খাদ্য শক্তির এ প্রবাহের সাথে জড়িত সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্যের জন্য একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতার এ প্রক্রিয়াকে খাদ্য শিকল বলে। এখানে উল্লেখ্য যে একটি খাদ্য স্তর থেকে অন্য খাদ্য স্তরে শক্তি স্থানান্তরের সময় মোট শক্তির প্রায় ৯০% শক্তি অপচয় হয় । মাত্র ১০% শক্তি কাজে লাগে। তাই খাদ্য স্তর যত ছোট হবে তত বেশি প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যাবে। নিচে একটি স্তর থেকে কীভাবে অন্য স্তরে শক্তি স্থানান্তরিত হয় তা দেখানো হলো ।
খাদ্য শিকলের প্রকারভেদ
খাদ্য শিকল বা খাদ্য চক্র তিন ধরনের হয়। যেমন –
১. প্রোডিওসার খাদ্য-শিকল;
২. প্যারাসাইটিক খাদ্য-শিকল;
৩. স্যাফ্রোফাইটিক খাদ্য-শিকল।
১. প্রোডিওসার খাদ্য-শিকল
এর আরম্ভ উদ্ভিদ থেকে এবং স্তর বাড়ার সাথে সাথে জীবের আকার বড় হতে থাকে। যেমন- শ্যাওলা → পুঁটি → বোয়াল → মানুষ । অর্থাৎ খাদ্য ক্ষুদ্র থাকে খাদক বড় হয় ।
২. প্যারাসাইটিক খাদ্য-শিকল
এর আরম্ভ উদ্ভিদ বা প্রাণী যে কোনো জীব থেকে হতে পারে। এখানে চক্রের আরম্ভ বৃহত্তর জীব থেকে এবং শেষ হয় ক্ষুদ্রতর জীবে। যেমন-
মানুষ → ক্রিমি → উকুন ইত্যাদি ।
৩. স্যাফ্রোফাইটিক খাদ্য-শিকল
এর আরম্ভ মৃত জীবে এবং শেষ হয় অণুজীবে। যেমন- মৃত প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক ।
আরও দেখুন: