আধুনিক পদ্ধতি সিঁদল শুঁটকিকরণ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আধুনিক পদ্ধতি সিঁদল শুঁটকিকরণ – যা মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।

আধুনিক পদ্ধতি সিঁদল শুঁটকিকরণ

 

আধুনিক পদ্ধতি সিঁদল শুঁটকিকরণ

 

আধুনিক পদ্ধতিতে সিঁদল শুঁটকিকরণের ক্ষেত্রে মাছ সংগ্রহের পর প্রথমে মাছগুলোকে একবার পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে মাত্র তিন মিনিটের জন্য ১০ শতাংশ লবণের পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফলে মাছের আঁইশ বা দেহের বিভিন্ন অংশে যেসব ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষতিকর পরজীবীসমূহ থাকে তা মারা যাবে । পরবর্তী ধাপে মাছ প্রক্রিয়াজাতকণের পর মাছগুলোকে একাধিকবার টিউবওয়েলের বা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে দেয়া হয়। এতে কাটা মাছের দেহ থেকে রক্ত বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ ভালোভাবে ধুয়ে যাবে।

তৃতীয় ধাপে প্রক্রিয়াজাতকৃত মাছ সরাসারি খোলা আকাশের নিচে চাটাই বা বালির উপর শুকানোর পরিবর্তে বিশেষ সান ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকানো হয় । ফলে পোকা মাকড় বা মাছির উপদ্রব হতে পারে না । পরবর্তীতে শুকানো মাছগুলো মাটির কলসি বা মটকির মধ্যে স্তরে স্তরে সাজিয়ে কলসটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় তিন মাস মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় । লক্ষ্য রাখতে হবে কলসের মুখ দিয়ে যেন কোনো ক্রমেই 8.
বায়ু ঢুকতে না পারে । মাটির কলসে মাছ ভরার পূর্বে নিম্ন লিখিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করতে হবে।

ক. মাটির কলসী বা মটকি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ৩-৪ দিন রোদে শুকাতে হবে।

খ. কলসি রোদে শুকানোর পর ৪-৫ দিন যাবৎ ভালোভাবে মাছের তেল মাখিয়ে রোদে দিতে হবে । যখন দেখা যাবে কলসি আর তেল শোষণ করছে না তখন বুঝতে হবে কলসিতে মাছ ভরার উপযুক্ত সময় হয়েছে। সাধারণত একটি নতুন কলসি ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পরিমাণ এবং পুরনো কলসি ৫০০ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম তেল শোষণ করতে পারে ।

গ. মাছ কলসিতে ভরার পূর্বে শুকানো মাছগুলোকে ৩-৫ রাত কুয়াশায় ভিজাতে হবে। এতে শুকানো মাছ কুয়াশা থেকে প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করতে পারবে এবং মাছের রং চকচকে সুন্দর ও তৈলাক্ত হবে । কুয়াশায় ভিজা মাছকে বস্তায় ভরে ৫/৭ দিন ঘরের ভিতরে রাখতে হবে।

ঘ. জাগকৃত মাছ কলসিতে ভরার পূর্বেই কলসিটি মাটির মধ্যে এমনভাবে পুঁততে হবে যাতে কলসি ও মাটির মধ্যে কোনো রকম ফাঁক না থাকে । অতঃপর জাগকৃত মাছ অল্প অল্প করে কলসির মধ্যে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কলসির মধ্যে কোনো ফাঁক না থাকে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পা মুড়িয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিতে হবে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

এমনিভাবে কলসির গলা পর্যন্ত মাছ ভরতে হবে এবং পরে মাছের গুঁড়া দিয়ে কলসির মুখ বন্ধ করে উপরে পলিথিনের পেপার বা পলিথিনের পেপারের উপর মাটি দিয়ে মুখ বদ্ধ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কলসির ভিতরে কোনো রকম বাতাস ঢুকতে না পারে । এভাবে মাছভর্তি কলসি মাটির মধ্যে ৯০ দিন রাখার পর ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় চেপা বা সিঁদল শুঁটকিতে পরিণত হবে এবং তা বাজাজাতকরণের উপযুক্ত হবে।

শুঁটকি মাছের পুষ্টিমান :

শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত মাছের গুণাগুণের উপর শুঁটকি মাছের পুষ্টিমান নির্ভর করে। শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত মাছ যদি পচা বা নষ্ট হয় তাহলে শুঁটকির গুণগতমান খারাপ হবে। সম ওজনের কাঁচা মাছের চেয়ে শুঁটকির পুষ্টিমান অনেক বেশি। কারণ মাছ শুকানোর ফলে মাছ থেকে পানি বের হয়ে যায় । কিন্তু পুষ্টি উপাদান বের হয় না বলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত শুঁটকি মাছে ৬০-৮০% প্রোটিন, ৮-২০% তৈল এবং ১০-২০% পানি বিদ্যমান থাকে ।

 

আধুনিক পদ্ধতি সিঁদল শুঁটকিকরণ

 

শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ বা গুদামজাতকরণ :

মাছ শুঁটকি করার পর তার গুণাগুণ কেমন থাকবে তা নির্ভর করে সঠিকভাবে শুঁটকি গুদামজাতকরণের ওপর। শুঁটকি মাছ গুদামজাতকরণের সময় ছিদ্রহীন পলিথিন ব্যাগে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। তাছাড়া টিনের পাত্রেও শুঁটকি মাছ মজুদ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে টিন যেন বায়ু নিরোধক হয়। শুঁটকি মাছ চটের বস্তায়ও মজুদ করা যায়। শুঁটকির বস্তাগুলোও পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে। এভাবে সঠিক পদ্ধতিতে গুদামজাত করে অনেক দিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।

যেসব শুঁটকি মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হয় সেগুলোকে প্রথমে ছোট পলিথিনে মুড়ে, পরে ছোট পলিথিনগুলোকে বড় পলিথিনের ভিতর রেখে পলিথিনের মুখ বন্ধ করে প্যাকেটটি করোগেটেড কাগজের তৈরি মাস্টার কার্টনের মধ্যে রাখা হয় পরে বিদেশে রপ্তানি করা হয় ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment